প্রসঙ্গ রোজলীন-হাসনাহেনা: প্রতারণায় ব্লগ ব্যবহার

আইরিন সুলতানাআইরিন সুলতানা
Published : 22 Nov 2011, 07:38 PM
Updated : 22 Nov 2011, 07:38 PM

রোজলীন-হাসনাহেনা প্রসঙ্গে এক সময় অনেকের কিছু খটকা তৈরী হয়। কিন্তু বিষয়টা এতো স্পর্শকাতর যে, অনেকেই প্রশ্ন করতে সংকোচ বোধ করেন। অনেক ব্লগারই জানেন, হাসনা হেনার অসুখ বিষয়ক পোস্টে তাকে অর্থ সাহায্যের মানবিক আবেদন ছিল। এ পোস্ট একাধারে বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত হয়। কখনো রোজলীনকে দেখা গেছে হাসনা-হেনার ব্লগ ব্যবহার করে দৃষ্টি আকর্ষণী পোস্ট দিতে। কখনওবা হাসনাহেনাকে রোজলীনের ব্লগ ব্যবহার করে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।

সব ব্লগে বারবার তাগাদা দেয়ার ফলে, কোন কোন ব্লগে বেশ ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। কোন কোন ব্লগাররা যথেষ্ট উদ্যোগী হয়ে ‍উঠেছিলেন ব্যক্তিগতভাবে। রোজলীন ফেসবুকে গ্রুপও তৈরী করেন, অর্থ সংগ্রহের আপডেট নিতে ও দিতে এবং হাসনা-হেনার শারীরিক অবস্থা জানাতে [We Love Blogger Hasna Hena (আমাদের প্রিয় ব্লগার হাসনা হেনা)]।

কাব্যকে নিয়ে ব্লগার কি নাম দিব'র পোস্ট ছিল সেসময়। তবে সামহোয়্যার ইন ব্লগ থেকে কাব্যের জন্য অনেকখানি অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল। বিডিনিউজ২৪ ব্লগের ব্লগাররাও সেসময় এগিয়ে এসেছিলেন, যে যার মত করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কাব্য মারা যায়। কাব্যের পরিবার থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে জানানো হয়, সংগৃহিত অর্থ তারা ফেরৎ দেয়ার চেষ্টা করবেন। এ থেকে সেখানে এক ব্লগার জানান (ব্লগার একাকী বালক), এ অর্থ হাসনা-হেনার জন্য প্রদান করা যায় কিনা। প্রস্তাবনাটি অনেকেই সমর্থন করেন। সেখান থেকে প্রস্তাবনাটি বিডিনিউজ২৪ ব্লগেও রাখা হয়। এবং ব্লগারদের কেউ কেউ আগ্রহ দেখান।

এরপর থেকে ঘটনা একটু ভিন্ন দিকে যেতে শুরু করে। অর্থ প্রাপ্তিতে দেরি হওয়ায়, কিনাদি'র সাথে রোজলীনের রূঢ় মন্তব্য চোখে পড়ার মত ছিল। জানা গেছে, ফেসবুকে ব্যক্তিগত বার্তায় তিনি আরো অনেক অসৌজন্যমূলক কথাও বলেছিলেন। সে সময় অথবা তারপর এক সময় সম্ভবত হাসনা হেনার ব্লগ এ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয় প্রথম আলো ব্লগে। বিস্তারিত জানা-শোনা না হলেও অর্থ সংগ্রহ নিয়ে রোজলীন/হাসনাহেনার নানা ধরণের উদ্ভট আচরণ ও প্রথম আলো ব্লগের ব্লগারদের সন্দেহপোষণ করে কোন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হয়ত কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল।

আমি অবশ্য হাসনা হেনার প্রথম আলো ব্লগে ব্যান স্থগিত হওয়ার বিষয়টি জেনেছিলাম, তার জন্য তৈরী ফেসবুক গ্রুপ থেকে। রোজলীন সে সময় হাসনা হেনার লিখিত ডায়েরি তুলে দেয়া শুরু করেছিলেন ফেসবুক গ্রুপে।

একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় ছিল, এমন একটি দু:সময়ে হাসনা-হেনা পরিবারের বিভিন্ন ব্লগগুলোতে নিয়মিত সরব উপস্থিতি! ব্লগে বিষয়টা একজনের অসুস্থতার সাথে জড়িত বিধায় নি:সন্দেহে অনেকেই মানবতাবোধ থেকে কোন প্রশ্ন তুলতে পারছিলেন না। অথচ অসুস্থ হাসনা হেনা কখনো ছড়া লিখছেন, কখনো সামহোয়্যার ইন ব্লগে ব্লগারদের আবোলতাবোল কথা বলে তারপর আবার দু:খ প্রকাশ করছেন। পোস্ট দিয়েছেন, মুছেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমনটা আগেও বলা হয়েছে, শুরুতে রোজলীনকে দেখা যেত হাসনা হেনার এ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট দিতে, আর হাসনা হেনাকে দেখা যেত রোজলীনের ব্লগে ব্যবহার করতে। এ ধরনের অস্থিরতা অনেকের মধ্যে সন্দেহ গাঢ় করেছিল। ফলে আগ্রহ কমে গিয়েছিল অনেকের। সমস্যা ছিল, সরাসরি গিয়ে খোঁজ নেবে এমনটা কারো পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

