শিশুপর্নো ও বুড়ো গ্রিসামের ভিমরতি আর আমাদের যত ভয়ভীতি

কাজী শহীদ শওকত
Published : 28 Oct 2014, 06:56 PM
Updated : 28 Oct 2014, 06:56 PM

শিশু পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের জিরো টলারেন্সের শিকার হয়ে কারাগারে আটক এমন অনেক বয়ষ্ক নাগরিক আছেন যাদের কেউ জীবনে কোনো শিশুর সাথে যৌন অপরাধ করেননি। এদের অপরাধ ছিলো অনলাইনে শিশুপর্নো দেখা। এদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েই 'শিশুপর্ন দেখা মানেই কোনো অপরাধ করা নয়'—এরকমটি বলে বসলেন ৫৯ বছর বয়ষ্ক মার্কিন বেস্ট সেলার লেখক জন গ্রিসাম।

সপ্তাহ দুয়েক আগের কথা। ব্রিটিস দৈনিক 'দ্য টেলিগ্রাফ'কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মার্কিন আইনজীবি, রাজনীতিবিদ এবং লেখক জন গ্রিসাম শিশুপর্নের অনলাইন দর্শকদেরকে শাস্তি দেয়া সঙ্গত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। কারাবন্দীদের 

সংখ্যার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাঁর দেশের বিচারিক ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। জনপ্রিয় এই রোমাঞ্চ উপন্যাসিক, মোট পঁচিশ বছরের কেরিয়ারে যার অনেকগুলো বেস্ট সেলার সহ প্রায় তিনশোটি বই বাজারে এসেছে, ওই সাক্ষাতকারে বলেছেন, "আমেরিকার বিচারকদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। … আমার মতো বয়ষ্ক বহু মানুষ আজ কারাগারে পড়ে আছে। ষাটের ঘরে পা দেয়া এই মানুষগুলো কারাগারে, অথচ এদের অনেকে কখনোই কারও কোনো ক্ষতি করেনি, কখনো একটা শিশুকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি। কিন্তু তারা কোনো এক রাতে নেট সার্ফিং করার সময়, হয়তোবা অতিরিক্ত মদপানের প্রভাবে অথবা অন্য কোনো কারণে  কোনো ভুল বাটনে ক্লিক করে অল্প বয়ষ্কদের নিয়ে তৈরী কিছু পর্ন দেখেছিলো।" সর্বোচ্চ উপার্জনকারী লেখকদের অন্যতম এই আইনী রহস্যোপন্যাসিক তার এক বন্ধু কিভাবে শিশুপর্ন দেখার দায়ে কানাডার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলো তার স্মৃতিচারণ করেছেন ওই সাক্ষাতকারে।

বন্ধুর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তিনি বলেন, "ল' স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ও আমার ভালো বন্ধু। অতিমাত্রায় মদ খাওয়ার কারণে ওর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিলোনা আর ওই অবস্থায় ও একটা ওয়েব সাইটে গিয়েছিলো, যাতে লেখা ছিলো, 'sixteen year old wannabee hookers বা ওরকমই কিছু একটা। '১৬ বছরের মেয়েরা' শীর্ষক অংশ থেকে ওই বন্ধুটি কিছু দৃশ্য ডাউনলোড করে নিয়েছিলো—যেখানে ১৬ বছরের মেয়েগুলোকে তিরিশ বছর বয়ষ্ক দেখাচ্ছিলো। এটা করা তার উচিৎ হয়নি। বোকার মতো কাজ; কিন্তু ওটাতে ১০ বছরের ছেলেরা ছিলোনা, ও কিছু ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখলোনা, অথচ এক সপ্তা পরে ওর ঘরের দরজায় করাঘাতঃ এফবিআই! পুলিশের চোখে ও হয়ে গেলো 'সেক্স অফেন্ডার'। ওকে ধরে নিয়ে গেলো এবং এরপর দেয়া হলো তিন বছরের জেল। এরকম কারাবন্দী বা তাদের ভাষায় 'সেক্স অফেন্ডার'-এর  সংখ্যা এখন অনেক, যাদেরকে একই কারাগারে রাখা হয়েছে, যেনো তারা একদল লম্পটঃ যাদের সংখ্যা হাজার হাজার।

