৯৭তম বার্ষিকী পেরিয়ে ৯৮তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি।সংগ্রামী নেতার সংগ্রামমুখর জীবনে তিনি নিজের জন্মদিন পালনের কথা কখনো ভাবতে পারেননি।জন্মদিনের উৎসবের কথা শুনে অবাক হয়ে বলেছেন-
এই দুঃখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যুদিনই বা কি?আপনারা বাংলাদেশের অবস্হা জানেন। এদেশের জনগণের কাছে জন্মের আজ নেই কোনো মহিমা।যখনি কারো ইচ্ছা হয় আমাদের প্রাণ দিতে হয়।বাংলাদেশের জনগণের জীবনের কোনো নিরাপত্তাই তারা রাখেনি। জনগণ আজ মৃতপ্রায়। আমার আবার জন্মদিন কি? আমার জীবন নিবেদিত আমার জনগণের জন্যে। আমি যে তাদেরই লোক।
জনগণের কথা লিখতে গিয়ে জানাচ্ছেন-কিছুই তো করতে পারলাম না।শুধু এইটুকু বলতে পারি,নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করার চেষ্টা করেছি।
জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি শিশুদের প্রতি ছিলেন পরম যত্নবান।এই নিবন্ধে একটি উদাহরণ দেয়াই হবে যথেষ্ট-যুদ্ধশিশুদের জীবনরক্ষার জন্য তিনি কি না করেননি!অবশেষে এও বললেন-ওদের পিতার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বইতিহাস এর স্বাক্ষী।
বাংলাদেশে ১৬ কোটি জনসংখ্যার হয়তো ৬ কোটিই শিশু।এদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শেষ হওয়া তো দূরের কথা,কতটুকু শুরু করতে পেরেছি আমরা? অবশ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কখনো শেষ হয় কিনা আমার জানা নেই।শিশুহত্যা,অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ,সবকিছুই আমাদেরকে আতঙ্কিত করে।ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম যা অমানবিক তা রাষ্ট্রের জনগণকে উদ্বিগ্ন করে কিনা? শিশুর অপুষ্টি বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে,বস্তিতে এখনো প্রধান সমস্যার অন্যতম।অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের শিশু যাদেরকে আমরা তাদের অধিকার দেয়ার বদলে (দলিত হওয়ার কারণে) দলিত মথিত করি। এই দলিত শিশুদের খাদ্যনিরাপত্তা শিক্ষা,স্বাস্হ্য,বিনোদন অপরিহার্য হলেও রাষ্ট্র তাঁর ভূমিকায় কতখানি অগ্রসর হতে পেরেছে?সংখ্যায় ক্ষুদ্র প্রায় ৪৫ জাতিগোষ্ঠী শিশুদের অধিকার রক্ষার কাজ বিস্তর বাকি।দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাহিনী বড্ড করুণ। বাল্যবিয়ে বাংলাদেশকে যেন গ্রাস করে না ফেলে।বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন সংসদে পাস হয়েছে,বিধি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে কিনা জানি না।কেমন বিধি জারি হয় জানার অপেক্ষায় জাতি।
মোট পাঁচটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণীত হয়েছে-
১.শিশুর বেঁচে থাকা ও বিকাশ
২.বৈষম্যহীনতা
৩.শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ
৪.শিশুর অংশগ্রহণ
৫.জবাবদিহিতা
শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ১৯-এ বলা হয়েছে-রাষ্ট্র শিশুদের যে কোনো প্রকার অত্যাচার-অবিচারের কবল থেকে রক্ষা করার দায়িত্ত্ব পালন করবে। অত্যাচারের শিকার শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
শিশুরা ভোটার হতে পারে না তাই ভোটের রাজনীতিতে তাদের হিসেবে না ধরলেও সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে তাঁরা মূল্যমানে গুরুত্ত্বপূর্ণ।রাজনীতির ভাষা শিশুদের বোঝার কথা না কিন্তু রাজনীতির সুফল-কুফল দু'টোই তাঁরা ভোগ করে।সারা বিশ্বে যত যুদ্ধ, হানাহানি চলছে,তাতে বেশিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্হ এবং হুমকির মুখে শিশুরা।শিশুরা জাতির হৃৎপিণ্ড,প্রাণ। হৃৎপিণ্ড রক্ত সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রাণের মৃত্যু ঘটে। প্রাণের মৃত্যু ঘটতে থাকলে পৃথিবী অচল!