কলংক মুক্তির পথে আরো একধাপ

কাজী রাশেদ
Published : 22 Nov 2015, 11:38 AM
Updated : 22 Nov 2015, 11:38 AM

দম্ভ আর ঊদ্ধত্বের সীমা ছিলো না যে দুজন মানুষের, সেই দুজনের ফাঁসীর রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশের রাজনীতির এক কলংক জনক অধ্যায়ের। নিজ দলের প্রধান থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যার কথার ঘায়ে অপমানিত হয়েছেন সেই বেয়াদব সাকার ফাঁসীর হয়ে গেলো আজ রাতে। সবার ধারনা কে মথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে সাকাকে ফাসীতে ঝুলিয়েই দায় পরিশোধিত হলো।

অনেকের ধারনা ছিলো সাকার কিছুই হবে না। সাকা এবং মুজাহিদ শেষ পর্যন্ত রাজনীতির মারপ্যাচে ঠিকই বের হয়ে আসবে হাসতে হাসতে। আবার শুরু করবে তাদের নোংরা রাজনীতি। বাংলাদেশের মানূষ আবার এই দুই জল্লাদের অত্তোহাসি শুনবে সংসদে অথবা জনসভার মঞ্চে। কাল বিকেলেও অনেকের কাছেই শুনতে পেয়েছি সাকা এবং মুজাহিদকে মুক্তি দেবার জন্যেই সরকার এক প্রাণভিক্ষার নাটক সাজিয়েছে। কী বলেছেন বিদেশ থেকে সরকারের উপড় চাপ আসায় সরকার পিছু হটেছে, তাই প্রাণভিক্ষা চাওয়ার একটি নাতক সাহিয়ে ক্ষমা করে দেবার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। রাত জত বাড়ছিলো ততোই এইসব গল্পের ডালপালা বিস্তার করছিলো। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটীয়ে যখন রাস্টপতি ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন তখন বাংলার মানুষের মনে ফিরে এসেছিলো স্বস্তি। তখন অপেক্ষা ছিলো চুড়ান্ত ক্ষনের। ততোক্ষনে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে আন্নদের বার্তা বয়ে গেছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া প্রতিঘরেই ছিলো টেলিভিশন আর সংবাদ শুনার উদ্গ্রীব অপেক্ষা।

৭৫ এর আগস্ট হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা ভুলতেই বসেছিলো। যুদ্ধাপরাধী নয় বরঞ্চ বিভিন্ন সময়ে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কেই প্রাণ দিতে হয়েছে কারণে এবং অকারণে। জিয়াউর রহমানের সময় প্রায় ১৯ বারের সামরিক অসামরিক অভ্যুত্তানে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। এরশাদের আমলেও এই হত্যাকান্ড থেমে থাকে নি। উলটো দিকে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলে একাত্তরের পরাজিত হায়নাদের। বুদ্ধিজীবিদের সন্তান রা ছিলো অবহেলিত, মুক্তিযোদ্ধারা ছিলো অপাংতেয়।

ক্ষমতার মোহে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এইসব বেজন্মা দের ক্ষমতার পার্টনার করতে এতোটুকুও দ্বিধা করে নাই। মুজাহিদ এবং নিজামীর মতো খুনীদের গাড়ীতে এবং বাড়ীতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে এদেশের স্বাধীনতাকে ভুলুন্ঠিত করতে একটুও পিছপা হয় নাই। সাকা কে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে এরশাদ এবং খালেদা জিয়া সহ সবাই মিলে দিনে দিনে মহিরহুতে পরিনত করেছিলো।

বিচার শুরু হওয়া থেকে সাকা, মুজাহিদ এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীরা যেভাবে ভি চিহ্ন দেখিয়ে এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের সাথে তামাশা করেছে তাতে এইসব নরপিচাশদের প্রকাশ্য জনারন্যে ফাঁসী দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত ছিলো বলে সাধারন মানূষ মনে করে।

এর আগেও এই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী কার্যকর করার সময়ে এদেশের মিডিয়া এইসব যুদ্ধাপরাধীদের আত্মীয় স্বজনদের যেভাবে কভারেজ দিয়েছে সেব্যাপারেও সাধারন মানুষের মনে বিরক্তির উদ্রেক হয়েছে। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ছেলেরা যেভাবে এদেশের মানুষদের ভি চিহ্ন দেখিয়ে অপমান করেছে ঠিক একই ভাবে মিডীয়াগুলো এই ভি চিহ্ন দেখিয়ে সাধারন মানূষকেও অপমান করেছে। গতকালও সাকার ছেলেদের একইভাবে কভারেজ দিয়ে মিডিয়া কার পক্ষে গান গাইতে চাইছে তা বোধগম্য হচ্ছে না।

সবশেষ একটি কথা না বললেই নয় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা অনেকের কাছেই পছন্দনীয় না হলেও একমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি দেওয়ার জন্যে তিনি এদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। এজন্যে যে সাহস আর দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা আজ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে অনুকরণীয়।