প্লিজ! সাবিরা হোসেনের ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে আত্মহত্যার ভিডিওটি সরিয়ে ফেলুন

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 24 May 2016, 07:59 PM
Updated : 24 May 2016, 07:59 PM

সার্চ বক্সে নাম লিখতে না লিখতেই পপুলার সার্চ এর পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে ফেসবুকে সাবিরা হোসেন এখন 'হট টক'। তবে সাবিরা হোসেন তখনি পত্রিকায় বিশেষ শিরোনাম হলেন, যখন তিনি আত্মহত্যায় সফল হয়েছেন। কিন্তু ফেসবুকে এখন থেকে ২০-২১ ঘণ্টা পূর্বে দেয়া তার আত্মহত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টার ভিডিওটি ৪৪০০ বারের বেশি শেয়ার হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আত্মহত্যার ভিডিওটিতে লাইক পড়েছে ৫৫০০টিরও বেশি। তবুও বাস্তবতা হচ্ছে  মডেল সাবিরা হোসেন এখন মৃত।

সাবিরা হোসেন আত্মহত্যা করেছেন [খবর লিংক]। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের দেশের খবরাখবর বেশ ভালই রাখে তা বোঝা গেল মৃত মডেলের প্রোফাইলে 'Remembering' জুড়ে দেয়ায়। কিন্তু সাবিরা হোসেনের প্রোফাইলে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ পোস্টে রয়ে গেছে ছুরি নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টারত ৯ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের দু'টি ভিডিও পোস্ট। কিছু সময়ের ব্যবধানে পর পর দু'বার একই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে মৃত মডেলের ফেইসবুক প্রোফাইল পাতায়।

ফেসবুকে সবকিছুর প্রবাহ চলে। এখানে প্যারেন্টাল গাইডেন্স নেই। আমরাও জানি, ফেসবুক কর্তৃপক্ষও জানে এখানে আঠারোর কম বয়সীরা দিব্যি ফেইসবুকিং করেন। এখানে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা রয়েছে। কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা রয়েছে। দুর্বল চিত্তের মানুষ রয়েছে। এখানে অবসাদগ্রস্ত মানুষ রয়েছে। কারো জন্য ফিলটার প্রক্রিয়ার নিশ্চিত করার চর্চা ফেসবুকে নেই। এখানে সবাইকে এক যোগে 'সব' কিছু দেখতে হবে।

শিক্ষকের কানে ধরার ভিডিও দেখবে দেশের সকল স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। শিশুকে পিটিয়ে মারার ভিডিও দেখতে দেশের সকল শিশুরা-কিশোরেরা। ফেইসবুক এমনি 'অবাধ' তথ্য প্রবাহের হুজুগ সৃষ্টি করেছে।এখন সকলে  প্রেমে ব্যর্থ, অপমানিত আর বিষন্ন তরুণী মডেলের সবজি কাটার ছুরি হাতে আত্মহত্যার ভিডিও দেখতে ফেসবুকে হামলে পড়বে।  নাম-পরিচয়হীন কিছু অনলাইন পত্রিকাতে নাকি আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ভিডিও আপলোডও করা হয়েছিল  পাঠকদের মনোরঞ্জনে, জানালেন কেউ কেউ।

এসবের কী প্রভাব পড়ছে প্রজন্মের উপর? শিশু-কিশোরদের উপর? এসব নিয়ে ভাবার কেউ নেই।

পুলিশি তদন্তে (ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে) নিশ্চয়ই এই ভিডিও, স্ট্যাটাস আলামত হিসেবে কাজে লাগবে। তাই বলে কি একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির আত্মহত্যা প্রচেষ্টার মনস্তাত্তিক চাপ ফেলা এই ভিডিওটি রয়ে যাবে তার ফেইসবুক প্রোফাইলে?

তরুণ প্রজন্ম এমনিতেই হতাশ। বিভ্রান্ত। ফেইসবুক চর্চা আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটা অংশকে ক্রমাগত একটি চিন্তাহীন প্রজন্মে পরিণত করেছে। এরকম ভিডিও'র ফেইসবুক পাতায় রয়ে যাওয়া  আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে প্রজন্মের উপর। তরুণীদের উপর।

অনেকেই ফেসবুকে মৃত মডেলকে নিয়ে কথা বলছে, তবে সামা মেহজাবিন স্পষ্ট করে ফেইসবুকে লিখেছেন আত্মহত্যার ভিডিওটি তাকে তাড়া করে ফিরছে।

পুলিশ, প্রশাসন, বিটিআরসি, তারানা হালিম, নারী ও শিশু মন্ত্রনালয়, সর্বোপরি সরকারকে অনুরোধ, তদন্ত সাপেক্ষে প্রোফাইল থেকে যা যা তথ্য নেয়া দরকার সে সব নিয়ে অতিদ্রুত মর্মান্তিক এই ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলুন। প্লিজ!