বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলছি

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 14 Sept 2015, 06:40 PM
Updated : 14 Sept 2015, 06:40 PM

ডিজিটাল সরকার তিনটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই শ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিল ল্যাপটপ; আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিল ভ্যাটের চাপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প পরিচালকেরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে শীর্ষে নিতে চান। গড়তে চান আইটি ইন্ডাস্ট্রি ও নজেল বেইসড সোসাইটি। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতাদের জন্য ডিজিটাল সরকার এক ঝটকায় ১০ লক্ষাধিক টাকা  খরচ করে ফেলতে পারে। আর সেই সরকারই ৭.৫% ভ্যাট চাপিয়ে দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক চিন্তাভাবনায় বোঝা যায়, তিনি মনে করেন যাদের অর্থ আছে, তারাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে মেধাবী আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ করলে টাকার জোর। বুদ্ধি-দর্শন চর্চাকারী বুদ্ধিজীবীরাও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে খাটো করতে 'পুঁজিবাদ-পুঁজিবাদ' মাতম করে পাণ্ডিত্য জাহির করেন সুযোগ পেলেই।

বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ও পরিবেশ অপর্যাপ্ত হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-বিরোধী আলোচনায় অনেকে বিস্তারিত না জেনেই মন্তব্য করে বসেন । অথচ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান, পরিবেশ, ক্যাম্পাসের বিস্তর উন্নতি ঘটেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণাও হচ্ছে। কেবল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও গত কয়েক বছর থেকে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করছে। যেখানে দেশ থেকে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। এমনকি ভারত, মালয়শিয়া, জাপান, চীন থেকেও  বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে সর্বশেষ গবেষণা নিয়ে কথা বলতে আসছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা।  শুধু দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে দেশের বাইরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অথবা প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিযোগিতায়। শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যময় উত্তরণ সম্পর্কে রাষ্ট্র কী করে অজ্ঞ থাকে?

যারা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানে শিক্ষাক্ষেত্রে পুঁজিবাদের আস্তানা গেঁড়ে বসা, তারা নিশ্চয়ই জানেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনার বই, খাতা, কলম, কাগজ বিনামূল্যে আসে না। নিশ্চয়ই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিনাবেতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করান না।  তাহলে এখানে অর্থায়ন কী করে হয়?

'এডুকেশন ইজ ফ্রি' কথাটা  সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও সত্যি নয়। সরকারি সুযোগ-সুবিধা যেমন জনগণের দেওয়া  ট্যাক্স থেকে আসে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সুবিধাও আসে জনগণের ট্যাক্স থেকে।  তাহলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আপামর জনগণের উপার্জিত টাকার ট্যাক্স দিয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে।

ভর্তি ফরম বিক্রি থেকেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে।  ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান অনুষদ  থেকে ফরম বিক্রি করে আয় হয়েছিল  ১ কোটি ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ টাকা।  পত্রিকায় এসেছিল , চারটি ইউনিটের ফরম বিক্রি থেকে ঢাবির আয় ৭ কোটি টাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বছর আয় হয় ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন পত্রিকার সূত্রানুসারে, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে  সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি ফরম বিক্রি বাবদ মোট উপার্জন হয়েছিল ৫৫ কোটি ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ফরমের মূল্যও কম নয়। রাবিতে প্রতিটি ফরমের  মূল্য ছিল ৫ হাজার ১০০ টাকা।

