সন্নিকটে সুখবার্তা

সজীব জমশের আলি
Published : 14 August 2017, 05:19 PM
Updated : 14 August 2017, 05:19 PM

আজ এক নতুন বিষয়ের মুখোমুখি হলাম। আমাদের কলেজের একজন প্রাক্তন শিক্ষক আমাদের কাছে এসে তার চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা চাইলেন। আমার কাছে তাকে দেয়ার মত তার যোগ্য কিছুই ছিলনা। স্যার ক্লাসে এসে তার আসার উদ্দেশ্য জানিয়ে তারপর আমাদের পড়ালেখার খোঁজখবর নিলেন। আমাদের পড়াশোনার সাথে সম্পর্কিত অনেক কথাই বললেন। সবটাই ঠিক ছিল কিন্তু আমার কাছে মনে হল এই ব্যাপারটা কতটা মানবিক, একজন শিক্ষকের তার স্টুডেন্টদের কাছে এসে আর্থিক সাহায্য চাওয়াটা কতটা তার সম্মানের পক্ষে যায়?

অসুস্থতা স্বাভাবিক। সেই অসুখের চিকিৎসা করার সামর্থ না থাকাটাও স্বাভাবিক। মানুষের অসুখ কখনোই তার আর্থিক সামর্থের অনুপাতে হয় না। যদিও আমরা কখনো বলে থাকি ;বড়লোক মানুষের বড় অসুখ হয়; গরিবের হয় না' এটা কথার কথা মাত্র। একটা বিষয় ঘটে বিত্তবানদের অসুখ আলোচিত হয়, আমরা জানতে পারি কিন্তু গরিব মানুষ অত হাঙ্গামা না করে মরে যায়। কোন কোন ব্যক্তি বিশেষের চিকিৎসা রাষ্টীয় অনুদানে হয়, ব্যাপারটা তাদের সম্মান ও ব্যক্তিত্বের সাথে সাংঘর্ষিক না। হত, যদি একান্তই চিকিৎসা না করতে পেরে তাকে পথের মানুষের কাছু সাহায্য চাইতে হতো।

একজন মানুষ কোন একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘ সময় যুক্ত ছিল। সেই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সার্বিক ভাবে সম্পৃক্ত থেকে সেই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। আজ লোকটার দুঃসময়ে সেই প্রতিষ্ঠান কিভাবে নিরব থাকতে পারে? কিভাবে তার দায় সবটা অস্বীকার করতে পারে? আমি বলছি না প্রতিষ্ঠান তার পুরো চিকিৎসার ভার বহন করুক। সেটা সম্ভব নয়; আর কদাপি উচিতও নয়। একটা প্রশ্ন থেকে যায় তবে কতটুকু প্রতিষ্ঠানের দায়?

আজ আমি যদি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ি তাতে কারোই কিছু আসবে যাবে না। প্রশাসন বা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তখনি কারো পাশে দাঁড়ায়, যখন তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর পিছে নিজস্ব ফায়দা থাকে। অর্থাৎ আমি যদি বিখ্যাত কেউ হতাম, আমাকে তার হেল্প করার ব্যাপারটা হাইলাইটেড হত। সারা দেশের মানুষ জানতে পারতো তার সহমর্মিতার কথা। এ যুগে দরদী হওয়ার চেয়ে দরদ দেখানোটা অনেক বড়। আমার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ালে সেখানে না মিডিয়া আসবে আর না সুখ্যাতি। আমাদের অান্তরিক শুভকামনার মত মূল্যহীন জিনিশ কোনদিনই তার কাছে কাম্য নয়। আমাদের সমস্যাগুলো ছোট, কিন্তু সেগুলো বড় বড় জায়গায়।
পৃথিবীতে সব মানুষের ভাল থাকার পর্যাপ্ত উপাদান আছে। কিন্তু আমরা কী ভাল আছি? মোটেই না, আমরা ভাল নেই। পারছি না ভাল থাকতে। যারা সামর্থবান তারা অন্যায় অধিকারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ নিজের করায়ত্ব করে রাখছে; যে সবের অপব্যবহার করছে গুটিকয় মানুষ। সেই অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ক্ষতিই মুলত করে। আমি কোন প্রথার বিরোধী নই। সে প্রথার ভেতর ঢুকে পড়া অশুদ্ধ বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি যেগুলো ঝেড়ে ফেলে নিজেদেরকে শুদ্ধমানুষ ও প্রকুত সুখি করা সম্ভব।

প্রতিষ্ঠান তার সব দায়িত্ব নিতে পারে না কিন্তু তার হয়ে কিছু করতে তো অবশ্যই পারে। যেই টাকাটা স্যার ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে তুলে আনলেন, সেই টাকাটাই ম্যানেজমেন্ট চাইলে ছাত্রদের থেকে কালেক্ট করে স্যারের হাতে তুলে দিতে পারতো। এতে একজন শিক্ষকের নিজস্ব আত্মসম্মান প্রশ্নবিদ্ধ হত না। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত অনেক বড় বড় মানুষ আছে। সভাপতি ও উপদেষ্টা সাহেব (যাদের ব্যাক্তিগত প্রদেয় আমাদের সম্মিলিত কালেকশনের চেয়ে অনেক বড়) তারা চাইলে স্যারকে হেল্প করতে পারেন। এখানে জাস্ট ইচ্ছাটা দরকারি।

সুন্দর জীবনের পথ সত্যিই খুব সুগম। এবং এটা দুষ্প্রাপ্যও নয়। সেন্দর্য আমাদের জীবনের চেনা অলি গলিতেই বিধ্বস্ত পরে আছে, শুধু আমরা তাকিয়ে দেখছি না। না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই। আমাদের সচেতনতা ও সামান্য সুবুদ্ধি আমাদের জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারে।