বিএনপি’র মিথ্যাচার

কবীর চৌধুরী তন্ময়
Published : 2 June 2016, 07:35 PM
Updated : 2 June 2016, 07:35 PM

সম্প্রতি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি সাফাদির বৈঠক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ দেশের গণমাধ্যমেও তোলপাড় দেখা গেছে।

আর এই আলোচনা-সমালোচনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে খোদ মেন্দি এন সাফাদির দেশ ইসরায়েলভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'জেরুজালেম অনলাইন ডট কম' এ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে প্রকাশ হওয়া সংবাদ থেকে জানা গেছে, 'ইসরায়েল সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি'র প্রধান মেন্দি এন সাফাদি সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। সেখানে সাফাদি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করছেন।

জেরুজালেম অনলাইন ডট কম সংবাদে জানা যায়, 'শিগগিরই সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরায়েলিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আমরা বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে'- এমন মন্তব্য করেন মেন্দি এন সাফাদি।

এখন কথা হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের অফিসিয়াল-আনঅফিসিয়াল কোনও বৈধ যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও বিএনপি'র নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর কোনও আশার কথা পরিপ্রেক্ষিতে মেন্দি এন সাফাদি শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঔদ্ধত্য দেখায় এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার ষড়যন্ত্র করে সেটা খুব সহসায় অনুমান করা যায়।

যা হোক, সরকারের কাছে থাকা ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিএনপি'র আসলাম চৌধুরীকে দেশের বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং পরে গ্রেফতার ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় এখন বিচারের আওতায় আসে।
এদিকে আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরায়েলের মেন্দি এন সাফাদির বৈঠকের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন বিএনপি'র ভাবমূর্তি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জঘন্য অপরাধের অপরাধী ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপি'র গোপন বৈঠক ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের খবর নিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা টানা-হেচড়া শুরু হয়েছে, তখনই পরিকল্পিতভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়কে।

বিএনপি'র নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরায়েলের নেতা মেন্দি এন সাফাদির গোপন বৈঠক যখন আর গোপন করা গেল না, ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপি'র আঁতাতের খবর নিয়ে যখন দেশের সচেতন মহলের সঙ্গে খোদ নিজ দলের নেতাকর্মীর মধ্যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে, ঠিক তখন তারা বেছে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে।

ইতোমধ্যেই বিএনপি'র নেতা আসলাম চৌধুরীর আগেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের বৈঠকের খবর গণমাধ্যমজুড়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল করতে তারা সক্ষম হয়েছে। এটা যেন প্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর চাঁদ-এ গমন করার গল্পের মতোই…!

আসুন, এবার ষড়যন্ত্রে মোড়ানো ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নিয়ে একটু বলি- মেন্দি সাফাদি যে ভিডিওটি ফেইসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল করেছে, সেটি ক্রোমা স্টুডিওতে ধারণ করে গ্রাফিক্যাল এডিট করা, যা পরবর্তীতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি এডিটিং এর মাধ্যমে ভিডিওটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। মূল স্টুডিওর পেছনে সবুজ পর্দা দেখলেই যে কারোরই সহজে অনুমান করা সম্ভব হবে, ভিডিও ধারণ করার সময় ইসরায়েলের মেন্দি এন সাফাদির সামনে তখন সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোনও ছবিই ছিল না, যা পরে পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারের সময় মেন্দি এন সাফাদির কথার অসংলগ্নতাও বহুবার ফুটে উঠেছে।

আবার টাইম টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেন্দি এন সাফাদি একবার বলছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনি চিনতেন না। আবার ভিডিওটির একটি অংশে মেন্দি নিজেই বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয় তাকে বলেছেন, তার (বর্তমান সরকার) সরকারকে সহায়তা দিতে মেন্দির কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন জয়!

মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে জয়ের সাক্ষাতের ভিডিওটি নিয়ে ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ২৬ মে স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা জাহিদ এফ সাদী তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেন। তখন ঢাকার সময় ২৭ মে'র সকাল ১০টা ২২ মিনিট ২৭ সেকেন্ড। এর মানে ভিডিওটি ওইদিন সকাল বা ২৬ তারিখ রাতে প্রচার করা হয়েছে। যদিও এর আগে জাহিদ সরদার সাদী তার ফেসবুক পেজে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে স্ট্যাটাস দেন, 'ভিডিওসহ ব্রেকিং নিউজ আসছে, সঙ্গেই থাকুন, সত্য উন্মোচন করা হবে- ইসরায়েলে ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেনদি সাফাদি ও জাহিদ এফ সরদার সাদী।'

আসলে, প্রত্যেকটা নাটকই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়। আর এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শুধু 'ইসরায়েলি মোসাদের কথিত গোয়েন্দা মেন্দি সাফাদির সঙ্গে ৬ মিনিটের সাক্ষাতের কারণে আসলাম চৌধুরী রাষ্ট্রদ্রোহী হলে, সেই মেন্দি সাফাদির সঙ্গে ১৫ মিনিটের বৈঠকের কারণে সজীব ওয়াজেদ জয় কেন রাষ্ট্রদ্রোহী হবেন না? -এই প্রশ্নটি জাতির সামনে উপস্থান করার জন্যেই এই ধরনের ভুয়া ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে তাদের কিছু সফলতাও যে আসেনি তা বলা যাবে না। কারণ, কিছু মিডিয়া তথ্যসূত্র নিশ্চিত করার আগেই ভাইরাল হওয়া ভুয়া ভিডিওটি নিয়ে রমরমা সংবাদ পরিবেশন করতে খুব দেরি করেনি। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরালের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্য লক্ষ্য করা গেছে।

মূল কথা হলো, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ সম্ভ্রম বিনাসের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মিথ্যাচার করতে-করতে বিএনপি এখন এতটাই ক্লান্ত! তাই এখন নিজ পলাতক নেতা তারেক রহমানের বিভিন্ন অপকর্ম, ষড়যন্ত্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অপরাধ ঢাকার জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়কে টার্গেট করা হয়েছে।

অন্যদিকে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ মেন্দি এন সাফাদির 'বৈঠক হয়েছে' বলে গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে, তা নাকচ করে সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'আমার সঙ্গে সাফাদির কোনও সময়ই সাক্ষাৎ হয়নি, এটা ওয়াশিংটনেও না বা অন্য কোনও জায়গায়ও না। সে মিথ্যা বলছে।'

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদকে 'মিথ্যাচার' আখ্যায়িত করে জয় বলেন, 'বিএনপি এমনই এক বোকার দল, এমনকি তারা যখন মিথ্যা বলে তখনও বোকামিপূর্ণ ভুল করে। আমি চাই বিএনপি এবং সাফাদি একটা প্রশ্নের জবাব দিক। ওয়াশিংটনের ঠিক কোথায় সে আমার সাক্ষাৎ পেয়েছে? কোন অনুষ্ঠানে? অন্য কার অফিসে?'

এই চ্যালেঞ্জ তিনি ছুড়ে দিয়েছেন বিএনপি'র প্রতি।

এখন শুধু সজীব ওয়াজেদ জয় নয়, পুরো দেশবাসীর মতো আমারও খুব জানার ইচ্ছে, আসলে জয় এর অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কিভাবে এলো আবার ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির তথ্য অনুযায়ী সজীব ওয়াজেদ জয় কোন অনুষ্ঠানের এবং কার অফিসে? কোন তারিখে ইসরায়েলের মতো বর্বর দেশের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে অবৈধ বৈঠক করেছেন?

মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে খানিকটা লাভবান হলেও শেষবেলায় বিএনপি'র পরাজয় বিএনপি নিজেই রচনা করবে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)