আমি বিজয় দেখেছি, বিজয়ই আমার লক্ষ্য

কাজী রাশেদ
Published : 6 Dec 2015, 08:05 PM
Updated : 6 Dec 2015, 08:05 PM

আসছে ১৬ই ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। বাংলা এবং বাঙ্গালী জাতির জীবনে এক মহান বিজয়ের দিন। স্বীকার করি বা না করি পৃথিবীর সকল বাঙ্গালীর জীবনেই এই বিজয় এক অবিস্মরণীয় দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে জদিও বাংলাদেশ ভাগ হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে কিন্তু এই খন্ডন বাঙ্গালীর মনের আবেগ কে বা পারস্পরিক আচার আচরণ কে ভাগ করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটাজীর কথা সবচেয়ে আলোচিত। তিনি বলেন যখন এয়ারপোর্টে বাংলাদেশের এক ইমিগ্রেসন অফিসার আমাকে বাংলায় প্রশ্ন করে তখন বিস্মিত হয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করি এ কেমন দেশ বিভাগ। একই ভাষা একই সংস্কৃতি অথচ বাংলাদেশে আস্তে গেলে বা এখান থেকে কেউ প্সহচিম বামগ্লায় প্রবেশ করতে গেলে ভিসা জটিলতায় ভুগতে হয়। এই একবিংশ শতকে এসেও দুই বাংলার মানুষকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে। তবুও ১৬ই ডিসেম্বর যখন আসে তখন পৃথিবীর সকল প্রান্তের বাঙ্গালীর মনকেই বিজয়ের আনন্দ মাতিয়ে তোলে সমানভাবে।

৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার মানূষের যে স্বাধিকার, সাংস্কৃতিক এবং স্বাধীনতার জন্যে লড়াই শুরু হয়েছিলো ১৯৭১ এর ষোলই ডিসেম্বর এসে এক নদী রক্তের বিনিময়ে সেই লড়াইয়ের বিজয় বাঙ্গালী দেখেছিলো। এই বিজয় কোন দানপত্র নয়, এই বিজয় কোন চুক্তির বিনিময়ে নয় বা কারো অনুদানেও অর্জিত ছিলো না।

নবাব সিরাজদ্দৌলা যেদিন পলাশীর প্রান্তরে মিরজাফরের বেইমানীতে বাংলার স্বাধীনতাকে হারিয়েছিলেন সেদিন যুদ্ধ হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু তাতে ছিলো না জনগনের কোন অংশগ্রহন। ছিলো না স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার কোন প্রতিরোধ। সেই বাঙ্গালীই ১৯৭১ সালা এসে পৃথিবীর এক হিংস্র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন বাজী রেখে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলো।

বাংলার সিংহ পরুষ সুভাস বোস বলেছিলেন তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা এনে দিবো। কিন্তু সেই স্বাধীনতা আনতে পারেনি বাঙ্গালী। বরঞ্চ সেদিন বাঙ্গালীর দেহকে দ্বিক্ষন্ডিত করে দুই বাংলায় বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো। আর অন্যদিকে সেই বাঙ্গালী ৭১ সালে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় বাঙ্গালী বুক টান করে দাঁড়িয়েছিলো বাঙ্গালার এক অমিত সাহসী নেতার ডাকে। নেতা শুনিয়েছিলেন কবিতা। স্বাধীনতার এক অমর কাব্য কথা পাঠ করেছিলেন সেই হাযার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। সেই অমর কাব্যের টানে প্রাণ দিতে কুন্ঠিত হয় নাই ত্রিশ লাখ বাঙ্গালী, নিজের সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে এদেশকে শত্রু মুক্ত করেছিলো এদেশের দামা্ল ছেলে মেয়ে।

বাঙ্গালী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় এনিছিলো। সেই বিজয়ের পথ ধরে বাঙ্গালী এগিয়ে চলার পথে হাঁটা শুরু করার প্রারম্ভেই হারিয়েছিল জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কিছু সামরিক কর্মকর্তার হাতে সেই পরাজিত শক্তির যোগসাজশে। আবার শুরু হয়েছিল পিছনের দিকে পথ চলা। পরাজিত শক্তি আবার এই দেশকে পাকিস্তানের অনুকরনে তৈরী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলো। সেই ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছিলো এদেশেরই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনা করা কিছু মানুষও।

