চারপাশ রাঙিয়ে তুলুন আপনার মনের আপন রঙে

জুয়েল ইসলাম
Published : 9 Feb 2016, 08:46 AM
Updated : 9 Feb 2016, 08:46 AM

শীতকালের এই শেষ সময়ে অনেকেই বর্ষাকালের আগেই তার বাড়ি ও ঘর রঙ করানোর পরিকল্পনা করছেন। তা বিভিন্ন কারনেই হতে পারে, যেমন কোন উৎসব, কোন বিশেষ উপলক্ষ, থাকার জায়গা পরিবর্তন, দীর্ঘদিন একই রঙ ব্যবহার, একঘেয়েমি দূর করার জন্য ইত্যাদি। তবে আপানার রঙের পরিকল্পনার কারন যাই হোক না কেন, আপনার চারপাশের পরিবেশ পরিবর্তন ও স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে তুলতে বিভিন্ন রঙের কোন বিকল্প নেই। তবে কোন ঘর বা বাড়ি রঙ করা যেমনি কিছুটা ঝামেলার কাজ তেমনি একবার রঙ করার পর তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করা যায়। কিন্তু এই কাজ শুরু করার পূর্বেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকা জরুরী। আজ আমি আপনাদেরকে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানানোর চেষ্টা করব।

চলুন প্রথমে জেনে নেই সাধারনভাবে রঙ করার জন্য প্রাথমিকভাবে আপনার কি কি উপকরণ প্রয়োজনঃ

-সিরিশ কাগজ (দেয়াল পরিষ্কার করার জন্য)

– রোলার

-২ ধরনের ব্রাশ

-বিশেষ ধরনের চুন, রঙ এর সাথে মেশানোর জন্য।

-চকপাউডার (অসমান জায়গায় রঙ করার পূর্বে মসৃণ করার জন্য)

একজন পেইন্টার (যদি আপনি নিজে না পারেন, আর পারলে তা খুবই ভাল কথা)

চলুন এবার জেনে নেই আপনার কোন ঘরের রঙ কেমন হওয়া উচিতঃ

  • বসার ঘরটা সবাই দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে চায়। সে ক্ষেত্রে ঘরের একটা দেয়ালকে একটু অন্যভাবে সাজানো যায়। ঘরের তিনটি দেয়ালে যেকোনো উজ্জ্বল রং দিয়ে বাকি দেয়ালে অপেক্ষাকৃত গাঢ় রং ব্যবহার করুন। এই দেয়ালে কোনো ফার্নিচার না রাখাই ভালো। বরং দেয়ালটা সাজাতে পারেন পেইন্টিং, নকশিকাঁথা, টেরাকোটা কিংবা ওয়াল হ্যাংগিং দিয়ে। ডেকোরেটিভ বা বিশেষভাবে সাজানোর দেয়ালটির জন্য সোফার সামনের দেয়ালটি বেছে নেওয়া ভালো। আবার বসার ঘরের সোফাও একটু পরিকল্পিতভাবে সেট করা উচিত। সাধারণত বসার ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার এক বা একাধিক দরজা থাকে। সোফাগুলো এমনভাবে সেট করা উচিত, যেন ভেতরের দরজাগুলো সোফার পেছনে থাকে।
  • এবং রং করার সময় ফার্নিচার ও আলোর বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। বেতের ফার্নিচার বা হালকা ডিজাইনের উজ্জ্বল বার্নিশের ফার্নিচার হলে ঘরে একটু গাঢ় রং ব্যবহার করা যায়। আবার ঘর ছোট হলে এবং ভারী কাজ করা লেকার পলিশের ফার্নিচার থাকলে ঘরে গাঢ় রং একেবারেই বেমানান। সে ক্ষেত্রে হালকা ও উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা ভালো। ঘর বড় হলে এবং যথেষ্ট আলো থাকলে রুচি অনুযায়ী হালকা বা গাঢ় যেকোনো রংই ব্যবহার করা যায়। ঘর ছোট হলে এবং আলো কম থাকলে এমন রং ব্যবহার করা উচিত, যাতে আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে ঘরকে অনেকটা উজ্জ্বল দেখায়।
  • খাবার ঘরে সব সময় উজ্জ্বল রং ভালো মানায়। এই ঘরে পর্দা, টেবিলম্যাট, রানার এবং ফার্নিচারের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উজ্জ্বল যেকোনো রং বেছে নিন। খাবার ঘরের পাশেই রান্নাঘর থাকলে রান্নাঘরের পাশের দেয়ালে গাঢ় রং ব্যবহার করা যায়।
  • বসার ঘর বা খাবার ঘরে অনেকেই এখন ইলিউশন ব্যবহার করছেন। তবে ইলিউশন ব্যবহারে কিছুটা সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা সব ঘরে সব ধরনের ইলিউশন মানায় না। দেয়ালে ভুল ইলিউশনের ব্যবহার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • শোবার ঘরে ব্যক্তির রুচি অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় যেকোনো রং। যেহেতু এ ঘরটি বিশ্রামের জন্য, তাই এ ঘরে খুব বেশি আলোর দরকার হয় না। শোবার ঘর ছোট কিংবা বড় যা-ই হোক একটু গাঢ় শেডের রং বেছে নিন। গাঢ় রং আলো শুষে নেয়। ফলে বাড়তি আলো বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না।
  • বাচ্চাদের ঘর হওয়া উচিত বেশ কালারফুল এবং অনেক রঙের সমন্বয়ে। এ ঘরের প্রধান রং লাল, নীল, হলুদ বা উজ্জল সবুজ। এসব রঙের যেকোনো একটি অথবা একাধিক শেড বেছে নিন।