এধরণের শাস্তি প্রদানের ঘটনায় আমরা সত্যিই ক্ষুব্ধ।" শিশু পর্ন দেখার কারণেই পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরণের ছবি তৈরির প্রবণতা তৈরি হয়—এই যুক্তির ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, "শাস্তি দেয়ার বিদ্যমান পলিসি সত্যিকারের সেক্স এবিউজার তথা যৌন নির্যাতক এবং যারা ভুলবশত বা অন্য কোন কারণে যৌনতার দৃশ্য ডাউনলোড করে—এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "সত্যিকারের paedophile (শিশুদের সাথে যৌনতায় আগ্রহী বা আসক্ত ব্যক্তি) যারা তাদের প্রতি আমার কোনো অনুকম্পা নেই। তাদেরকে জেলে পুরে রাখা হোক। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা শাস্তি পাওয়ার মতো অপরাধী না হয়েও কারাবন্দী আছেন।" প্রসঙ্গত, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারে আটককৃতদের সংখ্যা প্রায় ২.২ মিলিয়ন অর্থাৎ গড়ে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যার ৭৫০ জনেরও বেশি কারাবন্দী—যা দেশটিকে বিশ্বের সর্বাধিক কারাদণ্ড প্রদানকারী দেশে পরিণত করেছে। সেই তুলনায় ব্রিটেনে এই আনুপাতিক হার অনেক কমঃ প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় ১৫৪ জন।

টেলিগ্রাফ-এ দেয়া তাঁর বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পরই পুরো মার্কিন মুলুকজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। মানবাধিকার ও শিশু অধিকার সংস্থাগুলো তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তাঁর এই কথার তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। পরে অবশ্য তিনি তাঁর এসব বক্তব্য/মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে এটা তো ঠিক যে, সমগ্র ব্যাপারটিতে মার্কিন 'বুইড়্যাদের ভিমরতি'র একটা চরম চিত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

শিশুপর্ন দেখা কোনো অপরাধ নয়—এরকম একটা বিশ্বাসকে গ্রিসাম তাঁর মতো করে যৌক্তিক ভিত দেওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। তাঁর নিজেরও এ ধরণের পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি থাকলে থাকতে পারে, সেটা আমরা জানিনা, তবে এটা স্পষ্ট যে, তিনি অনলাইনে শিশুপর্ন দেখার সাথে শিশুপর্ন তৈরি এবং শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনের সরাসরি সম্পর্কটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো পণ্যের চাহিদা যখন বাড়ে, তখন বাজার বড়ো না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। বিশ্বজুড়ে শিশুপর্নের গ্রাহকদের বড়ো একটা অংশ হলো বয়সে প্রবীণ। এদিকে মার্কিন সেনসাস ব্যুরোর পপুলেসন প্রজেকসন ব্র্যাঞ্চ-এর তথ্যানুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটির ৬৫ বা তারচে' বেশি বয়সী জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৩.৭ মিলিয়নে, যা হবে বর্তমান সময়ে এ বয়সীদের মোট সংখ্যার প্রায় দ্বিগুন। ব্যুরোর এই ব্র্যাঞ্চ থেকে এও জানা গেছে যে, ২০৩০-এ উক্ত বয়সী নাগরিকদের সংখ্যা হবে মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ। সুতরাং শিশুপর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনের শক্ত অবস্থানের যৌক্তিকতা সহজেই অনুমেয়।

উন্নত বিশ্বের এই ভয়ানক যৌনবিলাস নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা থাকতোনা যদি এর কোনো প্রভাব আমাদের উপর না পড়তো। সত্যি ব্যাপারটি হলো, এ ধরণের পর্নোগ্রাফির ক্রেতাদের চাহিদার যোগান দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ এবং আশেপাশের কয়েকটি দেশ থেকে, যেখানে জনগণের একটা বিপুল অংশ বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে। অর্থের প্রলোভনে