স্বাধিনতার মূলমন্ত্রটাকে পিছে ফেলে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে এদেশের মানুষের প্রাণের অর্জন গুলোকে একে একে নষ্ট করে ফেলেছিল সেইসব ক্ষমতা লোভী গোষ্ঠী। সেই পরাজিত শক্তি আজ এদেশের রন্ধে রন্ধে বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়ে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করে ছেড়েছে। স্বাধীনতার মুল অর্জন গুলো আজ প্রশ্নবিদ্ধ। হাযার মুক্তিযোডধা যেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে, তখন এধেশের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ক্ষমতার অংশীদার হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে সবকিছু নিজেদের অনুকুলে নেওয়ার চেষ্টায় বদ্ধপরিকর।

ক্ষমতার লোভে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু গোষ্ঠীও এইসব বেজন্মাদের পাশে দাড়িয়েছে। বিজয়ের আনন্দ আজ ম্লান হতে হতে বিস্মরণের পর্যায়ে। আজ পরাজিতদের দাম্ভিক উচ্চারন এদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিলো। দেশের অভ্যন্তরে বাঙ্গালী যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতার মসনদে বসে জাতীয় পতাকার অবমাননা করে আসছিলো গত ৪০ বছর ধরে।

বাঙ্গালী ১৬ই বিজয় কে দেখেছে, পালনও করে আসছিলো কিন্তু ছিলো না আন্নদের উচ্ছলতা। ছিলো না বিজয়ের সেই মাহেন্দ্র ক্ষনের স্মৃতি। জাতীর পতাকা খামচে ধরে রাখা পরাজিত শকুনদের আস্ফালনে বাঙ্গালী জাতি নিরবে নিভৃতেই পালন করতো বিজয়ের দিনটি।

আজ ২০১৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের প্রাক্কালে এসে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠতে প্রস্তুত সারা দেশ। এবার ৪ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সুবাদে বাঙ্গালী পুনরায় মনে করতে পারছে এদেশ একদিন স্বাধীন করেছিলো এদেশেরই লাখো লাখো নারী পুরুষ। প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন দেশের মানুষ আবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে স্বাধীনতার জন্য যে আত্মত্যাগ সেটা কখনোই বৃথা যেতে পারে না।

এই বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আরো একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে ধর্ম কে পুজি করে যারাই এদেশকে একটি সন্ত্রাসী রাস্ট্রে পরিনত করার চক্রানত শুরু করেচে তাদেরকেও আমরা পরাজিত করবো এবং ৭১ এর মুল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করবোই। অনেক ষড়যন্ত্র আর বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতি হিসেবে কলঙ্ক মুক্তির পএ এগিয়ে চলেছি ঠিক সেই সময় নানা রকম চক্রান্ত করে আমাবের এই ধেশকে একটি অকার্যকর রাস্ট্রে পরিনত করার পরিকল্পনা চলছে। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য তৈরী করে, ধর্মের নামে অপব্যাখা ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশে বিদেশে আমাদের হেয় করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। হাযার বছরের অসাম্প্রদায়িক জাতিকে সাম্প্রদায়িকতার খোলশে মুড়িয়ে দেওয়ার যে হীন কর্মকাণ্ড চালু করার চেষ্টা চলছে তা প্রতিহত করার সময় এখনোই। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান সকল ধর্মের মানুষ এখানে নিরাপদে, একে অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় হাজার হাজার বছর ধরে ইনযাপন করে আসছে। আজো সেই সহ অবস্থানে ঐতিহ্য কে ধারন করে পথ চলতে চাই। গর্ব করে দুনিয়ার সবার কাছে পরিচিত হতে চাই "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহআর উপরে নাই" এই বিশ্বাসেই বাংলা এবং বাঙ্গালী পথ চলতে চায়। এই সত্য পথে বিজয় আমাদের আসবেই।

কারণ আমরা বিজয়ী জাতি, বিজয় দেখেছি, বিজয় ছাড়া অন্য কিছু আমাদের অভিধানে নেই।