উপনিবেশিক শাসনামালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে জমিদার নামের একটি পা-চাটা শ্রেণী তৈরি করে। চিরস্থায় বন্দোবস্ত ও নীল চাষের কারনে উদ্ভব হয় ভূমিহীন কৃষক শ্রেণীর। আর জমিদারদের পা-চেটে আর একটা শ্রেণী মধ্যবিত্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়। (তথ্য সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সময়)
বৃটিশরা তাদের পা-চাটা শ্রেণীর (ওই শ্রেণী এখনও বিদ্যমান) হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাওয়ার পর প্রত্যঞ্চ গ্রামাঞ্চল গুলোতে জমিদারদের আর্শীবাদপুষ্ট সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের অনেকেই গরীব শোষণের জন্য মহাজন হিসেবে আবির্ভূত হন। মহাজনেরা ঋন দিয়ে দরিদ্রদের শোষণ করতে থাকেন। মহাজনেরা কি গরীব কৃষকদের লাখ লাখ টাকা ঋণ দিতেন ? নিশ্চয়ই নয়। তারা যে ঋণ দিতেন সেটা ছিল ক্ষুদ্র ঋণ। ক্ষুদ্র ঋণের উৎপত্তি মহাজনদের হাত ধরে।
এর মানে দাঁড়ালো ক্ষুদ্র ঋণের ফর্মুলা ইউনূসের কোনো স্বতন্ত্র ধারণা নয়। ড. ইউনূস মহাজনদের ওই ধারণারই প্রাতিষ্ঠানিক ও তাত্ত্বিক রুপ দিয়েছেন মাত্র। মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। কাজেই ড. ইউনূসের আগে গ্রামের সব সুদখোর মহাজনদের সম্মিলিতভাবে একটা নোবেল দেওয়া কি উচিত ছিল না? কিন্তু মহাজনেরা নোবেল পাননি। কারন তারা অশিক্ষিত। ইংরেজী বিদ্যে জানেন না। তাদের ক্ষুদ্র ঋণ ফর্মূলাকে তাত্ত্বিক রুপ দেওয়ার ক্ষমতাও তাদের ছিল না। ব্রিটিশদের আর্শীবাদ তাদের ওপর বর্ষিত হয় নি। হিলারি ক্লিনটনের (অ্যাংলো স্যাক্সন, ওই একই জাত) সঙ্গে তাদের কোনো বন্ধুত্ব নেই। নোবেল পাওয়ার লাইন লবিং ও তারা জানেন না। কিন্তু আমরা বাঙ্গা্লীরা তো বিষয়টা জানি। কাজেই ইউনূসকে সম্মান দেওয়ার আগে আসুন আমরা প্রয়াত ও বর্তমানে যাদের অস্তিত্ব নিভু নিভু সেই সুদখোর মহাজনদের প্রতি একটু সম্মান জানাই। যাদের বাস্তব কর্মকাণ্ডের তাত্ত্বিক রুপ দিয়ে আমাদের ইউনূস বিরাট! অর্জন করেছেন।
পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বড় পুঁজির কাছে ছোট পুঁজি সব সময় মার খায়। গ্রামীণ ব্যাংক আসার পর ক্ষুদ্র পুঁজির মহাজনদের ব্যবসা লাটে ওঠে। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের অনুসরণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাখ লাখ এনজিও গজিয়ে উঠেছে যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে মহাজনদের ব্যবসা মেরে দিয়েছেন। মহাজনদের অস্তিত্ব এখন নিভু নিভু। এখন সুদখোর মহাজনেরা তাদের ব্যবসা মেরে দেওয়ার জন্য নিশ্চয় ইউনূসকে দায়ী করবেন। স্বভাবতই তারা ক্ষিপ্ত হতে পারেন।
এ কারনেই আমার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে, ড. ইউনূসের ওপর কি সুদখোর মহাজনদের অভিশাপ রয়েছে?
ক্ষুদ্র ঋণ ফর্মুলা বিদেশী সাহায্য সংস্থাগুলোর আর্শীবাদ পুষ্ট এনজিওগুলোর ভাবাদর্শের যথার্থ তাবেদারি করতে সক্ষম। এনজিও গুলো মূলত দারিদ্র্যকে জিইয়ে রেখে দারিদ্র্য সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে কাজ করে। ক্ষুদ্র ঋণ কখনোই দারিদ্র্য দূর করার ক্ষমতা রাখে না। বরং দারিদ্র্যকে জিইয়ে রাখে। বা দরিদ্রকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদেরকে দেয়ালে পিঠ ঠেকতে দেয় না। কারন তাতে বিদ্রোহের আশঙ্কা থাকে। দরিদ্রকে বাঁচিয়ে না রাখলে শোষণ করবে কাকে?। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে লাখ লাখ এনজিও গজিয়ে উঠেছে। এতদিনে দারিদ্র্য দূর হওয়ার কথা ছিল।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আওয়ামী লীগের প্রতি দরদ থেকে আমার এ লেখা নয়। কিছু দ্বিপদ বিশিষ্ট মাদি ছাগল ব্লগারকে দেখতে পাচ্ছি, যারা আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করার জন্য ইউনূসের পক্ষ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করার কি আর কোনো ইস্যু নেই? বিএনপির লোকজন ইউনূসকে শহীদ জিয়ার সৈনিক বানিয়েছেন। ইউনূসকে যারা আমাদের ফালতু রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন সেইসব দুধ-আবাল ব্লগারদের এখানে মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি।
এবং পরিশেষে প্রাসাঙ্গিক কিছু লিঙ্ক কপি পেস্ট মেরে দিলাম।