বরাবরের অভিযোগ রয়েছে এই উপার্জিত আয় অধিকাংশই লোপাট হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অভিযোগ হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠান ভর্তি ফরম বিক্রির আয় ইউজিসির নিয়ম মেনে একবারও তহবিলে জমা করে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছভিত্তিক অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাবনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিমরাজি হওয়ার কারণ ছিল বিশাল অংকের উপার্জন হাত ছাড়া হওয়া।  অর্থমন্ত্রী এবং যারা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবসা ফেঁদেছে, তারা শিক্ষা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যবসা ও দুর্নীতি কী করে এড়িয়ে যান?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ করলেই শিক্ষার্থীরা ধনকুবের পরিবার থেকে আগত, কালো টাকার মালিক—এমন অবান্তর ধারণা অনেকের থেকে থাকলেও সরকার ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের  অথবা অর্থমন্ত্রী আবুল  মাল  আবদুল মুহিতের এমন উদ্ভট ধারণার প্রকাশ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে ঢালাওভাবে অসম্মান করে।  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার মোটে বিশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষা কাঠামো অধিকাংশই বহু বহু যুগ আগে স্থাপিত।  যারা এই সময়ের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে তাচ্ছিল্য করেন, তারা কি ভেবে দেখেছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন নিয়ে জনতার হাজারো অভিযোগ, অনাস্থা, সে কাঠামোর লোকবলের অধিকাংশই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা! যে সরকারি ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে হাজিরা দিয়েই বেরিয়ে যান প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জন্য, তিনি  কোনও না কোনও সরকারি মেডিক্যাল থেকেই সনদপ্রাপ্ত। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক কর্মকতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ তো মিলবেই।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অধ্যয়ন করেন, তাদের দামি জুতো, জামা, ঘড়ি পরার সাধ্য নেই এমনটা  অর্থমন্ত্রী প্রমাণ করতে পারবেন না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের  ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সামর্থ্য নেই—এমন অবাস্তব সমাজচিত্র কী উদ্দেশ্যে প্রচারিত হচ্ছে? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পরিবারের নিজের বাড়ি নেই, নিজের গাড়ি নেই—আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি যদি এমনই করুণ হয়, তবে কী করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়?

সমস্যাটা কেবল আসন নয়; সেশন জ্যাম এবং রাজনীতিকরণের কারণে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করাতে আগ্রহী থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। যারা বিদেশে গিয়ে শিক্ষা নেওয়ার মতো অর্থ খরচ করতে ভরসা পান না, তারা অন্তত দেশেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে  সন্তানকে ভর্তি করিয়ে সন্তানের শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেন। সকলের পক্ষে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে পড়া সম্ভব নয়, এটা নিশ্চয় তিনি উপলব্ধি করতে পারেন। ভিন দেশে পড়ালেখায় অর্থ ব্যয় করার চেয়ে দেশের অর্থ দেশে রাখা সম্ভব হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের পদচারণা বৃদ্ধিতে।

মেধাবি হওয়ার অহমিকা, উন্নাসিকতা  থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখে এর সম্ভাবনা ও ইতিবাচক অবদান সব সময়ই অবহেলিত রাখা হয়েছে। দুঃখজনক যে, সরকারও এসব কান-কথায় নিমজ্জিত। সজীব ওয়াজেদ জয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়াতে চান, সে তো খুবই সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু চাহিদা মোতাবেক আসন জোগানের সেই ডিমান্ড-সাপ্লাই কার্ভ যে কখনোই ইক্যুলিব্রিয়াম পয়েন্টে ছেদ করবে না, সে হিসাব অর্থনীতি, সমাজনীতি ও গণিতশাস্ত্র দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব।  সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়ানোর কথা বলে জয় কি এই বার্তা দিতে চান, সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেবেন আগামীতে?

কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে  শিক্ষার পণ্য হওয়া না হওয়া নিয়ে যারা তর্ক করেন, তাদের সন্তান, আত্মীয়-বন্ধু-প্রতিবেশীর সন্তানের স্কুল গমনরত শিশুটির শিক্ষাখাতে মাসিক ও বাৎসরিক ব্যয় কত? ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনিতে কত ব্যয় করতে হয়? দেশের কথিত 'ভালো ভালো' স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের মাসিক মাইনে ও আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও বেশি।  সরকারের  ‍উচিত বাস্তবমুখী  জরিপ করে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাখাতে খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া, খরচ বাড়ানোর প্রণোদনা দেওয়া নয়।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রীর ধমকি দিয়ে কথা বলাটা অশোভনীয়। সরকার হেফাজতের আল্লামা শফীর সঙ্গে আদবের সঙ্গে  কথা বলে, আর দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা অমর্যাদাপূর্ণ পথে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী—দুপক্ষই রাষ্ট্রের কাছে সম্মানিত হবে, এটাই শিষ্টাচার। মাসে ১০০০ টাকা খরচা করলে ৭৫০ টাকা দিতে পারবে না কেন, এমন স্বরে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে  কথা বলাটা শিষ্টাচার বিবর্জিত। উপরন্তু এনবিআর যখন ঘোষণা করছে ভ্যাট গুনতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে, তখন সরকারের অর্থমন্ত্রী কী করে উল্টো বক্তব্য দেন! টিউশন ফি, ভর্তি ফি, সেমেস্টার ফি ইত্যাদি নানাবিধ ফি বাড়িয়ে কর্তৃপক্ষ যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে 'অলিখিতভাবে' ভ্যাটের বাড়তি অর্থ আদায় করবে না, এ নিশ্চয়তা সরকার কোথা থেকে দিচ্ছে?  মনিটরিংয়ের  কি বিশেষ মেকানিজম বসিয়েছে সরকার?

