বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন!

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 18 Oct 2014, 06:30 AM
Updated : 18 Oct 2014, 06:30 AM

আল্লামা ইকবাল এবং জিন্নাহ, কেউই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের কথা ভাবেননি, এমনটা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক মিনহাজ বার্না। প্রত্যাশা ছিল, পশ্চিমাংশের বেলুচিস্তান, সিন্ধু, পাঞ্জাব ও অপরাপর অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান হবে। প্রাথমিকভাবে বাংলা সংস্কৃতি অধ্যুষিত অঞ্চল এই পরিকল্পনার আড়ালে থেকে যায়। অবশ্য আনুষ্ঠানিক সম্মেলনগুলোর ফলাফল স্বরূপ ভারত বিভাগের কাঠামো প্রস্তাব ছিল তিন জোট ভিত্তিক। যার প্রথম জোটে অন্তর্ভুক্ত ছিল মাদ্রাজ (চেন্নাই), বম্বে (মুম্বাই), যৌথ প্রদেশগুলো, বিহার, কেন্দ্রীয় প্রদেশগুলো এবং উড়িষ্যা। দ্বিতীয় জোটে ছিল, পাঞ্জাব, উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (খাইবার পাখতুনখোয়া), সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান। তৃতীয় জোটে ছিল বাংলা এবং আসাম।

সিমলা সম্মেলনে নেহেরুজিন্নাহ ঘনিষ্ঠ আলাপের সুযোগ পান। এরপর ভারতবর্ষ ভাগ, পাকিস্তান গঠনের প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত নতুন মোড় দেখা দেয়। ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট তারিখটি লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মুখ থেকে বের হয়েছিল আচমকাই। মওলানা আজাদ তড়িঘড়ি করে করে চাপিয়ে দেওয়া এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যে পদ্ধতিতে ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা ভুল এবং এ পদ্ধতিতে ভারতের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, বরং পরবর্তীকালে তা দুর্দশা বয়ে আনবে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকগণ বুঝতে পেরেছিলেন, পাততাড়ি গোটানো জরুরি।

মাউন্টব্যাটেন নিশ্চয়ই জানতেন, প্রদেশেপ্রদেশে ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়গুলোতে উত্তেজনা তৈরি হবে, যা সামাল দেওয়া সম্ভব হতো না তাদের পক্ষে। তাই শেষবেলায়, মাউন্টব্যাটেনই যেন ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতায় আগ্রহী ছিলেন বেশি। রেডক্লিফ চরিত্রের আবির্ভাব এই অংশকে আরও বিতর্কিত করেছে ইতিহাসে। সিদ্ধান্ত হয়েছিল মানচিত্র সীমানা নির্ধারণী আনুষাঙ্গিক প্রতিবেদন ১৫ আগস্টের মধ্যে জমা হতে হবে। সাইরিল জন রেডক্লিফ অবশ্য ১২ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করেন। অথচ সীমানার এই মানচিত্র উন্মুক্ত হয় ১৭ই আগস্টে। নবজন্মলাভ করা দুটি অঞ্চল ভারত ও পাকিস্তান ১৪ ও ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জানত না, তাদের নতুন মানচিত্রে প্রত্যন্ত লাইন কিভাবে প্রবাহিত হয়েছে। মাউন্টব্যাটেনের কারণে ১৭ আগস্টের আগ পর্যন্ত এই চিত্র গোপন রাখা হয়।

ধর্মতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা পাকিস্তানে বিভিন্ন প্রদেশে অসন্তোষ অবধারিতভাবে দানা বাঁধে। এর মাঝে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বাংলা বিভাজন, বাঙালীদের সঙ্গে অন্যায়, সর্বোপরি বাংলা ভাষাধিকারের ওপর খড়গহস্ত ক্ষুব্ধ করে বাঙালিদের। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবের ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানসহ বাঙালির নানা রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রভাবিত ছিল সিন্ধু ও বেলুচিস্তান। আবার তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশেরও সমর্থন ছিল সিন্ধু আন্দোলনে। জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেমন ভাষাভিত্তিক সিন্ধি আন্দোলন জাগ্রত হচ্ছিল, তেমনি পাকিস্তানে গঠিত হচ্ছিল বেলুচিস্তান আন্দোলন, পাখতুনিস্তান আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা অবশ্য বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবেই চিহ্নিত হয়। সিন্ধি আন্দোলনের নেতা জি এম সৈয়দের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সৌহার্দ্যপূর্ণ যোগাযোগ ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেব্যক্তিত্বেচেতনায় জি এম সৈয়দ এতটাই উদ্বুদ্ধ ছিলেন যে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি সিন্ধু অঞ্চলের নাম 'সিন্ধুদেশ' প্রস্তাব করেন।

১৯৫৫ সালের ১৭ জুন আওয়ামী মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা হয়। ২৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর পাকিস্তান গণপরিষদ ভাষণে বলেন, "Sir, you will see that they want to place the word 'East Pakistan' instead of 'East Bengal'. We have demanded so many times that you would use Bengal instead of Pakistan. The word Bengal has a history, has tradition of its own. You can change it only after the people have been consulted. If you want to change it then we need to go back to Bengal and ask them whether they accept it."