আর আপনার মনের মত রঙ ফুটিয়ে তুলার জন্য এবং সপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরের জন্য আপনার দরকার একজন ভাল পেইন্টার। যিনি আপনার রুচি ও চাহিদা সহজে অনুধাবন করবে এবং বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে আপনার কাজটি ভালভাবে এবং যত্ন সহকারে সম্পন্ন করবে।

বাহিরের দেশে বিভিন্ন আবেদনপত্র বা হিস্ট্রি থেকে অনলাইনে বেছে নেওয়ার উপায় থাকলেও আমাদের দেশে সাধারনত সেরকম কোন ব্যবস্থা এখনও চালু হয় নি। কিন্তু তারপরও আপনার আশপাশ থেকেই কিভাবে একনজরে ভাল পেইন্টার খুঁজে পাবেন তা জেনে নেইঃ

১. সাধারনভাবে আপনার চারপাশের পরিচিত লোকদের কাছ থেকে একটি অথবা দুটি রেফারেন্স পাওয়া যায়, যেখানে পূর্বে ভাল কাজ করেছে, এমন পেইন্টারকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করুন।

২. কথা বলার সময় আপনার পেইন্টারকে জিজ্ঞাসা করুন, কতদিন ধরে তিনি এই কাজের সাথে জড়িত।

৩. আপনার কাজটি নির্দিষ্ট করে কতদিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবে তা জিজ্ঞাসা করুন।

৪. অন্য পেইন্টার থেকে তার কাজের আর্থিক মুল্ল্যের চাহিদা কি পরিমান তা বিবেচনা করুন।

৫. আপনার পছন্দের রঙের সাথে আরও কিভাবে সহায়তা করলে কাজটি আরও সুন্দর হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করুন এবং তার মতামত গ্রহন করুন। এরপর আপনার পছন্দ হলে তা গ্রহন করতে পারেন।

উপরোক্ত সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনার মাধ্যমেই আপনি আপনার রঙের সপ্নকে সুন্দরভাবে বাস্তবে পরিণত করতে পারেন। আর আপনাদের আরও একটু সুবিধার জন্য আমি নিম্নে কিছু লিঙ্ক দিলাম যা থেকে আপনারা সহজে রঙের উপকরনসামগ্রী ও যারা রঙ করে তাদের খুঁজে পেতে পারেনঃ

আশা করি আপনারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। আপনাদের সবার সুস্থতা কামনা ও সুন্দর রঙের প্রত্যাশায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।