সরকার পক্ষ থেকে যতই এখন বোঝানো হোক ভ্যাট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে, এই বাড়তি অংকটা কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পকেট থেকে নেবেন, সেটা বুঝতে  বাড়তি মেধার প্রয়োজন পড়ে না। আশ্চর্যজনক হলো, অর্থমন্ত্রীরও হঠাৎ করে বোধোদয় হয়েছে,  ভ্যাটের  অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় হবে। অর্থমন্ত্রী কিংবা সরকারি মুখপাত্রদের বিভিন্ন বৈষাদৃশ্যপূর্ণ বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, সরকার এ ধরনের  সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার আগে  জরিপ, হোয়াইট পেপার, প্রেজেন্টেশন, মতামতগ্রহণ ইত্যাদির পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়নি।  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রীর এখতিয়ার বহির্ভূত নয়, অথচ এখন পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর নীরবতাও বোধগম্য নয়!

রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনকেও ব্যবহার করার নজির রয়েছে। দেশে একটার পর একটা শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত। সেখানে ঘি ঢালছে খোদ সরকারের মুখপাত্রদের অসৌজন্যমূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজনীতিকরণ থেকে মুক্ত  থাকার সুনাম রয়েছে। ফলে ক্লাস বর্জন, পরীক্ষা পিছিয়ে সেশনজট চিত্র এখানে অনুপস্থিত। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা নীতিনির্ধারকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকেও অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

কোনও কোনও পত্রিকার সংবাদসূত্র মতে, অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ভ্যাট নিয়ে আন্দোলন না করে অতিরিক্ত টিউশন ফি নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেন আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। বোঝা যাচ্ছে  অর্থমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে মস্করা করছেন এবং তাদের পরীক্ষা পেছানোর আশঙ্কা, সেশনজট হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে এতটুকু বিচলিত নন তিনি। রাষ্ট্রের পরিচালকদের একজন হিসেবে  অর্থমন্ত্রী কী করে এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য দিতে পারেন! অতিরিক্ত টিউশন ফি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ও সুযোগসুবিধায় অসামঞ্জস্যতা, নিজস্ব ক্যাম্পাসহীনতা – এসব সরকারের ব্যর্থতা। শিক্ষার্থীদের নয়। সরকারকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা জরিপ করে টিউশন ফি'র বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই সরকার-বিরোধী নয়।  এখানে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর যুক্ত হওয়াটা  নিতান্তই অপ্রোয়জনীয়।  আন্দোলনে নামলেই পুলিশ লেলিয়ে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করাও আপত্তিকর। নিশ্চয়ই পুলিশের দায়িত্ব রাস্তাঘাটে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বজায় রাখা। তবে তা করার জন্য লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রশাসনের অসভ্যতা বৈ কিছু নয়। পুলিশ ব্যারিকেড বেষ্টনীতে আন্দোলনরতদের সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে তাৎক্ষণিকভাবে। পুলিশ মাইকিং করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য বারবার অনুরোধ জানাতে পারে। ভারতের মোদি সরকার হাজার হাজার তরুণকে  নিয়ে যোগব্যায়াম দিবসে প্রাণায়ামে নেতৃত্ব দেন, আর বাংলাদেশে সরকার তরুণদের লাঠি উঁচিয়ে-পিটিয়ে ধমকে কথা বলছে!

সরকারকে বুঝতে হবে, তরুণদের মনে এই স্মৃতি গেঁথে থাকবে। গ্যাস বিল, বিদ্যুত বিল, বাস ভাড়ার কাতারে শিক্ষায়ও বাড়তি অর্থ গুনতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অবিবেচনা। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য রাখাটা অর্বাচীনতুল্য। ভ্যাট না চাপিয়ে সরকার যেন সরকারি-বেসরকারি ভেদাভেদ না করে সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থার মানোউন্নয়নে মনোযোগী হয়। প্রত্যাশা এই, ভ্যাট নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাখাতে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ বরাদ্দের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হোক।

***