কৈ মাছের মতো এরাও ডাঙায় অনেক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে, পানির সংস্পর্শ ছাড়াই। এর কারণটি হলো এদের শ্বসন প্রক্রিয়ার বিশেষত্ব। সাধারণত জলজ প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়া জলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এদের অতিরিক্ত শ্বসন ব্যবস্থা (ancillary respiratory mechanism) থাকায় এরা ডাঙায় বাতাস থেকেও অক্সিজেন নিতে পারে। ফলে কৈ মাছের মতো এগুলোকেও জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। দৈর্ঘ্যে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার কি পাঁচ সেন্টিমিটার। এরা স্বভাবে লাজুক এবং পলায়নপর, অস্থির। গা পিচ্ছিল। হাতে রাখা মুশকিল। আঙুলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। তাই কুটতেও খুব ঝামেলা, যদি হাতের কাছে ছাই না থাকে। অনেক সময় চুলোয় দেয়ার পরও এদের নড়াচড়া চলতে থাকে। গায়ের রঙ দেখতেই পাচ্ছেন, বেশ চমৎকার। এদের দেখে আপনার বৌ মাছ, মানে বলতে চাচ্ছি যে, এদেরকে দেখে 'বৌ মাছ' নামক আরেকটি মাছের কথা আপনার মনে পড়ে যেতে পারে। বৌ মাছ এদেরই জ্ঞাতিগোষ্ঠি। এরা শুধু চেহারাতেই অনন্য– তা নয়, খেতেও অসাধারণ; বিশেষত পেঁয়াজ নিয়ে ভূনা। হালকা গ্রেভিও করা যেতে পারে। কিন্তু ইচ্ছে হলেই পেয়ে যাবেন বাজারে গিয়ে, এমনটি আর হবার নয়। এরা এখন নির্ব্বংশ হওয়ার পথে।
.
এরা নিঃসঙ্গ হলে ঝিম মেরে থাকতে পারে— এক্সট্রোভার্টেড স্বভাবের না হলে যা হয় আর কি। ভীষণ বিপন্ন এই মাছটির ইংরেজি নাম Annandale loach; মাৎস বিজ্ঞানীরা Lepidocephalichthys annandalei বলে আরাম পান। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। ময়মনসিংহে আমরা বলি গুতুম। শেরপুরে বইট্টা। জামালপুরে গতা। ঢাকায় গতি। কুমিল্লায় বাতরঙ্গি। কোথায় যেনো একে বালিশ মাছ নামেও ডাকা হয়। এছাড়াও আরও কতো নাম আছে কে জানে? মুখপঞ্জির বন্ধু ডা. হিরন্ময় বিশ্বাস জানালেন, "গুতিয়া মাছ, গ্রাম- লড়া, ডাক- সাচিয়া, নাজিরপুর, পিরোজপুর। খুব স্বাদ, ছোট বেলায় যারা বিছানায় প্রস্রাব করত, তাদেরকে এই মাছ ভাজা, ঘরের ভিতর থেকে বেড়ার ফুটা দিয়া খাওয়াত।" বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, পাকিস্তান, ভারতে এই মাছ দেখতে পাওয়া যায়। কদিন পর আর কোথাও দেখা যাবে না, এটি প্রায় নিশ্চিত।
১) চাহিদা সব সময় বেশি বলে এর মূল্য তুলনামূলকভাবে সব সময় বেশি থাকে।
২) বিরূপ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং মৃত্যুর হার খুবই কম।
৩) অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
৪) ছোট পুকুর বা খাঁচায় চাষ করা সম্ভব।
৫) তুলনামুলকভাবে অল্প সময়ে অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য হয়।
৬) অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বৎসরে একাধিকবার চাষ করা যায়।
৭) রোগবালাই নেই বললেই চলে।
৮) তুলনামূলক অল্প পুঁজিতেই চাষ করা সম্ভব।
.
উপরের আটটি সুবিধা কৈ চাষের। হাইব্রিড প্রযুক্তি কৈ মাছের বাণিজ্যিক ভায়াবিলিটি নিশ্চিত করেছে। বিলুপ্তপ্রায় এ মাছটিকেও কোনোভাবে যদি বাঁচানো যেতো!
.
ছবিঃ অন্য কারও তোলা নয়।