কাজী শহীদ শওকত
Published : 29 Nov 2015, 06:46 AM
Updated : 29 Nov 2015, 06:46 AM

ভোরে উঠে দরজা খুলতেই ঝাপটা মেরে এক ঝাঁক কুয়াশা ঢুকে পড়তো ঘরে। উঠোন জুড়ে পাতলা অন্ধকারে তখন ঘন হিম। গুঁড়িজলের সাদায় কাতর বাতাস তখন ভেজা ভেজা। আমার হাতে টুথব্রাশ আর গায়ে জাম্পার। কিছুক্ষণ পর সাইকেল নিয়ে স্যারের বাসায় ছুট। দুই কিলো রাস্তার সবটাই সাদা সাদা জলের ঘন পিক্সেলে ভরা। যেতে যেতে চোখের পাঁপড়িতে, ভ্রু-তে আর মাথায় সাদা আস্তর পড়ে যেতো। আর বাতাসে ওরকম উড়ো কুয়াশার মেঘ দেখে দেখে আমার কেবলই হাওয়াই মিঠাইয়ের কথা মনে হতো।

ভোরের চেহারা এখনও ওরকমই। কিন্তু এখন আমার সাইকেল নেই। ওই দুই কিলো কুয়াশার রাস্তায় ছুটবার তাড়া নেই। তবুও খুব সকালে রাস্তায় বা মাঠে এসে দাঁড়ালে বাতাসে নস্টালজিয়া দোলে। আমার কেবলই হাওয়াই মিঠাইয়ের কথা মনে পড়ে।

ফুরফুরে কুয়াশার মেঘ ভেঙে সার্কিট হাউস মাঠে হাঁটি আর মনে মনে হাওয়াই মিঠাই খাই। হাঁটতে হাঁটতে নদের ধারে এসে দেখি আমি একা নই। জায়গাটা এই সাত সকালেও কেমন মুখর! তবে অন্য সময়ে যেমনটা হয়—হৈচৈ, ভিড়—ওরকমটি নেই।   ঠিক ফেইসবুকের মতোই। নেই নেই, তবু কতো আছে! ওয়াট অ্যা প্লিজেন্ট সারপ্রাইজ! এ্যন্ড ওয়াট অ্যা গ্রেইট শরম! এখনও হাওয়াই মিঠাই চাই? আমাদের কারও কারও আগের মতোই উষ-প্রেম আছে। যেরকম করে দেশপ্রেম থাকে। কিন্তু, আমাদের লজ্জা নাই। আমরা প্রক্সি দিয়া ফেইসবুক চালাই। আমাদের বুদ্ধি নাই। তাই শুধু কী লাভ হইলো আর কী ক্ষতি হইতো কইয়া চিল্লাই। বুদ্ধিমান হইতে গেলে খালি হাওয়াই মিঠাই খেলে হয়না। চোখ বন্ধ করে সম্ভাব্য ক্ষতি দেখতে হয়।  হয় হয়ও করতে হয়।

সূর্যটা ঠিকই উঠে সময়মতো। কুয়াশায় দেখা দায়। আমি দূরে দিগন্তে তাকিয়ে থাকি। একটু পরেই গাছ-পালার ফাঁক গলে সূর্যটাকে দেখা যায়। নরম একটা সূর্য। কোনো হাওয়াই মিঠাই নেই আর আশপাশে।