এসব শিশুদেরকে বিভিন্ন  ধনী দেশ থেকে আসা সেক্স টুরিস্টদের (যৌন পর্যটক) বিকৃত যৌনাচারের খোরাক বানানো হচ্ছে –এটা নতুন কোনো খবর নয়। এ নিয়ে বছর চারেক আগেই 'রিডার্স ডাইজেস্ট'-এ একটা লেখা পড়েছিলাম। পৃথিবীর নানা অঞ্চলের এসব বিচিত্র যৌনাচারীরা বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল এবং আরও অনেক দেশে পর্যটনে আসে মূলত অল্পবয়সী মেয়েদের সাথে যৌনতা উপভোগের জন্য। এরাই হলো তথাকথিত সেক্স টুরিস্ট, যারা সাধারণত হোটেল-ভিত্তিক দালালদের মাধ্যমে এই জঘন্য সেবা উপভোগ করে। তবে এটি নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপুর্ণ, এবং সময়, সুযোগ ও শ্রম সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরণের টুরিস্টদের সংখ্যা খুব বেশি বেড়ে গেছে সেরকমটি মনে হয়না। তারচে' বরং এধরণের শিশুদের অংশগ্রহণে চিত্রায়িত পর্নো ভিডিও দেখে রুচি চরিতার্থ করাতে নিরাপদ বোধ করে বেশিরভাগ পিডোফাইল। আর এদের চাহিদা মেটাতেই তৎপর রয়েছে দেশী-বিদেশী নানা চক্র। দ্রুত প্রচুর অর্থ আসে এতে, যেমনটি ড্রাগ-ডিলিং-এর মাধ্যমে সম্ভব। বাংলাদেশেও এ ধরণের শিশুদেরকে দিয়ে এসব পর্নো তৈরি হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। মাস তিনেক আগে ঢাকা থেকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় দেশের সুপরিচিত এক শিশু সাহিত্যিকের গ্রেফতারের ঘটনায় শিশুপর্নো ব্যবসায়িদের তৎপরতার ভয়াল চিত্রটি সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠে। শিশুদেরকে যৌন হয়রানি করার বিচ্ছিন্ন ঘটনাসমূহ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পর্নো সরবরাহকারী এক দুষ্টচক্রের জঘন্য অপরাধের এই খবর সবাইকে স্তম্ভিত করে দেয়। খবরটি বেশিদিনের নয়, তবু পাঠকের সুবিধার্থে 'দ্য ডেইলি স্টার' থেকে এর বাংলা করে দেয়া হলোঃ

"…গত ১২ জুন ছিন্নমূল শিশুদের দিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তা বিক্রির অভিযোগে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার হন টিপু কিবরিয়া নামে এক শিশু সাহিত্যিক। এরপর থেকেই ইন্টারপোলের এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম বলেন, 'এরই মধ্যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, বেলজিয়াম ও ফিলিপাইন এই ৮টি দেশের ১৩ জন ক্রেতা ও ডিলারকে শনাক্ত করেছি। যারা বাংলাদেশ থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে।'

গ্রেফতারকৃত টিপু কিবরিয়া বাহিনী এবং বিদেশি ক্রেতাদের সম্পর্কে শাহ আলম বলেন, 'এর মধ্য দিয়ে তারা পর্নোগ্রাফির আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। আর সবচেয়ে বিরক্তির ব্যাপার হচ্ছে যে, তারা এ ধরনের আরো নতুন নতুন ছবি ও ভিডিও ক্লিপ চাচ্ছে।' পর্নোগ্রাফির জন্য টিপুকে প্রত্যেক সপ্তাহে একজন/দুজন নতুন শিশু সরবরাহ করতে হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে টিপু এই ব্যবসা শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি প্রায় ৫০০ শিশুকে এই কাজে ব্যবহার করেছেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টিপু এই কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে কিভাবে তার সহযোগী নূরুল আমিন ও নূরুল ইসলাম শিশুদেরকে পটাতো সে বর্ণনাও দিয়েছেন।তিনি বলেন, টিপুর

