বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে দু:খ প্রকাশ হোক রাষ্ট্রীয়ভাবে

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 7 Oct 2012, 09:18 PM
Updated : 7 Oct 2012, 09:18 PM

ফেসবুকে একে একে কয়েকজন বন্ধুর প্রোফাইল পিকচার কালো হয়ে গেল। কালো ব্যানার ধারণ করে ওরা বলতে চাইল, আমরা দু:খিত! আমরা লজ্জিত! ফেসবুকের কোন একটি পাতা (লিংক) থেকে আহবান ছড়িয়ে পড়ে- ৮ অক্টোবর সকলে একযোগে ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচারে কালো ব্যানার ধারণ করি। প্রতিবাদ জানাই রামুতে ঘটে যাওয়া অবমাননাকর ঘটনার। মানবতা লংঘনের ঘটনার। দু:খ প্রকাশ করি অবনত মস্তকে শান্তির অনুসারীদের কাছে যাদের মৌন প্রার্থনায় নৃশংসতা চালাতে দ্বিধা করেনি কতিপয় উগ্রপন্থীরা।

রামুতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় বৌদ্ধ মন্দিরে নয়, আমাদের সম্প্রীতির বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে। আমাদের আস্থা 'গান পাউডারে' চকিতেই দগ্ধ হয়েছে। সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু'র বিভেদ কি তবে আর কমানো গেল না?

এখনো তদন্ত চলছে। ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের সন্ধান পেতে কতদিন লাগে কে জানে! আগুন নেভানো যায়। মন্দির গড়ে দেয়া যাবে। পুনর্বাসনও হবে। সাথে এ দল আর ও দলের রাজনীতি বোনাস হিসেবেও মঞ্চস্থ হবে। কিন্তু কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা, যে ভাঙ্গন ধরানো হল, তা জোড়া লাগবে তো? যে শংকা প্রতিটি চোখে ঝিলিক দেবে, তাকে আস্থা দেবে কে?

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না

– নবারুন ভট্টাচার্য্য

শংকায়িত চোখ ক্রমে অবিশ্বাসী হয়ে উঠবে অন্যের প্রতি। দানা বাঁধবে ক্ষোভ। সেই ক্ষোভও কি ফুঁসে উঠবে না? বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনাটিকে ডায়েরির 'সাম্প্রতিক' হিসেবে তুলে রেখে দু'দিন পর ভুলে গেলে আগামিতে অনাহুত ঘটনার কমতি হবে না। তাই সচেতন হতে হবে রাষ্ট্রিয় পর্যায় থেকেও।

রাষ্ট্রকে কোন একটি বিশেষ ধর্মে পরিচিত না করার এখনই সময়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে দু:খ প্রকাশ হোক রাষ্ট্রীয়ভাবে। প্রয়োজনে একদিন "দু:খ প্রস্তাব" উত্থাপিত হোক সংসদে সরকারি-বিরোধী দল নির্বিশেষে। একদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হোক।

প্রতিটি চ্যানেলে যেখানে ইসলামি অনুষ্ঠানে শুক্রবার ভরপুর হয়ে ওঠে, সেখানে মওলানারা দু:খ প্রকাশ করুক। বায়তুল মসজিদে জুম্মার নামাজের পর ধর্মীয় সম্প্রীতির আহবান ও দু:খ প্রকাশ হোক। দেশের সকল ওলামা-মাশায়েখ দল/সংস্থাগুলো দু:খ প্রকাশ করুক … ধর্ম মন্ত্রনালয় উদ্যোগী হোক অনতিবিলম্বে …।

তবেই বোঝা যাবে আমরা কতটা অসাম্প্রদায়িক … তবেই বোঝা যাবে আমাদের সম্প্রীতি কতটা সত্য ইচ্ছা… রাষ্ট্রকে ধর্ম নিরপেক্ষকরণ চাই! সংখ্যা লঘু শব্দের ব্যবহার চাই না আর। "বিধর্মী" শব্দের ব্যবহার হোক মানবাধিকার লংঘনের সামিল।

রাষ্ট্রকে দু:খিত হওয়া চাই … সান্ত্বনা নয়। ঘটনা তড়িৎ ধামাচাপা দেয়া নয়, রাষ্ট্রকে বলিষ্ঠ প্রমাণ দিতে হবে যার যার ধর্ম তার তার স্বাধীনতা, তার তার বিশ্বাস ।

আর আমাদের অনুধাবন করতে হবে – মানবতাই ধর্ম। দর্শনই ধর্ম।