আল্লাহ যেনো কোন শত্রুকেও এই কষ্ট না দেন

কাজী রাশেদ
Published : 26 Jan 2015, 09:51 PM
Updated : 26 Jan 2015, 09:51 PM

আজকের দৈনিক পত্রিকা সমকালের খবর "আল্লাহ যেনো কোন শত্রুকেও এই কষ্ট না দেন।" এই কথাগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা রত এক অসহায় মানুষের। বিএনপি জামাত জোটের অবরোধে আগুনে ঝলছে গেছে তার শরীর। যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে সাংবাদিকের কাছে নিজের কষ্টের কথা বলতে যেয়ে এইভাবেই ব্যক্ত করেছেন নিজের অসহায়ত্বের কথা। বলেছেন তার যন্ত্রনায় কষ্ট পাওয়া তার স্ত্রী কন্যার কথা। স্ত্রী-কন্যাও যে তার যন্ত্রনায় মুখ লুকিয়ে কাঁদে সেকথাও বলেছেন। যাত্রাবাড়ীর ফুটপাতে ব্যবসা করা বিল্লাল হোসেন সারাদিনের ব্যবসা পাতি গুটিয়ে যখন প্রস্তুতি শেষ করে তার বাড়ী যাওয়ার জন্যে গাড়ীতে উঠেছেন সেই গাড়ীতেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো গনতন্ত্র উদ্ধারের নামে। বিল্লাল হোসেনের ৯০ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে গনতন্ত্র উদ্ধারের আগুনে।

'আমি কাঁদতেই পারব। আমার স্বামীকে তো আর আগের অবস্থায় ফিরে পাব না। কেউ ফিরিয়ে দিতেও পারবে না। গাড়িতে আগুন দেয় যারা সেই অবরোধকারীদের কানে কি আমার কান্না পেঁৗছবে। না, আমাদের কান্নার কোনো দাম নেই।' স্বামীর মাথার পাশে বসে কান্নার স্বরে কথাগুলো বলছিলেন দগ্ধ ঠিকাদার নূর আলমের স্ত্রী চম্পা বেগম।

স্বামীর পোড়া দেহের পাশে প্রতিবাদী চম্পা বলেই যাচ্ছিলেন, 'যারা রাজনীতি করে, তারাও বিমানে চড়ে, এসি গাড়িতে চড়ে। তারা বাসে চড়তে পারে না? তাদের গাড়িতে আগুন দিলে পোড়ার কষ্টটা বুঝত।' চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ৪৮ ভাগই পুড়ে গেছে। অন্যদের অপেক্ষা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।(সুত্রঃ দৈনিক সমকাল)

'হ্যাগো বুক খালি অয়ন্যা ক্যান। খালি কী সাধারণ মানুষ মরব। আর কত মায়ের বুক খালি অইব। হ্যারা রাজনীতি করে, হ্যারা মরুক। ভালো মানুষ মরব ক্যান। গরিব দুঃখী মানুষ ক্যান মরব।' কলেজছাত্র নাজমুল হোসেনের খালা হাছিনা এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মামাত বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা থেকে নারায়ণঞ্জের বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন নাজমুল।(সুত্রঃ দৈনিক সমকাল)

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে যারা এখনো যাননি তাদের একবার সেখানে যেয়ে দেখে আসা উচিত গনতন্ত্র উদ্ধারের আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া মানুষগুলোর হাহাকার আর যন্ত্রনার কাতরতা। অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রী বার্ন ইউনিটে যেয়ে অযথা ভিড় করতে মানা করেছেন। চিকিৎসার সুবিধার্থে এবং স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণেই স্বাস্থ্য মন্ত্রী এই আহবান করেছেন। জনগন এই আহবানে সাড়া দিবে অবশ্যই কিন্তু গনতন্ত্র উদ্ধারের নামে সারা দেশে যে মৃত্যু উৎসব শুরু করেছেন বিএনপি ও জামাত জোট সেই মৃত্যু উৎসব চোখে না দেখলে তার ভয়াবহতার রূপ বিশ্বাস করা যাবে না।

তথ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের কাছে অনুরোধ করেছেন যেনো আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষগুলো চেহারা বা ছবি সংবাদপত্রে বা পর্দায় দেখানো না হয়। তথ্যমন্ত্রী আপনার আহবান মানবিক এবং ন্যায়সঙ্গত কিন্তু সেইসাথে মানুষেরও জানার অধিকার আছে একটি বিরোধী জোট ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে সাধারন মানুষকে কি যন্ত্রনাদগ্ধ মৃত্যু উপহার দিচ্ছে। কত যন্ত্রনায় একজন মানুষ তার মতো যন্ত্রনার কষ্ট তার শত্রুর জন্যেও কামনা করে না।

বাংলাদেশের সেইসব সুশীল বুদ্ধিজীবীগন কোথায় মানুষ জানেনা। যারা বিশ্বজিতের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে সোচ্চার হয়ে টেলিভিশনের পর্দা ফাটিয়ে ফেলেছিলেন তার আজ কোথায়, কোথায় তাদের মানবতা, কেনো তাদের কন্ঠে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে না। মানুষ সেইসব সুশীলসমাজকে দেখছে না। শুনছে না তাদের সেই মানবতা গেলো মানবতা গেলো বলে টিভির পর্দা কাপানো চিৎকার। তবে কি গনতন্ত্র উদ্ধারের জন্যে এই আগুন, বোমা আর মৃত্যু তাদের আছে স্বাভাবিক!

ধিক সেইসব রাজনীতি যে রাজনীতি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়, মানুষের মৃত্যু যেখানে কোন দাগ কাটেনা মনের ভিতর, বার্ন ইউনিটসহ সারা দেশে আগুনে পুড়ে যারা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন সেই যন্ত্রনা ক্লিষ্ট হাহাকার পৌঁছে না যে রাজনীতির কানের দরজায়। সেই রাজনীতি জনগন চায় না।