বঙ্গবন্ধুঃ নিখিলে রচিয়া গেলে আপনারই ঘর

কাজী রাশেদ
Published : 13 August 2015, 06:16 PM
Updated : 13 August 2015, 06:16 PM

গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম গ্রহন করা বঙ্গবন্ধু পুরো বাংলাদেশকে নিজের ঘর মনে করেই আপনদের করেছিলেন পর। সেই ছোটবেলা থেকেই অন্যায় আর অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে যার জীবন শুরু হয়েছিলো এর পরে আর পিছু ফিরে তাকান নাই। ঘরের বাধনকে উপেক্ষা করে শুধুই ছুটে চলা দেশ মাতৃকার সেবায়। কখনো কলকাতা কখনো ফরিদপুর আবার কখনো দিল্লী ঘুরে বেড়িয়েছেন, সংঘঠিত করেছেন, আবার কখনো ছুটে গেছেন অনাহারে অর্ধাহারে থাকা খেটে খাওয়া মানুষদের সেবায়। ঘর পরিবার তাকে খুব কমই টেনেছে। তাই বলে ঘরের প্রতি তার আত্মিক টানের কোন ঘাটতি ছিলো না কখনোই। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তার ঘরের প্রতি যে মমত্ববোধ দেখা যায় তা এককথায় অতুলনীয়।

বঙ্গবন্ধু ঘর বাড়ি সংসারের টানকে উপেক্ষা করে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন একটি স্বাধীন দেশের জন্যে। প্রথমে কাজ করেছেন মুসলিম লীগের হয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্যে। সেই পাকিস্তান সৃষ্টির পরে যখন আশাহত হয়েছেন এবং উপলব্ধি করতে পেরেছেন পাকিস্তান তৈরী বাঙ্গালীদের জন্যে নয়। পাকিস্তান আসলে মুষ্ঠিমেয় কিছু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার। এরপরে তিনি সংঘঠিত করতে শুরু করলেন বাঙালি এবং বাংলাকে।

শুধুমাত্র ধর্মকে আশ্রয় করে বা ভিত্তি করে যে একটি রাষ্ট্র তৈরী হতে পারে না সে উপলব্ধিও তিনি বুঝতে সক্ষম হলেন। তাই মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে অবশ্য মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নিয়ে শুরু করেন পথচলা। এই পথচলা ছিলো একটি স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক এবং গনতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের। বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে গেছেন জীবনের প্রতি কোন রকম দুর্বলতাকে পশ্রয় না দিয়ে। ফাসির মঞ্চে বা মৃত্যুর খুব কাছে থেকেও তিনি ছিলেন তার স্বপ্নের প্রতি, বিশ্বাসের প্রতি অবিচল আর আস্থাশীল।

তাঁর স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। নিজের জনগনের জন্যে একটি স্বাধীন দেশের। বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন সকল বাধা বিপত্তিকে উড়িয়ে দিয়ে। লক্ষ্য, বিশ্বাস এবং প্রতিজ্ঞা যদি ঠিক থাকে, মনোবল যদি থাকে দৃঢ় তবে যেকোন শক্তি সেই মনোবলের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য।

বঙ্গবন্ধু তার লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, জনগণকে তিনি যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। অপরদিকে আমরা তার সেই স্বপ্নের সোনার বাংলায় দাঁড়িয়ে তাঁকেই হত্যা করেছি সপরিবারে। পুত্র-পুত্রবধু থেকে শুরু করে নিষ্পাপ শিশুকে পর্যন্ত রেহাই দেয় নাই খুনীরা। সেই খুনের পরে সিড়িতে যখন তাঁর রক্তাত্ব দেহ পরে ছিলো তখন বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ নিয়েছে তাঁরই মন্ত্রীসভার অনেক সদস্য। প্রতিবাদে এক কর্নেল জামিল ছাড়া আর কেউ নিজের বুকের রক্ত ঢেলে প্রতিবাদে ফেটে পড়েনি। পাকিস্তানের কারাগারের কবর থেকে ফিরে আসা বঙ্গবন্ধু জীবন দিলেন নিজের নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া সোনার বাংলায়।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ট্র্যাজেডি হলো তিনি যাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বড়ো করেছেন, কাছে টেনে স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন তারাই তাকে হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এবং আজো সেই ধারাবাহিকতায় তাঁকে অসন্মান করে চলেছেন, তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে থাকছেন।

আজো তাই আলেক্সজ্যান্ডারের সেই কথা বাংলার রাজনীতিতে বড়ো বেশী প্রাসঙ্গিক।

সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই জাতি!