যুদ্ধাপরাধি না সিনেমার নায়ক!

কাজী রাশেদ
Published : 7 April 2015, 05:33 PM
Updated : 7 April 2015, 05:33 PM

ঘাতক কামারুজ্জামানের শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। আপিলের বিরুদ্ধে করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে আদালত। একই দিনে গত সোমবার কাশিমপুর জেলে এক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি  কার্যকর হয়েছে। আসামি নাটোরের এক জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হয়। বাচ্চু নামের এই নরঘাতক বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরে কনের বাবা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আশ্রিতের দুই মেয়েকেই হত্যা করে। নিহতের একজনের বয়স তেরো অন্যজনের মাত্র দেড় বছর। এই দুই নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করতে একটুও বিবেকের দংশনে দংশিত হয় নাই হত্যাকারি বাচ্চু। আসলে যারা হত্যাকারি তাদের বিবেক বলে কিছু থাকে না। দেড় বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ সবাইকেই এরা খুন করে নির্দ্বিধায়। যেমন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতকের বাঙ্গালি হত্যা করতে বিবেকে বাধেনি।

কাশিমপুর কারাগারে গত রাতের ফাঁসির খবরটি কিছু সংবাদপত্র প্রকাশ করলেও কোন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদের কোন হইহুল্লোড় চোখে পড়েনি। অথচ গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদের যে ভিড় দেখা গেছে বা আজ যদি ফাঁসি কার্যকর হয় তবে যে ব্যস্ততা দেখা যবে তাতে মনে হয় কামারুজ্জামান কোন খুনের দায়ে দণ্ডিত আসামি নয়, তিনি কোন মহাপুরুষ! সিনেমার কোন দৃশ্যে জনপ্রিয় নায়কের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হতে যাচ্ছে,  যার ফাঁসির খবর ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা সংবাদের প্রথম পাতায় না দিলে মহা অন্যায় হয়ে যাবে। একইরকমভাবে গোলাম আযমের মৃত্যু কালে সংবাদ মাধ্যম যেভাবে প্রচার প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছিলো তাতে দেশবাসি শুধু বিস্মিতই হয়নি, প্রতিবাদ করার মতো ভাষাও হারিয়ে ফেলেছিলো!

আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর এই ধরনের অতিউৎসাহের কারণেই কাদের মোল্লা ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পরেও 'ভি' চিহ্ন দেখায়। কামারুজ্জামানের ছেলে অত্যন্ত দুঃসাহসের সাথে জনগনের উদ্দেশ্যে 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে মশকরা করে। আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদকে 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে অপমানিত করতে চায়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় আমরা গুরুত্বের সাথে প্রচার করতে পারি, তাদের ফাঁসির খবর সংবাদ্মাধ্যম অবশ্যই দেবে কিন্তু এইসব ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত আসামীদের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাতকার প্রচারের কী প্রয়োজন সেটা ভেবে দেখা উচিত। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সকল ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত স্বজনদের সাক্ষাৎকার প্রচার শুরু করতে হবে।

যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশের অপর সকল অপরাধিদের মতো একই মর্যাদা প্রাপ্ত। বরঞ্চ তারা সাধারন অপরাপর অপরাধীদের চেয়েও বেশি ঘৃণিত। আমাদের স্মরন আছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এদেশের কারাগার গুলো থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েদি এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে জীবন দিয়েছিলো। কারাগারের অভ্যন্তরে আটক কয়েদি ও আসামিরা যেখানে স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়েছিলো সেখানে আমাদের দেশের এইসব যুদ্ধাপরাধীরা জ্ঞান গরিমায় অনেক সমৃদ্ধ হয়েও পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে হত্যা-ধর্ষণে নির্বিচারে অংশগ্রহন করেছিলো। অতএব এইসব কুলাঙ্গারদের বর্জনের মধ্য দিয়েই সামাজিকভাবে কোণঠাসা করতে হবে। সংবাদের শিরোনাম করে নয় বরঞ্চ ফুটনোট হিসাবে এদের খবর পরিবেশন করা হোক। এদের ডাকা যে কোন হরতাল অবরোধের খবর প্রচার করা বন্ধ করে দেওয়াই সমীচীন।