সহযোগীরা ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টার্গেট করতো। তারা ওই শিশুদেরকে চাকরির প্রলোভন দিতো। এরপর তাদেরকে দিয়ে শর্ট-ফিল্ম করতো। ছবি তুলতো, যেগুলোতে টিপু নিজেও অভিনয় করতো। সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এসব ভিডিও ক্লিপ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশি ক্রেতাদের পাঠিয়ে দিতো। এর বিনিময়ে তিনি টাকা পেতেন। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও তার আরেক সহযোগী শাহরুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে তিনি এই টাকা উঠাতেন। তিনি বলেন, টিপু এই কাজের জন্য প্রত্যেক শিশুকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে দিতো। আর এসব শিশু যেহেতু খুবই গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা তাই তারা এ ব্যাপারে কখনো কারো কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তিনি আরো বলেন, টিপুকে এক শিশুসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ওই শিশু প্রথমে তাকে পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে। যদিও তার মেডিকেল প্রতিবেদন বলছিলো তাকে সে কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই শিশুই আবার পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছে।"

ইন্টারপোল আমাদের ঘুম ভাঙিয়েছিলো; না হলে এই জ্ঞানপাপী পিশাচের রুচি-বিকৃতি আর অর্থলোভে আরও কতো দরিদ্র, অসহায় শিশুর জীবনে নেমে আসতো অন্ধকার, কে জানে? তা না জানলেও অন্ধকার যে দূর হয়েছে, এমন ভাবা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা। ২০০৯ সালে প্রকাশিত বেসরকারি সংস্থা 'মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন"-এর এক সমীক্ষায়

(সূত্রঃ আগস্ট ২১, ২০০৯ এর 'দ্য ডেইলি স্টার') দেখা গেছে, ১৬ বছরের নিচে যেসব মেয়েদেরকে যৌন ব্যবসায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে তাদের ৮০ ভাগই এ কাজ করেছে হয় দারিদ্র্য বা প্রতারনার কবলে পড়ে, নয়তো  ফাঁদে পড়ে বা নির্যাতনের শিকার হয়ে। এদের মধ্যে স্কুলেপড়া শিশুরাও রয়েছে। সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন উপায়ে এরা পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হচ্ছে আর এদের মধ্যে বেশিরভাগই এ কাজে লিপ্ত হচ্ছে তাদের বন্ধু-বান্ধব, কাজিন, দালাল, বয়ফ্রেন্ড, এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্ররোচনায়। এই জঘন্য ব্যবসায় শিশুদের সম্পৃক্তির জন্য যেসব কারণকে দায়ী করা হয়েছে সেগুলো হলো, আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, নিরক্ষরতা এবং বাবা-মায়ের অজ্ঞতা, পারিবারিক সম্প্রীতির অভাব, প্রচুর টাকার ছড়াছড়ি, সহজ অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা, এবং বিদ্যমান শিশু অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া।

একদিকে ধনী রাষ্ট্রগুলোতে বাসকারী বিকারগ্রস্থ লোকের সংখ্যাবৃদ্ধি আর তাদের উন্মত্ত লালসা, অন্যদিকে আমাদের দেশের কিছু মুখোশপরা দালালের যোগসাজশ, আর এদের মাঝখানে পড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা, দারিদ্র্যপীড়িত, ঝুঁকিপূর্ণ বিরাট সংখ্যক অসহায় পরিবার, যারা সাতে-পাঁচে নেই, যারা জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত হাঁসফাঁস করছে, কোনরকমে ছেলেপুলে নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারলে যাদের আর কিছু চাইনা— তাদের মুক্তির উপায় কী? এদিকে ইন্টারনেটে ইনসেস্ট ছবি-গল্পের ব্যাপক বিস্তার, স্কুলগামী শিশুর হাতে থাকা মোবাইলফোনে পর্নোছবি, সাইবার ক্যাফেতেগুলোর কম্পিউটারে যত্ন করে সংরক্ষিত পর্নের বিপুল সম্ভার— যেখানে শিশু-বুড়ো কারোরই যেতে বাধা নেই। আমরা কি বাঁধা পড়ে যাচ্ছি কোথাও? আমরা কোথায় যাচ্ছি? কোথায় যাবো? ভয় তো কাটেনা, খোদা!…