ইদানীংকালে ঠিক মত পোস্ট দেখা না হলেও পরে রোজলীনের একটি পোস্ট ও মন্তব্য দেখে বুঝতে পারলাম, তিনি হালেই ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে কোন পোস্ট দিয়েছিলেন। সম্ভবত এতে অনেক ব্লগার আপত্তি তোলে, এবং সন্দেহের বিষয়টি আরো পাকাপোক্ত হয়। ঘরে অসুস্থ একজন ব্যক্তি থাকতে ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে পোস্ট প্রদানকে স্বাভাবিকভাবে নিতে চায়নি ব্লগাররা। শুধু তাই না, বিভিন্ন ব্লগারদের সাথে বেশ আপত্তিকর সুরে মন্তব্য বিনিময় করেন রোজলীন। তার এ ধরনের কিছু বক্তব্যের স্ক্রিনশট পাওয়া যাবে ব্লগার khairun এর পোস্টে । রোজলীন ও হাসনা হেনা দু'জনকেই ব্লগারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতেও দেখা গেছে। [লিংক]

ব্লগার khairun একই পোস্টে চট্টগ্রামের ব্লগারদের রোজলীন-হাসনাহেনা সম্পর্কে সরাসরি খোঁজখবর নেয়ার অনুরোধ করেন। [উল্লেখ্য, শুরুর দিকে বিভিন্ন ব্লগে ও ফেসবুক গ্রুপে ব্লগার হারুণকে হাসনা হেনার জন্য অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগী দেখা গিয়েছিল। তারপরে অবশ্য তার উপস্থিতি দেখা যায়নি।]

khairun এর পোস্টে ব্লগার শয়তান এর মন্তব্যটি লক্ষ্য করার মত ছিল। ব্লগার শয়তান জানান [২২ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৪],

আমার পরিচিত দুইজন চট্রগ্রামের সংবাদিক ও ডাক্তার আজকে গিয়েছিল রোজলিনের এবং তার কথিত রোগী হাসব্যান্ডের সাথে দেখা করতে.নিউজ অনেকটা এরকম … লোকটি আমার মতই একজন সাধারণ হেপাতায়তিস ভাইরাস ক্যারিয়ার কিছু দিন যাবত . এর বেশি কিছু নয় . তবে বিরাট অংকের ব্যাংক লোন এর চাপে [ প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার ] এই সব কাহিনী করতেছে . ২ বার ইউনিপে২ আর শেয়ার বাজারে বড় ধরনের ধরা খেয়ে গাড়ি বাড়ি বিক্রি করেও পরিস্থিতি সে সামাল দিতে পারছে না . যার অনেকখানি হিন্টস পাওয়া যাবে তার নিজের জবান্বন্দিতেই এখানে > http://prothom-aloblog.com/posts/51/131254
কালকে তার ডাক্তারের কাছে এই সাংবাদিক যাবে . তখন ঘটনা আরো বেশি পরিষ্কার হবে আশাকরি 🙂

অন্য আরেকটি পোস্ট বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সেটা হাসনা হেনার মেডিক্যাল রিপোর্ট বিষয়ক। ব্লগার মোটামানুষ তার পোস্টে হাসনা হেনার মেডিকেল রিপোর্ট এর ছবি দিয়েছেন এবং বিশেষত ডাক্তার ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত অনেকেই জানিয়েছেন, রিপোর্ট মূলত নরমাল। ওই পোস্টে ব্লগার কর্ণেল সামুরাই প্রশ্ন রেখেছেন,

ক্রনিক হেপাটাইটিস এর ক্ষেত্রে SGPT/SOGPT এর মানদিয়ে আসলে কিছু বোঝা যায়না। মহিলার পোষ্টে দেখলাম তার স্বামী ২০০৪ সাল থেকে পেশেন্ট মানে ক্রনিক হেপাটাইটিস এর রোগী।
কিন্তু, ডাক্তরের প্রেসক্রিপশনে লেখা এলকোহলিক হেপাটাইটিস মানে মদ খেলে যে হেপাটাইটিস হয় আরকি। সেক্ষেত্রে SGPT এর চেয়ে SOGPT দ্বিগুণ হবার কথা। সেরকম তো কিছু দেখলাম না। ওনার কি হেপাটাইটিস বি নাকি এলকোহলিক হেপাটাইটিস??

বাংলা ব্লগের শুরু দিক থেকে ব্লগারদের সম্মিলিত উদ্যোগে আর্তমানবতামূলক বহু কাজ হয়েছে। সম্ভবত এই ইতিবাচক দিককে ব্যবহার করে অনেকে ব্লগ ও ব্লগারদের কাছ থেকে ফায়দা হাসিলের পথে নেমেছেন। মিথ্যে কাহিনী সাজিয়ে অর্থ সংগ্রহ অথবা সত্যিকার অর্থে অসহায় কাউকে সাহাযার্থের কথা বলে টাকা তুলে পরে অর্থ লোপাট করা (যেমন হয়েছিল কলমদাদির ক্ষেত্রে) অবশ্যই প্রতারণা এবং অপরাধ। প্রতারণার প্রচলিত আইনেও যেমন একে শাস্তির আওতায় আনা যায়, তেমনি ভাবে সাইবার আইন প্রণয়ন করেও শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়।

এ ধরনের ঘটনার একটা নেতিবাচক প্রভাব তো পড়তেই পারে ব্লগে, ব্লগারদের মাঝে। স্বাভাবিকভাবে ব্লগাররা তাদের আস্থা হারাবে। তাই ব্লগারদের সতর্ক হতে হবে। সচেতন হতে হবে। এবং অবশ্যই প্রত্যেকে দ্বায়িত্বশীল হতে হবে।