ভালোবাসা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা

কাজী রাশেদ
Published : 16 May 2016, 05:43 PM
Updated : 16 May 2016, 05:43 PM

প্রায় বারো তেরো জন কিশোর দুই জন কিশোর-কিশোরি ঘিরে আনন্দ করছে। সেই আনন্দ প্রকাশে কোন কালিমা নেই, কোন ক্লেদ নেই। নেই হুজুরদের ওয়াজে ব্যবহৃত কোন নোংরা উচ্চারনো। সেই আনন্দ উদ্দামের মাঝেই বৃত্তের মাঝে থাকা কিশোর কিশোরী টিকে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং নির্মল কথাটি প্রকাশ করেছে। ভালোবাসি, ভালোবাসি।

কিশোর-কিশোরি দুইজন দুইজনকে ভালোবাসার আনন্দে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেছে। আর অন্য বন্ধুরা তাদের ঘিরে উল্লাস করেছে। এরা কলেজের কোন করিডোরের চিপাচুপায় যায় নাই। এরা কলেজের শিড়ির নীচে অন্ধকারে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে নি। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ এই তেরো জন ছাত্র-ছাত্রীকে কলেজ থেকে বহিস্কার করেছে।

অপ্রিয় হলেও সত্য আমাদের দেশের প্রায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা নির্মল ভালোবাসতে পারে না। সুযোগ পায় না। লাইব্রেরি অথবা যে কোন লুকায়িত স্থানকেই বেছে নেয় ভালোবাসার জন্যে। সেই লুকোছাপার মধ্যে বেশির ভাগ সৃষ্টি হয় অবৈধ মেলামেশার। অথচ উম্মুক্ত স্থানে যদি এই ভালোবাসার প্রকাশ হতো, যদি নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়া টা নিজেরাই প্রকাশ্যে করতে পারতো তবে ভালোবাসায় ক্লেদাক্ত থাকতো না।

ঢাকা কমার্স কলেজ কর্তৃপক্ষ এই তেরোজন ছাত্র-ছাত্রীকে বহিস্কার করে অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের লুকিয়ে চুড়িয়ে অপরাধ করার ব্যাপারে উতসাহিত করে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ শীক্ষার্থীদের আবারো বলে দিলো নির্মল পবিত্র ভালোবাসার জায়গা বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশ অপরাধ প্রবন ভালোবাসাকে উতসাহ দেয়। পবিত্র ভালোবাসা এখানে অপরাধ।কমার্স কলেজের সেই ভিডিও টি দেখে আনন্দে, ভালোলাগায় আমার চোখে পানি এসেছে। অন্যদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত শুনে মনে হয়েছে বহিস্কারাদেশ অই ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নয়, ওই বহিস্কারাদেশ বাংলাদেশের সকল নির্মল ভালোবাসা বাসি দের জন্যে। এদেশ পবিত্র ভালোবাসার জন্য নয়, এদেশ লুচ্চা, বদমাইশ আর লুকিয়ে চুড়িয়ে ভন্ডামির জন্য।

এরই মাঝে ঘটে গেলো ইতিহাসের আরেক জঘন্য অধ্যায়। নারায়নগঞ্জের এক প্রভাবশালি পরিবারের সদস্য জাতীয় সংসদের সদস্য এক প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন। কি তার অপরাধ, প্রথমতঃ তিনি একজন সংখ্যালঘু, তার অপরাধ তিনি নাকি ছাত্রকে শাসন করার সময় সেই ছাত্রের ধর্মের উপর আঘাত করে মারতে উদ্ধত হয়েছিলেন। এম, পি সাহেব এসে সেই অন্যায়ের বিচার করেছেন। তিনি কথিত জনতার হাত থেকে বাচানোর জন্যে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করিয়ে জনতার রোষ থেকে বাচিয়েছেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত সেই এমপি সাহেবকে শিক্ষাপদক এবং পুলিশ পদক দেওয়া।

কমার্স কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্মল  ভালোবাসার বিরুদ্ধে অবস্থান এবং এমপি মহোদয়ের এক প্রধান শিক্ষককে (সংখ্যালঘু) ধর্ম রক্ষার নামে কান ধরে উঠবস করানোর মধ্যে একটি যোগসুত্র দেখলে কি খুব অন্যায় হবে? আওয়ামী লীগের ওলামা লীগ তৈরীর মাজেজা কি এর মধ্যে নিহিত আছে ?