আসাদের শার্ট: আজো আমাদের প্রাণের পতাকা

কাজী রাশেদ
Published : 21 Jan 2015, 05:10 PM
Updated : 21 Jan 2015, 05:10 PM

১৯৬৯ সাল। কী যেন এক নেশা জাগানো বারতা নিয়ে এলো এই নতুন বছর। কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে ২২টি বছর। অত্যাচার আর শোষণের নিস্পেষনে বাংলার মানুষ তাই দিশেহারা। আর একটি দিন যেন বাংলার মানুষ ওই স্বৈরাচারকে দিতে চায় না। এই বারতাই বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। দ্রোহের আগুনে সব পুড়িয়ে দিতে চায়। তাইতো বছরের প্রথম দিন থেকেই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পরে দিকে দিকে। হৃদয়ের বারুদে তাই জ্বলে লাল আগুন। সেই আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হবে স্বৈরাচারের সাধের তখতে তাউস। এ যেন ইতিহাস নির্ধারিত বিষয়।

জননেতা ভাষানী ডাক দিলেন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের তোলা আদায় বন্ধের। সারা বাংলাদেশে ১৮ই জানুয়ারি ৬৯ সাল সকল হাট-বাজারের তোলা আদায় বন্ধ করার কর্মসূচি ঘোষনা করা হল। হাতিয়া, সন্দীপ, হাতিরদিয়া, মাধবদি, বাবুরহাট, শিবপুর থেকে শুরু করে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সমস্ত হাট বাজারে একই আওয়াজ ধ্বনত হলো " না তোলা দিবো না, বাংলার মানুষের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোন তোলা দেওয়া হবে না।

৬৯ এর সেই আগুন ঝরানো দিঙ্গুলির একটি দিন ১৯শে জানুয়ারি। সংবাদ অফিসে একহারা গড়নের এক যুবক বার্তা সম্পাদকের কক্ষে এসে খবর দিলো হাতিরদিয়া হাটের হরতাল সফল হয়েছে। আরো জানালো পুলিশের নির্যাতনের খবর। অত্যন্ত প্রাঞ্জল আর দৃঢ়চেতা ভঙ্গিতে বলে গেলো আগুন ঝরানো এক দিনের কথা। সেই যুবকের মাথায় তখনো পুলিশি নির্যাতনের চিহ্ন। এরপরে সেই যুবক যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিজের চিকিৎসার ‡mB w`‡bi †mB সংবাদ আনা hyeKwUB †h হবে ইতিহাস তা কেউ জানতো না।জানতে পারেননি সংবাদের বার্তা সম্পাদকও। সেই যুবকই আগুনের লেলিহান শিখা হয়ে স্বৈরাচারের স্বাধের ক্ষমতাকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে তা কেউ কল্পনাতেই আনেনি। চাতনায় দীপ্ত সেই যুবক হলেন আসাদ। উনসত্তরের আসাদ, শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদ। চেতনায় প্রজ্জলিত এক নাম, একটি ইতিহাস, একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

২০শে জানুয়ারি ৬৯ ছিল সারা প্রদেশব্যাপী হরতাল। জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছিল হরতাল। প্রাদেশিক রাজধানি ঢাকাও ছিলো এই হরতালের আওতায়। সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেও জনগনের অংশগ্রহন ঠেকাতে পারেনি। হাজার ছাত্র জনতা সেই ১৪৪ ধারাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সংক্ষিপ্ত মিটিং শেষে নেমে আসে মিছিলে। সেই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন আসাদ। যদিও তিনি ছিলেন অসুস্থ্য। সেই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। মিছিল দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ এক অংশের উপর কাঁদুনে গ্যাস এবং গুলি ছুঁড়ে। সেই গুলিতেই আহত হয়ে আসাদ মারা যান।

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আসাদ পুলিশের নিহত হলেন। যেন বাংলাদেশ গুলিবিদ্ধ। সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়লো। শিশু, কিশোর, পুরুষ নারী, বৃদ্ধ বৃদ্ধা সকলেই নেমে এলেন ঢাকার রাজপথে। আসাদের মৃত্যু যেন এক লহমায় ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে সারা।

মৃত্যুর জানাজা মোরা
কিছুতেই করিব না পাঠ
কবরের ঘুম ভাঙ্গে
জীবনের দাবি আজ
এতোই বিরাট।