ডেলিনিখ রেজিয়া- এমন ভিনদেশি নামে আমরা ওকে আপন করিনি। মাদাগাস্কারের জঙ্গলে ওকে খুঁজতে যেতে হয়নি আমাদের। আমাদের ইট-কাঠ-পাথরের নগরীর চেনা লোকালয়ে, ব্যস্ত পথে কৃষ্ণচূড়ার লালিমায়, রাধাচূড়ার কমলায়, কনকচূড়ার হলুদে, সোনাইলের গোলাপিতে আমাদের দৃষ্টি কাড়ে সে । বোশেখ শুরু পর থেকেই ঝিরি পাতার কৃষ্ণচূড়া ব্যস্ত হয়ে ওঠে ধূলোবালিতে পাংশু হয়ে আসা নগরীকে সাজিয়ে তুলতে। ওর সাথে হাত মেলায় বেগুনি রাঙা জারুলও। ইংরেজি মাসের এপ্রিলের শেষ থেকে লাল-হলুদ-কমলার আগুনের ফুলকি দেখা দেয় চূড়ায় চূড়ায়। সকালের যাত্রাপথে একবার হলেও আমাদের চোখ চলে যায় এদিকে-সেদিকে। আমরা নড়েচড়ে উঠি, প্রকৃতির সাজসাজ রব দেখার প্রস্তুতিতে। একেবারে বেরসিকও কবি হয়ে ওঠে, অন্তত দৃষ্টিতে কবিতা ভাসে। এমনি অপরূপ কৃষ্ণচূড়া!
গত বছর, কৃষ্ণচূড়ার বাড়াবাড়ি রঙিন ছটা মেখে নিতে একত্রিত হয়েছিল অনেক ব্লগার। কাজের, দায়িত্বের চাপ সবকিছু সামলাতে মনের স্পৃহা জাগাতে হয়। সেই স্পৃহা সিঞ্চনে প্রকৃতির কাছেই ফিরে যায় মানুষ পতঙ্গের মত। আসলেই একটু 'ব্রেক' চাই! একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে চাই! একটু খোশ গল্পে মেতে উঠতে চাই বন্ধু-বান্ধব-পরিচিতজনদের সাথে। কিছু অনর্থক সময় কাটানো, দিনশেষে যেটা অর্থবহ হয়ে উঠবে অনেকের কাছেই। …. তো হয়ে যাক আবার একটা আড্ডা !!!!!!
ব্লগে অনেকেই ভাবেন, ব্লগাররা একত্রিত হলেই বুঝি দেশ-রাজনীতি-কর্মসূচী নিয়ে কাজ করেন। অনেকেই ভাবেন, ব্লগাররা কথা বললেই বুঝি স্লোগান দেন। অনেকেই ভাবেন, ব্লগাররা জমায়েত হন কেবল উত্তপ্ত রাজপথেই। অথচ জেনে নিন, ব্লগাররাও কবি! ব্লগারদের দৃষ্টি যে কেবল প্রখর রোদভেদি তা নয়, তারা আগুন রঙা কৃষ্ণচূড়ার দিকে ভীষণ মুগ্ধতায় তাকাতেও পারে। ব্লগাররদের গলা স্লোগান দিতে দিতে খরখরে হয়ে ওঠে তা নয়, বরং হাসিতে ফেটে পড়তে পড়তে হেঁচকিও তুলতে পারে!
একদম তাই! একটা নির্মল-নির্ভেজাল-নিপাট-নিখাদ আড্ডা! সচেতন ব্লগাররা তুখোড় আড্ডাবাজও হতে জানেন, এটা প্রমাণ করতে ব্লগারদের বিশেষ বেগ পেতে হবে না, তা নিশ্চিত। তাই আড্ডার সুযোগ হাতছাড়া করবেন যিনি, তিনি পস্তাবেন, এ হলফনামায় লিখে রাখা যায়!
