চাটমোহরের চম্পা এবং ভারতের স্মৃতি ইরানি: আমাদের কাজ করার সাহস যোগায়

কাজী রাশেদ
Published : 10 Jan 2015, 06:02 PM
Updated : 10 Jan 2015, 06:02 PM

আজ সকালেই সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক খুলতেই চোখে পড়লো ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী বলেছেন যেকোন কাজ করাই সন্মানের। সে হোক ঝাড়ু দেওয়া, মুচিগিরি বা বাসনমাজা । কাজ কাজই। তিনি নিজে স্বীকার করেছেন যে মাত্র বছর পনেরো আগেও তিনি নিজেও বোম্বাই শহরে বাসন মাজার কাজ করেছেন। আর আজ সেই তিনিই পৃথিবীর বৃহত্তম গনতান্ত্রিক রাস্ট্রের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী।

অন্যদিকে আজ সকালে বাংলাদেশের একটি দৈনিক বাংলাদেশ সময় এর এক প্রতিবেদনে পাবনার চাটমোহর পৌরসভা শহরের জান্নাতুল সরকার চম্পা (৩৫) এর কথা লেখা হয়েছে।পৌরসভার খুব চেনা সকলের একজন মানুষ।পেশায় খবরের কাগজের বিক্রয়কর্মী।উপজেলার পাশর্্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মল্লিকবাইন  গ্রামের মৃত ইসাহক আলী সরকারের দ্বিতীয় সন্তান এই চম্পা। ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৫ সালে কাটাখালীর একটি ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের আগে ঈশ্বরদী আলহাজ টেঙ্স্টাইল মিলে নিরাপত্তা বিভাগের হাবিলদার হিসাবে কাজ করতেন। বিয়ের পরে সানফ্লাওয়ার নামের একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরি নেন। আর বিয়ের এক বছর না ঘুরতেই তার ঘর ভেঙে যায়। তারপর চম্পা ঘর বাঁধেননি। সংসারের প্রতি তার ভীষণ অনীহা জন্মে । আর মা-ভাইয়ের দায়িত্বটাও বাবা মরে গেলে তার কাঁধে চেপে বসে।এই হচ্ছে তার জীবনী। বড়োই সাধারন এক মেয়ের কথা। কিন্তু অসাধারনত্ব হলো কাজের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির।

চম্পা জানান ২০১০ সালে তিনি পাশর্্বডাঙ্গা ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য হিসাবে দাঁড়িয়ে মাত্র ৭০ ভোটে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পরাজিত হন। এ সময় নির্বাচন করতে গিয়ে চম্পা অভাবী উঠোনে এসে দাঁড়ায়। তখন নিরুপায় চম্পা অভাবের তাড়া খেয়ে ফের আবুল খায়ের গ্রুপের মাঠ পর্যায়ের মার্কেটিং কর্মকর্তা হিসাবে চাটমোহর টেরিটরিতে যোগ দেন। ২০১১ সালের শেষ দিকে কোম্পানি তাকে সিরাজগঞ্জ জেলায় বদলি করলে চম্পা চাকরিটা ছেড়ে দেন। এরপর দিশেহারা চম্পা রোজগারের কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে ২০১২ সালে খবরের কাগজ বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন চাটমোহর পৌর শহরে। তিনি জানান এ পেশায় তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে নারী হয়ে এ কাজ করছি বলে কিছু রক্ষণশীল ও অন্যরকম মানুষ উপহাস-টিটকারি করেন। তারা বলেন মেয়ে মানুষ হয়ে সাইকেলে চড়ে পুরুষের মতো এটা করো কেন। অন্যকিছু কর। চম্পা বলেন আমি মুখ বুজে তাদের এসব কথা শুনি। কিছুই বলি না। মানুষতো  সবাই সমান মনের হয় না।তিনি আরোজানান পত্রিকা বিক্রির আয় মাসে ৯/১০ হাজার টাকা। এ টাকায় সংসার ভালোই চলে যাচ্ছে। কারো কাছে হাত পাততে হয় না।কারো কাছে হাত না পাতা এবং কাজের প্রতি সন্মানবোধ এই জায়গাতেই আমাদের চম্পা আর ভারতের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এক সু্তায় বাধা পড়েছেন। (সুত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ সময়)

অসাধারনভাবে দুটো সংবাদের মুল প্রতিপাদ্য একই। একেবারে দারিদ্রসীমায় বসবাসকারী আমাদের চাটমোহরের চম্পা আর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানীর কাজের ব্যাপারে মুল্যায়ন একই। আমাদের চম্পার হয়তো মন্ত্রী হয়ে উঠা হবে না কিন্তু মনমানসিকতায় কোন অংশেই স্মৃতি ইরানীর চেয়ে খাটো নন। আমরা যারা কাজের উপর ভিত্তি করে সমাজের শ্রেনী বিভাজন টানতে চাই অথবা ছোট কাজ না করার উছিলা খুজি তাদের এই দুই নারী চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে কাজ করার মধ্যেই সন্মান, সে যে কোন কাজই হোক না কেনো। ভিক্ষা বা অসামাজিক উপায়ে অর্থ উপার্জন মানুষকে বিত্তশালী করে তুলতে পারে কিন্তু সন্মান দিতে পারে না। মানুষের শ্রদ্ধা আনতে পারে না।