‘সাগর থেকে ফেরা’- ব্লগারদের “৪৮ ঘন্টা” শীর্ষক সমাবেশ থেকে ফিরে!

উত্তর পুরুষ
Published : 9 June 2012, 09:48 AM
Updated : 9 June 2012, 09:48 AM

সাগর মহাসাগর আমার খুব প্রিয় স্থান! মূহুর্মূহু আছড়ে পড়া সমুদ্র বিক্ষুদ্ধ ঢেউ আমার রক্তে এখনও নিদারুণ নাচন তোলে! আমি ভুলে যাই আমার সময়, আমার বয়স, আমার পরিচিতি আর আমার সামাজিক স্তর বিন্যাস! তাই সাগর আমাকে নিয়তঃই নির্মল করে, আমাকে পরিশুদ্ধ করে, আমার সকল মলিনতা ধুঁয়ে দেয় আর আমাকে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মুক্ত করে প্রাত্যহিক জীবনের টানা পোড়েন থেকে, তাই সাগর সন্ধানে সাগর সঙ্গমে আমি লোভাতুর হয়ে পড়ি!

গতকাল ৮ ই জুন বিকেলেও আমি এক সাগর সন্ধানী হয়ে ব্লগারদের "৪৮ ঘন্টা" শীর্ষক সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে ছিলাম! দেখলাম, অগণন শান্তিকামী মানুষের, তারুন্যের যৌবন জলতরঙ্গ সেখানে মূহুর্মূহু আছড়ে পড়ছে, বিচার চাইছে অন্যায়ের, প্রতিবাদ করছে দূরাচারের!

সাগর রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচারে তারা তথাকথিত "ভাংচুর বা জ্বালাও পোড়াও" এর স্থলে ব্যতিক্রমধর্মী ও অদ্ভুত সুন্দর প্রতীকি প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছে দেখে আরো ভাল লাগলো, স্বস্তি পেলাম!মনে পড়ে পড়ে গেল সে অমর প্রতিবাদী গানের কয়েকটি লাইনঃ "আমার প্রতিবাদের ভাষা, আমার প্রতিরোধের আগুন, দ্বিগুন জ্বলে জেন দারুন প্রতিশোধে, করে চুর্ণ ছিন্ন ভিন্ন, শত ষড়যন্ত্রের জ্বাল যেন, আনে মুক্তি, আলো আনে, আনে লক্ষ, শত প্রানে!"

আবু সুফিয়ান, মঞ্জুর মোর্শেদ, জাহিদুর রহমান ও আরও অনেক টগবগে তরুন যুবকের "মারের সাগর পাড়ি দেবার" এ কি দূঃসাহসী অভিযান!

মনে পড়ে গেল আরও সেই ইতিহাসের পাতা, যখন একদিন ১৯৬৯ সালের উত্তাল দিনে সাপ্তাহিক পুর্বদেশে হেড লাইন দেখেছিলামঃ
ফুলের মতোন সন্তানেরা, আগুন জ্বলে চোখে-
সাধ্য কাদের, শক্তি দিয়ে মিছিল ওদের রোখে?

প্রেমেন মিত্রের "সাগর থেকে ফেরা" গানটি মনের সাগরে কিন্তু সততঃই ঝড় তুলে যাচ্ছিল! তাই কাল ব্লগার দের দেখে ফিরে আসা আমার "সাগর থেকে ফেরা"!

পুনশ্চঃ আমার সাথেই সেখানে হাজির হয়েছিল আমার মতোই ১৯৭১ সালের আরেক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, আমার সহপাঠি ও বন্ধু, যে এখনও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চেনা মুখ! আমরা যথাসম্ভব সবার সাথে পরিচিত হলাম,আর কয়েকজনকে খুঁজলাম! দুঃখ ঠিক না, হতাশ হলাম আমার প্রিয় ব্লগারদের অন্যতম হৃদয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশে থাকেন না শুনে (মানে দেখা হলনা আর!), সুলতান মির্জাকে দেখারও ইচ্ছে ছিল, তিনি হয়তো ছিলেন, কিন্তু আমার তাকে দেখা হলনা! নুরুন্নাহার শিরিনকেও দেখা হল না, কিন্তু জানি একদিন হয়তো ওদের সবার সাথেই দেখা হবে! সৌহার্দ্য বিনিময়ও হবে সেদিন!

আরিফ হোসেন সাইদের চোখেও হয়তো আমরা সেই ভাবে পড়িনি, তার বিশাল লেখায় বোধ হয় সে কারনেই আমার ব্লগিং নামের বা অন্য কোন ভাবে উপস্থিতির উল্লেখ নেই! কিন্তু তাতে কি? আমিও তো ওদের একজন!
আমি তো "সাগর থেকে ফেরা"!

আর সেই সাগরের মুহুর্মুহু আছড়ে পড়া বিক্ষুদ্ধ ঢেউয়ের সংঘাতে একদিন ধসে পড়বেই অন্যায়, দূরাচার!