একজন সাংবাদিকের মৃত্যু এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সাংবাদিকতা

সীমান্ত খোকন
Published : 15 Nov 2016, 03:36 PM
Updated : 15 Nov 2016, 03:36 PM

আমরা সবাই জানি সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। অনেকে হয়ত একটু-আধটু এটাও জানি যে, মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের মধ্যে সবসময় কোন্দল, গ্রুপিং, হানাহানি বা প্রতিহিংসার ব্যাপারটি খুব বেশিই কাজ করে। মফস্বলের সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এমন নজিরও আছে যেখানে এক সংঘঠনের সাংবাদিকদের সাথে আরেকটি সংঘঠনের সাংবাদিকদের হাতাহাতিও হয়েছে। সাংবাদিকরা হলো জাতির বিবেক। কিন্তু এই বিবেক যদি আবেগতারিত বা প্রতিহিংসার বসে এই সমস্ত কান্ড করেন তাহলে জাতি যাবে কোথায়? ২/৩ দিন আগের এক ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরাও বুঝিয়ে দিলো যে, এরাও কোন্দল, গ্রুপিং, হানাহানি বা প্রতিহিংসার বাইরে নয়। গত ২৭ জুন ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এক সাংবাদিকসহ ৩ শ্রমিক নেতা নিহত হন। কিন্তু একমাত্র প্রিয়.কম ও ডেইলি অবজারভার ছাড়া কোন জাতীয় পত্রিকা,অনলাইন পত্রিকা বা টিভিতে সেই সাংবাদিককে সাংবাদিক বলা হয়নি। শুধু জাতীয় কেন, স্থানীয় সবকয়টি পত্রিকাও একই কান্ড করেছে। ঘটনা কি?

সবাই শিরোনাম করেছে এই জাতীয়, 'সড়ক দূর্ঘটনায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত' বা 'তিন ট্যাংকলরী শ্রমিক নেতা নিহত'। অথচ নিহত আজম রাজু ছিলেন একজন সক্রিয় সাংবাদিক। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার প্রায় সব সাংবাদিকদের সাথেই ছিল তার ভালো সম্পর্ক। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে মাঠে রয়েছেন সবসময়। নিহত সাংবাদিক আজম রাজু সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছিলেন জেলা ট্যাংক লরী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সাংবাদিকতাই ছিল তার মূল পেশা। তিনি ছিলেন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পাদিত নিরাপদ নিউজ.কমের ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি। এছাড়াও তিনি ছিলেন পাখিপ্রেমি একজন মানুষ। সখের বসেই তিনি নিজের পকেটের হাজার হাজার টাকা খরচ করে তার গ্রামের প্রতিটি গাছে কলস বেদে দিয়েছিলেন পাখিদের জন্য। এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছিল 'নিরাপদ পাখির আশ্রয় কেন্দ্র'। লক্ষ করেছি, তার অকাল মৃত্যুতে ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরের প্রায় সকল স্তরের মানুষের মনে শোকের ছায়া নেমে আসলেও শোক দরেনি শুধু সাংবাদিকদের মনে। সাংবাদিক আজম রাজু সহ তিন জন নিহতের পিছনে ছিল পুলিশেস দোষ। সেই দোষে ২ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারও করা হয়েছে। এখন কথা হলো, একজন সাংবাদিকের এমন নিশৃংস মৃত্যুর পরও তার পক্ষে অন্য সাংবাদিকরা দোষীদের বিরুদ্ধে বিচার দাবী করতে পারতো। কিন্ত হলো উল্টো। বিচার দাবীতো দূরের কথা  অন্য সাংবাদিকরা তাদের পত্রিকায় বা টিভিতে 'সাংবাদিক নিহত' শব্দটি ব্যাবহারেও ছিল চরম কার্পন্য। তারা লিখেছে, 'তিন ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক নেতা নিহত'। অর্থাৎ নিহত আজম রাজু সাংবাদিক ছিলেন না। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সাংবাদিক জগতে এতটাই হিংসা ভর করেছে যে, একজন প্রকৃত সাংবাদিককে জীবিত থাকতে যেমন সাংবাদিক ভাবতে কষ্ট হয়, আবার একজন সাংবাদিক মরে যাওয়ার পরও তাকে তাকে সাংবাদিক বলে সম্মানিত করতে কষ্ট হয় কিছু সাংবাদিকের। তাদের ভাবখানা এমন যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক শুধু তারা গুটি কয়েকজনই। ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় তারাই সাংবাদিক হিসেবে ছিল, আছে ও থাকবে। এখানে অন্য কারো স্থান নেই। তারা যে এমন নিকৃষ্ট মন মানষিকতা পোষন করে তার আরেকটি বড় উদাহরন পাওয়া যাবে ব্রাহ্মনবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের তালিকা ঘাটলে। সেই তালিকায় দেখা যাবে, দেশের বাঘা বাঘা পত্রিকা বা বাঘা বাঘা টিভির সাংবাদিকদের নাম নেই। অথচ এমন কিছু সদস্য আছে যাদের পত্রিকার নাম কেউ জীবনেও শুনেনি অথবা কারো কোন পত্রিকাই নেই।