জনগন নেই অথচ জনগনের আন্দোলন

কাজী রাশেদ
Published : 18 Jan 2015, 04:42 PM
Updated : 18 Jan 2015, 04:42 PM

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দু দুটো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ শেষ হয়ে গেলো তবু দলগুলোর ক্ষমতায় যাবার যে আকাংখা তা কমানো গেলো না। আমরা আমাদের রাজনীতির জন্যে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততোটুকুই আমাদের ধর্মকে ব্যবহার করতে পারবো, তার অনুভুতিগুলিকে কাজে লাগাতে পারবো কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানে মানুষ যোগ দিতে পারলো কি না পারলো তা নিয়ে আমাদের নেতা নেত্রীদের কোন মাথা ব্যথা নেই।

আজ চৌদ্দতম দিবস অতিক্রম করছে বিএনপি জামাত জোটের ডাকা অবরোধের। ঘরে বসে বা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে অবরোধের ডাক দিয়ে দিলেই যখন আন্দোলনের কাজ শেষ হয়ে যায় তখন মাঠে নেমে অবরোধ করার ঝুকি কেই বা নিতে চায়। আর অবরোধ সফল করার জন্যে তো পয়সা আছে, জামাতের পেইড আপ কর্মী আছে। দুশো টাকা ধরিয়ে দিলেই কিছু টোকাই আছে, ভবঘুরে আছে তারাই  বাড়িতে, গাড়ীতে, রাস্তায়, ট্রেনে বোমা মেরে, মানুষ মেরে, জ্বালিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলনকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিচ্ছে। তাই আন্দোলনের জন্যে ত্যাগ স্বীকার করার যে কথা সেটা আজ না করলেও চলছে।

এইভাবেই বাংলাদেশের মানুষ কাটিয়ে দিচ্ছে তেরোতম দিন। পৃথিবীর অন্য কোথাও এই ধরনের মানুষ মেরে, জ্বালিয়ে দিয়ে, মানুষকে জিম্মি করে গনতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।

মানুষ মরছে দেশে দেশে এই কথা সত্য কিন্তু গনতন্তের নামে এইভাবে জনসমর্থন ছাড়া, জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন বাদেই দিনের দিন অবরোধ চালিয়ে যাবার নমনা পৃথিবীতে বিরল। এই ঘটনায় একটি আশংকা মনের মধ্যে দানা বেধে উঠে যে এ কোণ বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ নয়তো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রারম্ভে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু সেই অসহযোগের দিনগুলিতে জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন ছিলো। কোথায় পেট্রোল মেরে মানুষ পুরিয়ে মারার ঘটনা শুনিনি। তাই আজ যখন অবরোধ সফল করার জন্যে মানুষকে পুরিয়ে মারা হচ্ছে তখনই সন্দেহের দানা বেধে উঠে মনের মধ্যে।

এই অবরোধ আন্দোলন শুরুর বেশ কিছুদিন আগে থেকে আমাদের দেশনেত্রীর বড়ো ছেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নতুন ইতিহাস লেখা শুরু করেছেন। সেই লেখা থেকেই তিনি মাঝে মাঝে জাতির উদ্দ্যেশ্যে কিছু বানী পড়ে শোনান। সেই ইতিহাসে সত্য না থাকলেও পাকিস্তান নামক দেশটির সেদিনের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থনের আভাস পাওয়া যায়। ৭১ সালে জল্লাদ ইয়াহিয়া যেমন বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রদ্রোহ করেছেন তেমনি তিনিও আকারে ইঙ্গিতে তাই বলছেন। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক  দাবী করা দলটির প্রধান তিনি তার ছেলের নতুন ইতিহাসকে সঠিক বলে সমর্থন দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এখানেও একে আর একে দুই মিলে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা টাকে উনারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। জনগনের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়ে, দেশের অর্থনীতি একটা স্থিতিশীলতা পেয়েছে সেইটাকে উনারা মেনে নিতে পারছেন না। তাই উনারা জনগনকে সাথে না নিয়ে ক্ষমতায় যেয়ে বাংলাদেশকে আবার পিছনের দিকে নিয়ে যাবার পাঁয়তারা করছেন বলেই মনে হয়।

বিরোধীদলের নেতা অবশ্য যতবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ততবার জনগনকে এই সরকারকে উৎখাতের জন্যে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু জনগন একদিনের জন্যেও রাস্তায় নেমে আসে নি। যে নেত্রীর ডাকে জনগন রাস্তায় নেমে আসে না তার তো রাজনীতিই ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। এই রাজনীতি ছেড়ে দেওয়াটা সব রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের জন্যেই প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যারা মনে করে পুলিশ বিজিবি আর র‍্যাবের ভয়ে জনগন রাস্তায় নামছে না তারা  আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জনগন পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এমনকি সেনাবাহিনীকেও ভয় পায় না। জনগন শুধু দেখে এই চলমান আন্দোলন টি তার স্বার্থে কিনা। এই আন্দোলন তার প্রানের দাবীর সাথে মিলে কিনা। এই আন্দোলনে যে দল বা নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছে সেই নেতা বা নেত্রী তাদের কথা বলে কিনা। তাদের পাশে সখে দুখে তাহকে কিনা। নব্বইয়ের গনভ্যুত্থানের পর তিন জোটের যে রুপরেখা ছিলো সেটা ছিলো জনগনের প্রানের রুপরেখা। কিন্তু নব্বইয়ের পর আজ ২৪ বছর পার হয়ে গেছে কোন সরকার বা দলই তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত রুপরেখার বাস্তবায়ন করে নি। তাই জনগন আজ সব আন্দোলন থেকেই মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। সেইসাথে আরেকটি জোট স্বাধীনতার বিরোধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে এদেশের স্বাধীনতাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তাই জনগন এখন মুলত কারো সঙ্গেই নেই, আছে তার নিজের জীবনযুদ্ধের সাথে।