ব্লগে এখন নিত্যদিন নতুন নতুন ব্লগারদের দেখছি আমরা। অনেকের সাথে আমদের অনেকের নিয়মিত-অনিয়মিত যোগাযোগও গড়ে উঠেছে। তবে চেনা-জানা-বন্ধুত্বের সীমা-পরিসীমা নেই। ফলে পুরনো-নতুন মিলিয়ে আবারও চেনা-জানা হতে চাই আমরা গল্পচ্ছলে। হাস্যোচ্ছলে। কোন গোল টেবিলে নয়, মাঠের মধ্যে, সবুজ ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে …
গেলবারের আড্ডা কৃষ্ণচূড়ার ভরা মৌসুমে হয়েছিল। এখন অবশ্য কনকচূড়ার হলুদ মিইয়ে গেছে। রাধাচূড়ার হলুদ-কমলার প্রাচুর্যতা কমে এসেছে। সোনাইলের গোলাপী রঙও ফিকে হয়ে এসেছে। কৃষ্ণচূড়া ফুলে গাছ ভরা ভরা ছিল কিছুদিন আগেও, এখন কমে আসছে ফুল। তবুও কী এক আশ্চর্য দ্যুতিতে কৃষ্ণচূড়া এখনও টকটকে! এখনো রক্তিম! এখনও হৃদয় ঘাতক! এখন দৃষ্টিকে পোড়াতে পারঙ্গম!
হোক না কিছু দেরি, তবুও না হয় কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় বসে নেয়ার সময় খুঁজে নেয়া গেল, তবুও না হয় পারা গেল কৃষ্ণচূড়ায় বিদায় বেলায় একত্রিত হতে।
কিন্তু কোথায়? কবে? কখন?
**********************************************************
তারিখ: শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১২
সময়: বিকাল ৪:৩০টা
সংসদ ভবন লেক সংলগ্ন উদ্যান
(লেকের উপরের ব্রিজে প্রাথমিক ভাবে জমায়েত হব সবাই, একজন আরেকজনকে খুঁজে নিতে)
**********************************************************
নিশ্চিতভাবে আড্ডায় ব্লগর ব্লগার করতে করতে গলা শুকিয়ে আসবে। বিকেলের খিদেও পাবে কারো কারো। নিশ্চিত থাকুন, এ সময় সহৃদয় ব্লগাররা অপরাপরদের নিরাশ করবেন না। ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিম, চিপস, বাদাম, ঝালমুড়ি এসব চলবেই …! [বিকেলের রোদ সমস্যা হলে ছাতা এবং সানগ্লাসটা নিয়ে আসুন সাথে করে, এবং পানির বোতলও সাথে করে আনতে পারেন]
নাগরিক সাংবাদিক ব্লগাররা হয়ত আশেপাশে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা, ঘুরতে আসা মানুষদের পর্যবেক্ষনের ভাল সুযোগ পাবেন। কারো ফটোগ্রাফির শখ থাকলে, চর্চাটা করে নিতে পারেন এই সুযোগে। প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া মানে তো, জীবনের কাছেও আসা বৈকি!
এমন দারুণ একটা সময় আপনার প্রিয়জনকে ফেলে কাটানোতে আপনার কষ্টবোধ হতে পারে, তাই সপরিবার, সবান্ধব আসুন!
হাতে এখনও সময় আছে, এর মাঝে সকল কাজ গুছিয়ে ফেলুন। ঢাকার বাইরের ব্লগাররা সম্ভব হলে, কৃষ্ণচূড়ার উছিলাতে একফাঁকে ঢুঁ মেরে যান।
আসুন, কবি ভাবনায় বলে উঠি, প্রতিটা সড়কদ্বীপ, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চাই কৃষ্ণচূড়া গাছের সারি! তপ্ত গরমে চাই কৃষ্ণচূড়ার ঝিরি পাতার লিলুয়া হাওয়া। বিবর্ণ শহরে চাই কৃষ্ণচূড়ায় রাঙানো তুলির আঁচড়!
সুতরাং, ওই কথাই রইল …. দেখা হচ্ছে কৃষ্ণচূড়া আড্ডাতে…
***
যারা গতবারের আড্ডাতে ছিলেন না, তাদের জন্য পুরনো পোস্টের লিংক-
কৃষ্ণচূড়া আড্ডা: রঙে রঙে রাঙায়িত, প্রাণে প্রাণে প্রাণায়িত