তথাপি ১৯৫৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান নামকরণে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরি হয়। ১৯৬৫ সালে ভারতপাকিস্তানের মধ্যেকার ১৭ দিনের যুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অরক্ষিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রকট হয়ে ওঠে। অতপর ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান স্বায়ত্ত্বশাসনের নিমিত্তে প্রথমবারের মতো ৬ দফা উত্থাপিত করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি মেনিফেস্টো আকারে জাতির সামনে ৬ দফা পেশ করা হয়। শেখ মুজিব প্রাথমিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়ের স্বার্থরক্ষায় এই দাবি পেশ করেছেন এমন মনোভাব ব্যক্ত করলেও, পশ্চিম পাকিস্তান, শুরু থেকে শেষ অবধি, ৬ দফা গ্রহণে কঠোর আপত্তি বজায় রাখেন। পশ্চিম পাকিস্তানের দৃষ্টিতে ৬ দফা অর্থ বরাবরই ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভাঙন এবং বাংলাদেশের জন্ম।

১৯৬৯ সালে মূল আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখতে ছাত্র সংগঠনগুলোও মাঠে নেমে পড়ে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবিতে একটি উল্লেখযোগ্য অংশে বেলুচিস্তান, সিন্ধু আন্দোলনের সমর্থনকারী দাবিও যুক্ত ছিল। বলা হয়েছিল, "পশ্চিম পাকিস্তানকে বেলুচিস্তান, উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ সকল প্রদেশের স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করে সাব ফেডারেশন গঠন করতে হবে।" আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিব সহ সব রাজবন্দিরা মুক্তি পায় ২২ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এদিন বঙ্গবন্ধু একটি দীর্ঘ বক্তৃতা দেন এবং তিনি ১১ দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেন। বেলুচিস্তান, সিন্ধু অঞ্চলের আন্দোলনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সমর্থন আরও স্পষ্ট হয় এখান থেকে।

ইয়াহিয়া খান ২৮ নভেম্বর ঘোষণা করলেন ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৬৯ এর ৫ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ নাচক করে 'বাংলাদেশ' ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু । তিনি বলেন, "আর পূর্ব পাকিস্তান নয়, পূ্র্ব বাংলা নয়, এখন থেকে এই দেশটির নাম হবে বাংলাদেশ।" শেখ মুজিবের নেতৃত্ব আর তীব্র আন্দোলনে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক রাজনীতি টলায়মান হয়ে উঠছিল। জান্তা সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে শাসনতন্ত্রের 'লিগ্যাল ফ্রেম অর্ডার' জারি করেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধিও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল।

৭ জুন ১৯৭০। রেসকোর্স উত্তাল। সে সময় ইয়াহিয়া খানের আইনগত কাঠামো আদেশ বলবৎ ছিল। বঙ্গবন্ধু নির্বাচন প্রচারণায় ভোট আবেদন করেন সকলের কাছে। তিনি ওদিন রেসকোর্সের নতুন নামকরণ করেন। তিনি বলেন, "আজ থেকে আমি এই রেসকোর্সের নাম বদলে দিচ্ছি। এটা আজ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, আর 'আইয়ুব নগর' আজ থেকে পরিচিত হবে শেরেবাংলা নগর নামে।" এদিন বঙ্গবন্ধু বক্তব্য শেষে বলেছিলেন, "জয় সিন্ধু, জয় পাঞ্জাব, জয় বেলুচিস্তান, জয় সীমান্ত প্রদেশ, জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান" এই সভাস্থলেই তিনি প্রথমবার 'জয় বাংলা' উচ্চারণ করেন জনসমুদ্রে। ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধু 'জিয়ে সিন্ধ' আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সেদিন ছাত্রলীগ ও ডাকসুর পক্ষ থেকে আ..ম আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুকে যে পুষ্পমাল্য দিয়ে ভূষিত করেন, সেই মালার উপরেও লেখা ছিল 'জয় বাংলা'

ইয়াহিয়া বেতার ভাষণ মারফত নির্বাচনের পুনর্নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করেন। ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের পূর্বে অংশগ্রহণকারী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচন প্রচারণার অংশ হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু তার লিখিত ভাষণের একটি অনুলিপি নিয়ম মাফিক কর্তৃপক্ষ বরাবর জমা দেন। ওই ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে 'বাংলাদেশ' 'জয় বাংলা' উল্লেখিত ছিল। জান্তা সরকার খড়গ নামিয়ে জানান দেয়, এই উচ্চারণ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের 'লিগ্যাল ফ্রেম অর্ডার' পরিপন্থী। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে 'জয় বাংলা' বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

