আমার প্রেমিকা ও অন্যান্য কবিতা

কামরুল হাসানকামরুল হাসান
Published : 22 Dec 2013, 01:11 PM
Updated : 22 Dec 2013, 01:11 PM

আমার প্রেমিকা

আমার প্রেমিকা এই সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ট রয়েছে
কখনো কাছে এসেছিল ভেবে খুব মনোবেদনায়
নিজেকে ধিক্কার দেয়, স্নানঘরে ভিজে বারবার
আর স্বগত বলে, গতজন্মে ঘটেছিল ওইসব পাপ
এখনো পাপের মূর্তি রয়ে গেছে, দূরবার্তা ছোঁড়ে
জীবন্ত পথে-পথে ঘোরে স্মৃতি, ছবি, চিঠির অক্ষর।
সে সব বিলোয় যদি, বৃক্ষদের সবুজ ফটোকপিয়ারে
কেবল ছাপাতে থাকে, ছেড়ে আসে দূর পোস্টাপিসে
কিংবা কাহিনী সব সবিস্তারে মুদ্রিত করে পত্রিকায়
দুহিতা হচ্ছে বড়, যদি জেনে যায়, আড়ষ্ট হয়ে
থাকে খুব স্বামীর সমুখে, দর্পণে তাকাতে ভয়
যদি প্রাসাদে ঝিমুনি ধরে, লৌহবাসরে ঢুকে পড়ে সাপ
তবে তো উদ্যান ছেড়ে ভাসতে হবে গাঙুরের জলে
ভাবে সে আপদ সরে গেলে শান্তি পাবে খুব, একদা
বলেছিল, 'দীর্ঘায়ু হও'; আজ প্রাণপন মৃত্যু যাঞ্চা করে।

প্রেম ও জীবন

কী এক ঝট্কায় বুড়ো হয়ে গেলাম,
ভাবি কখন যে যুবক ছিলাম;
কখন পদ্মপাতার মত চোখ তুলে দেখতো যুবতীরা
সে কোন যুগে, তাপবাহে, সে কোন বরফঅঞ্চলে?

পিপড়ের মূহূর্তগুলো যদি পাওয়া যেত
পতঙ্গের পাখার কম্পন
একেকটি মুহূর্ত হত কয়েকটি যুগের সমান।
তোমাকে যে ভালবাসি–সে তো এক শতাব্দীর গান!

শতাব্দী শতাব্দী জুড়ে পুড়ে পুড়ে মরি;
ভাবি এ সহস্রাব্দে পাব না তাকে, পাব অন্য কোন আধাঁর খিলানে।
যদি সে গ্রহের নয়, নক্ষত্রের বিন্দু কিছু হবে;
অপার মুহূর্তসব ডানার ফোটনকণারূপে পাড়ি দেব নক্ষত্রপরিধি!

আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে তবেই তো ভিড়ি ঐ উপল বন্দরে
আমার আলোকযান উচাটন অন্ধকার পাড়ি দিতে থাকে।

কথামৃতে চিরসুধাময়

যেটুকু অভিজ্ঞান কবিকে দেবে সেটুকুই রয়ে যাবে
কথামৃতে চিরসুধাময়, মাঙ্গলিক ঘটের ঘূর্ণন;
সকল অগ্নিগর্ভ নিয়ে উপুড় হয়েছ
ঐ মেধাশূন্য সুন্দরের দিকে
সে কেবল মীমাংসা দেবে, ফিরিয়ে দেবে না কোন
অপরূপ বর্ণঅভিজ্ঞান!

তোমাকে সচিত্র করে ধ্বনিময় অপূর্ব বাগান
শব্দেছন্দে অভিপ্রায়ে বানিয়ে তুলেছি অবিনশ্বর
ঈশ্বরীর মত রয়ে যাবে শুধু
নশ্বর দেহটি নিয়ে তুমি কবে লুপ্ত হয়ে যাবে।

শ্যামল ও মাঝারী উচ্চতার এই কবিই পারে
ইতিহাসে তুলে দিতে তোমার রূপ, তোমার বর্ণন।

সার্কাসমুখরিত জনপদ

দৃষ্টিনন্দিত কত নারী তাকিয়ে আছে ডগোমগো, ডবকা
তরিৎ লাফিয়ে যাই, উঁচু বাধা পার হই, আমিই সের্গেই বুবকা!
আলোর বাণপ্রস্থ হাসি, তারকার ভ্রু, হতে চাই তারকা
আহা ডগোমগো, কী যে হাসিখুশি, যেন বা মস্ত ঝরোকা!

স্বপ্নে কেবলই ভাসে সফেদ তাদের দীপ্তি, ঊরু ভালবাসি
ভালবাসি টানটান ভ্রুণ
মিহিন বস্ত্রে ঢাকা উঁচু উঁচু শয়নে স্বপনে ভাসা উহাদের রূপ
আসল ও অনধিপ্রতীক
অদ্যাবধি ভেসে চলি উহাদের উঁচু
যখনই নামে জলপ্রপাতের মত, পাগলাঘোড়া নেই পিছু
সে পথে কেবলই ঘুরিফিরি।

স্বপ্নাস্বপ্নের সকল মধ্যযামে এবং বাস্তবে দেখি
ঝলকে ঝলকে কাঁপাল প্রতি পলকে পলকে
কম্পনের মত স্রোতে
এ কী ছন্দ এ যে শুভ্রতা রুদ্রপ্রপাতের
রূপের ঘরে আমি ঘুরিফিরি
তাদের প্রতিটি ঝলকে ছলকে ওঠে রক্ত বুকের
কী যে দ্যুতিময়, কী যে প্রীতিময়, আহা প্রাণময়
প্রাণভোমরার প্রাণ টলে।

প্রেম বা জ্যামিতির কবিতা

শহর এক আশ্চর্য জ্যামিতি;
ত্রিভূজ সম্পর্ক কত গোলাকার পার্কে ঝরে পড়ে।
ঘন হয়ে উঠেছে ঐ দালান ধ্রুপদ
ধূর্তের তীব্র, সুতীব্র পিরামিড
ব্যাসার্ধ ছাড়িয়ে বাড়ে শহর প্রাচীর।

গোলাকার বল হাতে বালকেরা চলেছে সব
আয়তাকার মাঠ লক্ষ্য করে
ঝাঁপায় কাঁপায় ওদের সন্ত্রাস
বালখিল্য চতুষ্কোন ঘিরে বিপুল উল্লাস-ধ্বনি
ত্রিভূজের বিষম বাহুর শেষে সন্নিহিত কোনে।

আনুভূমিক ঐ সরল পথখানি ধরে
পরিবর্তনশীল রাশির মত গাড়ি ছুটে যায়
অভিলম্ব ধরে গেলে নীলাদের বাড়ি
চাঁদখানি ঝুলে আছে ত্রিমাত্রিক ভরে।

সকালে আমি (৪,৮), নীলা ছিল (৬, ৩)-এ
বিকেলে ক্যাফেতে দুজনেই (৫,৫)
স্থানাঙ্কের নিয়ম মেনে কফিতে দিই চুমুক
নীলা চলে গেলে সকল স্থানাঙ্কের মূল্য হয় (০,০)।

নীলাদের পাশের বাড়ির ছাদ তৃতীয় অক্ষ z
আমি যে মাঠে অস্থির হাঁটি তার দুই বাহু x এবং y
দুই মাত্রা থেকে নির্ণিমেষ তাকিয়ে থাকি
তৃতীয় মাত্রার দিকে, নীলা আজ ছাদে ওঠে কি না!