পহেলা বৈশাখঃ অর্থবছরও শুরু হক এইদিনে

কাজী রাশেদ
Published : 12 April 2015, 04:48 PM
Updated : 12 April 2015, 04:48 PM

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে। উন্নয়নের ধারায় অনেক দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে অনেক প্রতিকূলতাকে পায়ে মাড়িয়ে। বিশ্বের বহু স্বাধীনতা সংগ্রামের ত্যাগের ইতিহাস কে ম্লান করে দিয়ে পাকিস্তান নামক এক উদ্ভট রাষ্ট্র থেকে যুদ্ধ করে, অনেক রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধিন হয়েছিলো। কিন্তু আজো রাষ্ট্রীয় ভাবে পাকিস্তানের ধারা কে বর্জন করে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারায় ফিরতে পারেনি।

বাংলাদেশের ব্যবসা বানিজ্য আদিকাল থেকে বৈশাখ মাসের প্রথমদিন শুভ হালখাতা দিয়ে শুরু করতো। চৈত্রের শেষ দিনে সারা বছরের হিসাবকে মিটিয়ে দিয়ে নতুন করে শুরু করার যে ধারা সেই ধারাকে লালন করেই বাংলার সাধারন মানুষ তাদের জীবন চালিয়েছে। আজ আমরা সেই ঐতিহ্যকে ধারন করেই পহেলা বৈশাখ কে পালন করছি বাংলা নববর্ষ হিসেবে। বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালীর একমাত্র সার্বজনীন উৎসব। যে উৎসবে ধর্মের কোন বিধিনিষেধ থাকে না। পহেলা বৈশাখ সারা দেশের মানুষকে একসুতায় বেঁধে  একমাত্র বাংলার উৎসবে পরিনত হয়েছে।

আমি পহেলা বৈশাখের সার্বজনীনতার বিষয়ে লিখতে চাই না। আমি আজ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহনের কথা বলতে চাই।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এখন তাদের অর্থ বছর নির্ধারণ করেছে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর। এমন কি যে উপনিবেশের ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলাদেশ সেই ব্রিটেনে পর্যন্ত আর্থিক বছর শুরু হয় জানুয়ারী থেকে এবং শেষ হয় ডিসেম্বর মাসে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ গুলোতেও এপ্রিল থেকে মার্চ কে অর্থবছর হিসেবে ধরে নিয়ে জাতীয় বাজেট পেশ এবং পাশ করানো হয়।

অথচ বাংলাদেশে সেই পুরানো ভুত পাকিস্তানের ধারা বজায় রেখে জুলাই –  জুন আর্থিক বছর হিসেব করা হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জুলাই থেকে জুন মাসের কোন বিশেষ অবদান থাকে না। বরঞ্চ জুন মাসে যখন প্রতিবছর অর্থবছর শেষ হয় তখন থাকে বর্ষা মাস। বছর শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ী, সরকার, ঠিকাদার, ব্যাঙ্ক এবং উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে তাড়াহুড়া শুরু হয়ে যায় কিন্তু বর্ষা থাকার কারণে এইসব উন্নয়ন কাজ শেষ করা হয়ে উঠে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি বা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার যে বরাদ্দ থাকে সেইসব বরাদ্দ ফেরত দিতে  বাধ্য হতে হয়।

জুলাই মাসে শুরু হওয়া আর্থিক বছরের প্রথম কয়েকমাস কেটে যায় নতুন বরাদ্দ আর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষা থাকার ফলে উন্নয়নের কাজ শুরু করা যায় না বললেই চলে। যার ফলে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কাজের প্রারম্ভিক প্রস্তুতি কিছু কিছু কাজ আর মে এবং জুন মাসে শুরু হয়ে যায় কাজ শেষ করার তাড়াহুড়া। এতে না হয় উন্নয়ন,  না হয় প্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশের আবহমান কাল থেকে যে ধারা প্রচলিত ছিল সেই ধারা কে প্রতিষ্ঠিত করে আমাদের অর্থবছর গননা শুরু করা উচিত। বৈশাখ মাসে অর্থ বছর শুরু হলে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ধারাকে যেমন আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো তেমনিভাবে আমরা অর্থ বছর শেষ করার সময় শুষ্ক মওসুমে হওয়ায় কাজ সুষ্ঠ ভাবে শেষ করা সম্ভব হবে। বর্ষা মওসুমে অর্থবছর শেষ করার জন্যে কাজের মধ্যে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে সে ক্ষেত্রেও এক উন্নত অবস্থা বিরাজ করবে। এবং শুষ্ক মওসুম থাকার জন্যে কাজের মানও বজায় থাকবে নিশ্চিন্তে। দেশের বিভিন্ন গ্রাম শহর এবং নগরের উন্নয়ন কাজের দিকে নজর দিলে দেখা যায় মে জুন মাসে প্রতিটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের মান কে তোয়াক্কা না করেই যেনতেন ভাবে কাজ শেষ করার জন্যে নাগরিক সুযোগ সুবিধাকে উপেক্ষা করে থাকে। প্রতি বছর এইসব তাড়াহুড়ার উন্নয়ন কাজের কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকসময় প্রাণহানির কারণ হয়।

বৈশাখ নিয়ে আমাদের দেশের প্রায় অনেক কবি লেখক সাহিত্যিক বিভিন্নভাবে কবিতা, গান প্রবন্ধ লিখেছেন এবং সব কবি সাহিত্যিকের একটাই আহবান সবকিছু নতুন করে শুরু করার। কালবৈশাখের ঝড়ে সব পুরাতনকে উড়িয়ে দিয়ে নতুনকে গড়ার যে আহবান সেই আহবানের আলোকে আমাদের সরকার দেশের অর্থবছর শুরু করুক এপ্রিল থেকে এবং শেষ করুক মার্চ মাসে। পাকিস্তানের ভুত ঘাড় থেকে নামিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য কে প্রতিষ্ঠা করাই হোক এই নববর্ষের প্রধান শ্লোগান।