পাহাড়ের শান্তি আনতেই হবে – দুই

কাজী রাশেদ
Published : 31 Jan 2015, 06:32 PM
Updated : 31 Jan 2015, 06:32 PM

শান্ত পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠলো এই চার লাখ বাঙ্গালীকে পুনর্বাসিত করার পরপরেই। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ভূমি দখল, ব্যবসা বানিজ্যে বাঙালিদের প্রাধান্য দেওয়া, ছোটখাটো ভুল বুঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ীদের উপর হামলা সব কিছু মিলিয়ে উপজাতিদের কোণঠাসা করার যে প্রচেষ্টা, সেই প্রচেষ্টা থেকে বের হয়ে আসার কারণেই পাহাড়ে সৃষ্টি হলো পাহাড়ীদের ঐক্যবদ্ধতা। প্রতিবাদ করতে করতে সেই প্রতিবাদ হয়ে উঠলো প্রতিরোধ। সাধারন প্রতিরোধ যখন ভেঙ্গে গেলো তখনি পাহাড় হয়ে উঠলো সশস্ত্র। অন্যদিকে বাঙ্গালীদের রক্ষার জন্যে দেশের সেইসময়কার শাসক শ্রেণী স্বাধীনতা সার্বভৌম রক্ষার নামে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলো। সেনাবাহিনী সেইসময় শান্তি রক্ষার জন্যে যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারতো, বলা যায় না তাহলে পরিস্থিতি কি হতো। তবে দুপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি এবং জাতীয় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো বলেই প্রতীয়মান হয়।

এপ্রসঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না সেই সময় পাহাড় শুধু বাংলাদেশেই অশান্ত হয়ে উঠে নি। ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলগুলিতেও স্বাধীকার আন্দোলনের জন্যে পাহাড়ীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় অধ্যুষিত অঞ্চল গুলো নিজেদের রাজ্য প্রতিষ্টার জন্যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনগুলোর রেশ আমাদের দেশের পাহাড়ের আন্দোলনকেও নাড়া দেয়, উৎসাহ যোগায় এবং সবরকম সহযোগিতায় এই সশস্ত্র আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে।

৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো পাকিস্তানী ধ্যানধারণা এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় ভারত কে দুর্বল করার নীতিতে উৎসাহী হয়ে উঠে। যার ফলে আমাদের দেশের পাহাড়ে তারা  ইচ্ছাকৃত ভাবে অশান্তি জিইয়ে রেখে ভারতের পাহাড়গুলোকে আরো অশান্ত করার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে। আর তাই ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা সরকার শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে উপনীত হলো তখন সেইসময়কার রাজনৈতিক দলের উত্তরাধিকার বেগম খালেদা জিয়া এবং তার প্রাণের দোসর জামাত এই শান্তি চুক্তির বিরোধীতা করে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে গেছে বলে ঘোষনা দিয়ে ছিলো।

পাহাড়ে শান্তি আনতেই হবে। পাহাড়ের আদিবাসী গোষ্টিকে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে আমাদের দেশের ভূখণ্ড কে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে। এবং এই সমস্যার যে অংশ গুলো এখনো অমী্মাংসিত রয়ে গেছে সেই অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো নিয়ে এই সরকারকেই সমাধানের পথ বের করতে হবে। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তির কোন ধারাকেই কার্যকর করে নি ইচ্ছে করেই। বিএনপি জামাত মুখে যতই স্বাধীনতা আর সার্বভৌমের কথা বলুক তারা আসলে এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কিনা তাই নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়ে গেছে বরাবর। তাই বর্তমান সরকারকেই আদিবাসী না উপজাতি এইসব বিভ্রান্তি মধ্যে না যেয়ে আদিবাসীদের নিজস্ব স্বকীয়তা কে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে দিয়ে এবং পাহাড়ে ভুমি ব্যবস্থার একটি ন্যায্য পদক্ষেপ গ্রহন করে পাহাড়ে শান্তি নিশ্চিন্ত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কিছু কিছু পাহাড়ী অঞ্চল কিন্তু আবার নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠছে। পাকিস্তানের তালেবান বা জঙ্গী গোষ্ঠী গুলো পার্বত্য অঞ্চলের অশান্তি থেকেই তৈরী হয়েছে। আমাদের দেশে যারা আদিবাসী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা আসলে সমস্যা সমাধানের কোন কার্যকর পদক্ষেপের দিকনির্দেশনা দিতে পারছেন কিনা তাই নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে।

বিদেশী দাতা সংস্থা আর উন্নয়ন সহযোগীদের সাহায্য সহযোগিতায় কিছু সেমিনার, বক্তৃতা আর সিম্পোজিয়াম করে ভালো ভালো কথা বলা, প্রকাশনা বের করা, আদিবাসী অঞ্চলগুলো ঘুরে বেড়ানো আর সংসদের কমিটি গঠন করার মধ্যেই সিমিত হয়ে থাকে এইসব সংঘটন গুলোর কাজ। ৯৮ সাল থেকে আজ ২০১৫ সালের মধ্যে সরকারের পাশে থেকে শান্তি চুক্তির অনুকুলে কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নি বলেই পাহাড়ের সাধারন মানুষ মনে করেন।

পাহাড়ের মানুষ রাস্তা চায়, উন্নয়ন চায়, বিদ্যুৎ চায়, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব কিছুই চায় তবে সর্বপ্রথমে চায় নিজের জায়গায় মাথা উচু করে দাঁড়াতে। দাঁড়ানোর জায়গাটাই যদি নির্ভরযোগ্য না হয় তবে এইসব উন্নয়ন তাদের কাছে সুফল না বয়ে এনে কুফলই বয়ে আনবে। নিজের মাটিতে নিজের ভুমে জোর পায়ে দাঁড়িয়ে তারপরে উন্নয়নের সুফল পেতে চায় পাহাড়। সেই উন্নয়নের জন্যে যদি নিজেকে উজার করে দিতে হয় তবে তাও দিতে রাজী পাহাড়ের এইসব সহজ সরল মানুষেরা।

সরকারি দলের মতে এরই মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারার ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্টগুলোর ১৫টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি নয়টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। অন্যদিকে জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গলকুমার চাকমা চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারদলীয় সাংসদের এই বক্তব্য অসত্য বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, জনসংহতি সমিতির মূল্যায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারার মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে। অবাস্তবায়িত রয়েছে ৩৪টি। আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে ১৩টি।

(সুত্রঃ দৈনিক সমকাল)

চলবে……।।