পাকিস্তান এক সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী

কাজী রাশেদ
Published : 11 Jan 2015, 09:06 PM
Updated : 11 Jan 2015, 09:06 PM

পাকিস্তানের খুনখারাবি আর থামছে না। প্রতিদিনই খবরের হেডলাইন হয়ে আসছে হয় আত্মঘাতি বোমা হামলা, নাহয় বন্দুকের গুলিতে নিহত নারী শিশু সহ সামরিক অসামরিক জনগনের ছবি। পাকিস্তান আজ নিশ্চিন্ত ভাবে এক মৃত পুরীতে পরিনত হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি আজ কোথাও নেই পাকিস্তান নামক দেশটিতে।

মানুষের এই অনিশ্চিত জীবন আমরা কেউ চাই না। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্যি আজকের পাকিস্তানীরাই ১৯৭১ সালে আমাদের বাংলাদেশে এই রকম এক মৃত্যুপুরীর অনিশ্চয়তা চাপিয়ে দিয়েছিলো। সেই ভয়াবহ গনহত্যার সময়ে দু'একজন ব্যক্তি ছাড়া আমাদের দেশের গনহত্যায় কোন প্রতিবাদ বা নিন্দার উদ্যোগ চোখে পড়ে নি। বরঞ্চ আজোও বাংলাদেশের সেই গনহত্যাকে পাকিস্তানের শাসকরা সাধারন জনগনের কাছে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রেখেছে। যাহোক, বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতি পটে সেই সব দুঃসহ দিনগুলির কথা আজো মনে থাকলেও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডগুলোতে শোকাভিভুত হয়েছে এবং প্রতিবাদে মুখরিত হচ্ছে।

আমাদের প্রিয় কবি লেখক হুমায়ন আযাদ স্যার বলেছিলেন যদি পাকিস্তানী গোলাপ ফুল নিয়েও আসে তাহলেও তাকে বিশ্বাস করা যায় না। তাঁর এই সাহসী এবং সত্য উচ্চারনটি যে কত প্রাসঙ্গিক তা আজ আবার প্রমানিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড গুলোর মধ্য দিয়ে। আপাত দৃষ্টিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিতে মানবিক গুন সম্পন্ন কোন মানুশ বাস করে কিনা সেতাই আজ গবেষনার বিষয় বস্তু হয়ে গেছে।

পাকিস্তানের এই নির্মমতার শুরুটা আসলে সেই ৭১ সাল থেকেই শুরু হয়েছে। ৭১ সালে বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের হাতে নির্লজ্জ ভাবে পরাজিত হবার পর থেকে তাদের নিজেদের ক্ষমতার খেয়োখেয়িটা দিন দিন বেড়েই চলে। গোষ্ঠীগত দ্বন্ধ আর আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীকে উৎখাতের মার্কিনী প্ররোচনায় সারা পাকিস্তান জুড়ে তথাকথিত ধর্মীয় উম্মাদনাকে উস্কে দেওয়ার জেরেই সারা পাকিস্তান আজ সন্ত্রাস আর জঙ্গীগোষ্ঠীর অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। সেই সাথে পাকিস্তান সরকারের বাংলাদেশ বিরোধী কার্যক্রমে মদদ দেওয়ার লক্ষ্যে যে আইএসাই নামক দানব তৈরী করেছিলো সেই দানবের কারণেই আজ পাকিস্তান নিজের ফাঁদে বন্দী হয়ে প্রতিদিন এক নারকীয় রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে।

ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনে সারা বিশ্বের মুসলমানরা তাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর পবিত্র জন্ম ও মৃত্যু বাষিকীর দোয়া খায়েরে ব্যস্ত সেইসময় পাকিস্তানের রাজধানী রাওয়ালপিন্ডির ইমামবাড়ার মাহফিলে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ৮ জনকে হত্যা করেছে। আগেই বলেছি এই সব আঘাত বা হত্যাকান্ড সবই করা হচ্ছে পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামেই। সামাজ্যবাদের পাতানো ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন ইসলাম ধর্মের নামে নিজ ধর্মের মানুষদের হত্যাকান্ডে মেতে উঠছে  আরেকদল ধর্মান্ধ মানুষ। এই নির্মম হানাহানির কার্বন কপি আমাদের দেশেও আমদানীর পাঁয়তারা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তাই দেশ বিদেশের অনেক চক্রান্তের পরেও এই জঙ্গীগোষ্ঠি বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দল এইসব জঙ্গী গোষ্ঠিগুলিকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হক এই প্রত্যাশা করছি। পাকিস্তানের এই হানাহানি আর মর্মান্তিক মৃত্যু উপত্যকা যেন আমাদের দেশে উদয় না হয় এই অনুরোধ সকল বিবেকসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের কাছে।