১ ডিসেম্বর 'নৌকা' প্রতীকে ভোট চেয়ে দেশবাসীর কাছে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার আবেদন জানান বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ এই ভাষণে তিনি বৈষম্য, দুর্দশা, রাজনৈতিক পটভূমি, ৬ দফা, ১১ দফা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের শেষে বলেন -"জয় বাংলা। পাকিস্তান জিন্দাবাদ"

৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেবল বাংলাদেশ অঞ্চলেই প্রার্থীতা দিয়েছিল তা নয়, দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। রাওয়ালপিণ্ডি, করাচি ও সিন্ধুর কিছু নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল আওয়ামী লীগ। ভুট্টোর পিপিপি এবং ওয়ালি খানের ন্যাপ জোটবদ্ধ রাজনৈতিক কৌশলে সকলকে বোঝাতে সক্ষম হন, আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অর্থ পাকিস্তানের ভাঙ্গন। নির্বাচন ফলে পশ্চিম পাকিস্তানে কোনও আসন লাভে ব্যর্থ হলেও, বাংলাদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ।

আসন না পেলেও, পাঠান ও বেলুচিস্তানের অনেকের সমর্থন তো ছিলই, সিন্ধু ও পাঞ্জাবে ভুট্টো বিরোধী শিবিরও বঙ্গবন্ধুকে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল। ফলে সার্বিকভাবে নির্বাচন জয়লাভের পর বঙ্গবন্ধুর সরকার গঠনের দাবি ছিল ন্যায়সংগত। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিপুল জনতার সমাগমের মাঝে নৌকাকৃতি মঞ্চে নির্বাচনে জয়লাভকারী সদস্যদের শপথ গ্রহণ করান বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, "আজ আমি এদের শপথ করালাম। এদের কেউ যদি কোনওদিন বাংলার মানুষের সঙ্গে বেঈমানী করে, তাহলে তাদের জীবন্ত পুঁতে ফেলবেন। আমি আপনাদের আজ সেই ক্ষমতা দিলাম।" এদিন ভাষণ শেষে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান"

৪ জানুয়ারি ছিল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রমনা পার্ক বটমূল ছিল আয়োজনস্থল। এইদিনও শেখ মুজিব ভাষণ দেন, তবে ভাষণের শেষাংশ ছিল ব্যতিক্রম। এদিন তিনি তার বক্তব্য শেষ করলেন কেবল মাত্র 'জয় বাংলা' বলে। বস্তুত ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারির পর তিনি 'জয় পাকিস্তান' আর উচ্চারণ করেননি। তিনি নিশ্চিত বিপ্লবের ও অর্জনের পূর্ণাঙ্গ পথ দেখতে পেয়েছিলেন দিব্যদৃষ্টিতে।

পাদটিকা হিসেবে এই রচনা সমাপ্তিকালে '১৯৭১: ভেতরে বাইরে' গ্রন্থের লেখক এ কে খন্দকার বরাবর আর্জি পেশ করতে চাই। যেহেতু ভূমিকা যুক্ত করে গ্রন্থটির পুনর্মুদ্রণ এবং সংস্করণ ঘটেই চলেছে, পরবর্তী সংস্করণে নিশ্চয়ই লেখক সাগ্রহে ৭ই মার্চের ভাষণে জয় বাংলার পর 'জয় পাকিস্তান' অংশটি সংশোধন করবেন। যেহেতু দীর্ঘকাল পর স্মৃতিচারণ করছেন, তাই স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। উপরন্তু সূত্র হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে নির্ভর করতে হয়েছে অপরের কাছ থেকে শোনা কথায়।

এ কে খন্দকার নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, " ১৯৬৯ সালে ৪ মার্চ আমি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটিতে উইং কমান্ডার হিসেবে বদলি হয়ে আসি। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, বিশেষত ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, পশ্চিম পাকিস্তানে থাকার ফলে আমি তা জানতে পারিনি। কারণ, প্রথমত, পাকিস্তানি পত্রপত্রিকায় পূর্ব পাকিস্তানের খবরাখবর বিস্তারিতভাবে আসত না। তা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানে সংবাদপত্রগুলো ছিল মূলত মুসলিম লিগের মুখপত্র। সে সব গণমাধ্যমে পাকিস্তানপন্থী সংবাদ প্রকাশিত হতো। সত্য খবরগুলো জানা যেত না। ফলে ওই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদ তেমন কিছু জানতে পারতাম না।"

ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ '৬৯' অধ্যায়টি না জানার কারণে এ কে খন্দকার বিভ্রান্ত হতেই পারেন। দেরিতে হলেও তিনি নিশ্চয়ই এই অজানা অধ্যায়টি জানার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি এখানে জাতির কাছে দায়বদ্ধ।

***