সন্ধ্যায় কালশী মোড়ে উঠতেই দ্রিম দ্রিম ঢাকের আওয়াজ কানে এলো। এই রাস্তায় একটা গার্মেন্টস আছে। ওটার সামনেই জটলা দেখা গেল। বোঝা গেল ওই মনুষ্য বেষ্টনীর ভেতরেই ঢাকি এমন তালে তালে ঢাকের আওয়াজে সন্ধ্যা কাঁপিয়ে দিচ্ছেন। এখানটায় কোন পূজোর মণ্ডপ বসলো কিনা তা দেখতে এদিক-ওদিক তাকালাম। তারপর কয়েক কদম এগুতো কিছু তরুণের বুকে-পিঠে আড়াআড়ি করে বাধা দড়ির মত পেঁচানো কাপড় আর হাতে রুপোর রঙের নকল তলোয়ার দেখে বুঝতে পারলাম, এ ঢাক মহররমের ঢাক।
ব্লাড গ্রুপ দেখে ধর্ম বোঝা যায় না। ডিএনএ টেস্টের ফলাফলে ধর্ম চেনা যায় না। ঢাকের আওয়াজে মগ্ন বাতাসে যে কম্পন ছড়িয়ে গেল ডেসিবল মাত্রায়, সেই তালে ছিল না হিঁদু লয় , ছিল না মোসলমান লয়। ওটার লয়ে, ছন্দে, তালে অসাম্প্রদায়িকতার বোলচাল ছিল। ওটা দ্রিম দ্রিম করে বলে যাচ্ছিল। এখানে ঈদ আর পূজো পালিত হয় পাশাপাশি। এখানে পূজো আর আশুরার প্রস্তুতি চলে পাশাপাশি।
***
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা, নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো: নমো
***
দর্শনার্থীদের ভিড়
দেবীর তরে দীপ জ্বালাচ্ছে নিবিড় মনে শিশুটি।
নিজে নিজে মোম জ্বালিয়ে প্রমাণ করে এগিয়ে যায় শিশুটি।
কালী মন্দিরের অংশ বিশেষ।
হরে রাম হরে কৃষ্ণ।
মন্দিরে ভোগের থালা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
দেবী।
অসুর বিনাশিনী।
মন্দিরের বিশাল চত্বর জুড়ে মৃদু বাঁশির মূর্ছনা যেন দেবীর প্রতি অঞ্জলি। প্রথমে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কোন যন্ত্রীর দল দেখতে না পেয়ে ভেবেছিলাম এটা রেকর্ড করে স্পিকারে বাজছে। পরে হঠাৎ চোখে পড়লো বংশিবাদক এক কোণে বসে আপন মনে বাজাচ্ছেন। আর সেই সুর ছেয়ে যাচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে।
শাখারি বাজার পূজা মণ্ডপ
পূজোর মেলা।
দেবতা গণেশ। "মহৎকায়া বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহি তন্নো দন্তী প্রচোদয়াৎ।"
শাখারি বাজারের বিশেষত এই মণ্ডপটি গলির মাঝামাঝি তৈরী হয়। প্রতি বছর রঙের একটা বৈচিত্র্য থাকে দেবী-দেবতাদের মূতি গড়াতে।
জয় মা কালী।
পশুবলি নয়, কালী মন্দিরে সবজি বলি দেয়া হয় দেবীর নামে।
চমৎকার কারুকাজের দেবী মূতি বিক্রি হচ্ছিল।
দর্শনার্থীদের সংগ্রহের জন্য মূর্তি।
ধ্বংস হোক অশুভ শক্তি।
ধর্মীয় গ্রন্থ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ।
***
কারবালার যুদ্ধ, কারবালার কান্না
***
গলির মুখেই ইমামবাড়া।
ইমামবাড়া থেকে একটু এগুলো জামে মসজিদ।
এখানেও বর্ণিল মেলা।
হোসাইনী দালানের ভেতরে পাঠাগার।
ধনিয়া ভাজা বিক্রি বেশ চালু হোসাইনী দালান চত্বরে। মাটির ভাড়ে ধোঁয়া দিয়ে ধনিয়া ভেজে কাগজে পুরে বিক্রি। এরকম একাধিক বিক্রেতা চোখে পড়বে।
দর্শনার্থীদের জন্য হোসাইনী দালানের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় সতর্কীকরণ বার্তা।
চত্বরে প্রবেশের কিছু পর, যারা হোসেইনী দালানে, বা মাজারে যেতে চাইবেন, তাদের জুতো খুলে রেখে যেতে হবে। জুতো জমা দিলে টোকেন দেয়া হয়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী তরুণেরা।
নিরাপত্তা ….
তাজিয়া মিছিলের নিশান।
হোসেইনী দালানের ভিতর। স্থাপনাটিতে সাদা-নীলে ক্যালিওগ্রাফি রয়েছে প্রতিটি স্তম্ভে। ছবি তুলতে বাধা নেই। অনুমতি নিয়ে তথা জিগেষ করেই ছবি তোলা হয়েছে।
মাজার সংলগ্ন জানালার শিকে মানতের রঙিন সুতো।
হোসেইনী দালানের পেছন দিন। পুকুর সংলগ্ন। পুকুরের পানি ময়লা। এটা-সেটা ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। তবু নারী-পুরুষ পূর্ণার্থীদের পুকুরের পানিতে অজু করতে, হাত-মুখ ধুতে দেখা যায়।
ইমাম হোসাইন (রাঃ-) এর ঘোড়া র নাম ছিল 'দুলদুল'
গলিটা যদিও তেমন প্রশস্ত নয়। গলিরর এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত মিছিল এগিয়ে যায়। আশপাশের বাসিন্দারা ছাদ থেকে, বারান্দা থেকে দেখে। পুলিশ কিছু দূর পর পর দাঁড়িয়ে থাকে।
মিছিলের পুরুষভাগের একাংশের কণ্ঠে ছিল দম দম আলী আলী। মিছিলের নারী অংশ এগিয়ে এসে কিছুক্ষণ থেমে মাতম তুলেছিল সরু গলির বাতাসে – হায় হোসেইন। হায় হোসেইন।
কারবালার রক্তপাত স্মরণে …
নোট: ছবিগুলো ২২ অক্টোবর ধারণকৃত।