ইমরান এইচ সরকার ‘শিবিরকর্মী’!

কবীর চৌধুরী তন্ময়
Published : 18 August 2017, 01:18 PM
Updated : 18 August 2017, 01:18 PM

৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজাকারের শিরোমনি গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের নাগরিকত্বই শুধু দেয়নি, স্বাধীনতাবিরোধীদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার বানিয়েছিল জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে খাদেজা জিয়া। পাকিস্তানের ভাবধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তাঁরা। কারণ এটা তাঁদের রাজনৈতিক আদর্শ এবং কৌশলগত কারণে আজও জামায়াত-শিবিরকে বিএনপি লালন-পালন করছে।

কিন্তু আওয়ামী লীগও তার বাইরে আছে বলে প্রমাণ পাচ্ছি না। জামায়াতের আমিরের ছেলেকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানানো এটা কীসের লক্ষ্যন। ছাত্রদলের পথেই হাটছে ছাত্রলীগ! আবার রাজশাহী জেলার বাগমারায় বাংলাভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও গোয়েন্দা সংস্থা ও থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ জেএমবি সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন চিহ্নিত এক রাজাকারের ছেলে!

যদিও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে তাঁদের মনোনয়ন বাতিল করা হলেও কাঁরা তাঁদের মনোনয়নে নির্বাচিত করেছে তাঁদের বিচার কিন্তু আজও হয়নি। সাংগঠনিকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। আর মহিলা আওয়ামী লীগের পদ অর্জনকারী রাজাকারের মেয়ে রিজিয়ার ব্যাপারে খোদ আওয়ামী লীগই সার্টিফিকে দিয়ে দিয়েছে।

এখন আপনারা যদি কেউ-কেউ বলেন, এটা রাজনৈতিক কৌশল কিংবা রাজাকারের ছেলে-মেয়েরা কী বঙ্গবন্ধু'র আদর্শ ধারণ করতে পারবে না (?) তাহলে এখানে আমার বলতে ইচ্ছে করে, দয়াকরে জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠ-পোষককারী হিসেবে বিএনপিকে দোষারোপ করবেন না। কারণ এটাও পাকিস্তানের আদর্শ ধারণ এবং বিএনপি'র রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে যা তাঁদের অধিকারের মাঝে পড়ে।

যেখানে স্বয়ং ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ জেএমবি'র জামায়াতের ছেলে-মেয়েকে পদ-পদবী আর সদস্যকে আওয়ামী লীগের নৌকা তুলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু'র আদর্শ ও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রকে অবহেলা করে, সেখানে অপরের দোষ দিয়ে কী লাভ বলুন?

ইমরানকে পঁচা ডিম মারেন, ইট-পাটকেল মারেন, তাঁর সমালোচনাকে পেশি শক্তি ব্যবহার করে বন্ধ করেন কিংবা তাঁকে ছাত্রশিবির-রাজাকারের নাতী, গাজা খোর, মাগীখোর (অশ্লীল শব্দের জন্যে দুঃখীত) বানাবেন বানান! কেউ কিচ্ছু না বললেও আমি বলবো- এটা আপনারা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছেন! আপনার-আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করছেন! যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবিতে লক্ষ-কোটি মানুষের আবেগ-ভালোবাসা এবং চেতনাকে অবহেলা-প্রশ্নবিদ্ধ করছেন! মন্ত্রি পরিষদ সদস্যদের বিতর্কিত করছেন।

আপনারা ভুলে গেলেও ইতিহাস কিন্তু নিজেস্ব রেখায় চলমান। এই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিল দেশের মুক্তিযোদ্ধারা। সমসুরে জাতীয় সংগীত কন্ঠেতুলেছিল স্বাধীনতাকামী বাংলার জনগণ। তিন মিনিট নিরবতা পালন করার জন্যে সচিবালয় থেকে মন্ত্রী পরিষদের অনেক সদস্য রাস্তায় নেমে এসে কর্মসূচীতে একাত্বতা পোষন করেছিল। ক্রিকেট খেলোয়ার থেকে আরম্ভ করে দর্শক পর্যন্ত…! প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সেই বাচ্চার হাতে মোমবাতির ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় লক্ষ-লক্ষ শেয়ার ভাইরাল হয়েছিল। আমারও ইচ্ছে করে শাহবাগের গণজারণ মঞ্চে ছুটে যাই, প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সেই সংসদের ভাষণ আপনারা অনেকে ভুলে গেলেও ইতিহাস তা কখনো ভুলতে দিবে না।

ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা সদেস্যের উপর দলের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। বঙ্গবন্ধু'র আদর্শ নতুন প্রজন্মের সামনের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভাবতে হবে, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতির মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। সমালোচনার জবাব কখনো পেশি শক্তির মাধ্যমে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এখানে দেশিয়-আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নির্ভর করছে। সমাজ-সভ্যতার প্রশ্ন জড়িত।

আজ যারাই শাহবাগের মানববন্ধনে ডিম-ইট ছুড়েছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো, অজ্ঞতা বশত তাঁরা শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তারা সুযোগ সৃষ্টি না করলে আজ পত্রিকার পাতায়-পাতায় শোভা পায় না যে, দেশে কিসের বন্যা? তোরাই বন্যার গল্প বানাইছিস।"!

সংসদ সদস্যদের অজ্ঞ-অশিক্ষিত বলার কারণে আজ প্রধান বিচারপতির সমালোচনা হচ্ছে কারণ, এই সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে আবার এই রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নির্বাচন করে। তাই এই কথাটি চলেও আসে, তাহলে প্রধান বিচারপতিও অজ্ঞ-অশিক্ষিত! তাই গণজারগণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার আগে প্লীজ! একটু ভাবুন, বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে অজান্তেই বিতর্কিত করছেন কীনা! মন্ত্রী পরিষদের কিছু সদস্যদের বিতর্কিত করছেন কীনা। লক্ষ-কোটি মানুষের আবেগ-ভালোবাসাকে বিতর্কিত করছেন কীনা।

ইমরান এইচ সরকারকে জামাত-শিবির বলার আগে ভাবুন, গণজারগণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব নিয়ে যে কর্মসূচী দিয়েছিল সেই কর্মসূচীতে আমি-আপনি এবং আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাও অংশ গ্রহণ করেছিল। তার মানে আমরা ছাত্রশিবিরের কোনো কর্মীর নির্দেশনায় এতোদিন চলেছি..?