আমাদের সৌন্দর্য ও প্রেমের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

শাকিল মাহতাব
Published : 2 Jan 2015, 08:08 AM
Updated : 2 Jan 2015, 08:08 AM

ধর্মীয় আঞ্চলিক সামাজিক প্রথা বা কোন শ্রেণীর আরোপিত বিঁধান বিবেচনা করলে মানব স্বাধীন স্বত্বা এখন পরাধীন ও আনন্যাচারাল প্র্যাকটিসে নিমজ্জিত। খটকা লাগলো ? লাগারই কথা কারণ আমরা আনন্যাচারাল প্র্যাকটিসে এতটাই অভ্যস্ত যে আনন্যাচারাল প্র্যাকটিসকে আসল, আধুনিক সভ্য সামাজিকতাই মনে হয়। আমি ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের প্রতি আনন্যাচারাল প্র্যাকটিসের কথা বলছি, শুধুই নিখাদ ভালোলাগার জন্য আমরা ভালবাসি না! সৌন্দর্যকে সুন্দর বিবেচনায় আশ্রয় নিই বিভিন্ন সূচকের। বোধদয়ের জন্য মানুষের সৌন্দর্য ও ভালবাসার প্রকৃত সংজ্ঞার সাথে আমাদের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সৌন্দর্য ও ভালোবাসার তুলনা করতে পারি ।

সৌন্দর্য: সৌন্দর্য যা আমাদের উত্তেজিত করে,ফেসিনেসান ও আগ্রহের সৃষ্টি করে যার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকা ও প্রজননের জন্য সবচেয়ে অভিযোজিত সিদ্ধান্ত দিকে আমরা উৎসাহিত হই। নারীর সৌন্দর্য হল তার ফিজিক্যাল আকর্ষণ, যা এস্থেটিক প্লেসিং বা বিউটি বলে মনে করা হয় আদি থেকেই । নারীর এই ফিজিক্যাল আকর্ষণ কে বলা হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য (natural beauty) বা sexual attractiveness or desirability।

তাহলে এস্থেটিক বিউটি যেমন বুদ্ধি , সততা বা স্কিল কি সৌন্দর্য না? হ্যাঁ, অবশ্যই তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য (natural beauty) না কারণ এস্থেটিক বিউটি / নন্দনিক সৌন্দর্য অর্জন করা যায়, যা সহায়ক হয় যৌনতায় আকৃষ্ট করতে।

ভালোবাসা: প্রেম, ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মত একটি জৈবিক অনুভূতি যা অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। হেলেন ফিচারের মতে ভালোবাসা lust, attraction, and attachment এই তিনটির সমন্বয়ে অনুভূত হয় ।Lust হল sexual desire যা মস্তিষ্কে testosterone and estrogen এর মত কেমিক্যাল নিঃসরণ করে। নিঃসরণের এই ক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড মাত্র, এই ভালোলাগার ডিজায়ার / অনুভূতি শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সামাজিক আননেচারাল প্র্যাকটিসের করনে সফলতার মুখ দেখে না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় ভালোবাসা, সৌন্দর্য ও যৌন আচরণ নিয়ে কোন ধরনের ধর্মীয় সামাজিক বাধা বা চাপ যাদের নেই তাদের গড় লাইফ এক্সপেকটেন্সি ভারত বাংলাদেশ বা ধর্মীয় সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আছে এমন দেশ থেকে বেশী ।

ভালোবাসায় এবং সৌন্দর্যে sexual desire এর ভূমিকা অতি সহজেই উপলব্ধি করা যায় । এখন ফিরে আসি মুল কথায়, সংজ্ঞানুসারে আমাদের সভ্য সমাজে আদৌ কি ভালোবাসার বা সৌন্দর্যের কোন অস্তিত্ব আছে ? Natural beauty ও natural desire আমাদের মধ্যে কতটা সৎ ভাবে কাজ করে?

যৌনতা সেখানে নারী পুরুষের জন্য সমান উপভোগ্য তখন এই সুন্দর জৈবিক ক্রিয়ার জন্য হাজারো বিধি নিষেধ শর্তের পরেও আমাদের সমাজে শুধু পুরুষই কেন দায়ী এই কাজের জন্য! নারী কি পুরুষকে দেখে শিহরিত হয়না? কারো প্রতি ভালোবাসার উদয় হলে উপভোগের বাধা খাদ্য গ্রহণ করে হজম ও মল ত্যাগ না করার মতই আননেচারাল প্র্যাকটিস নয় কি! নান্দনিক সৌন্দর্য আর গৌণ সামাজিক চাহিদার গেঁড়াকলে মিরাক্কেল লাভ (ন্যাচারাল লাভ) শুধুই রোমান্টিক গল্প কবিতার মিথ্যা গলাবাজি বা স্যাহিত্তিক প্রকাশ মাত্র ! এখন এক পলকে কেউ প্রেমে পরে না ,পলক পরার আগেই সামাজিক ধর্মীয় আঞ্চলিক স্ট্যাটাস অর্থ বিত্তের বিধিনিষেধ গলা টিপে ধরে,মস্তিষ্কে testosterone and estrogen এর মত কেমিক্যাল নিঃসরণ হতে দেয় না! হলেও কেমিক্যাল নিঃসরণ উদ্দেশ্য সফল হবার সম্ভাবনা ০.০০১% ভাগ।

সমাজ আমাদের শিক্ষা দেয় ভালোলাগার ফলে ডোপমিন নিঃসরন অনুচিত তাই বন্ধ করতে হবে এই বায়োলজিক্যাল প্রসেস, সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলে সেটা ইনফেচুয়েসান। মোদ্দা কথা, আমাদের জৈবিক আচরণকে অজৈবিক সামাজিক নীতি আনুসারে চর্চা করা । সামাজিক গারবেজ শর্তগুলি মেনে নিয়ে বেছে নেয়া কারো সাথে প্রেমে অভ্যস্থ হওয়াই সভ্য সামাজিকতা ও সমাজ স্বীকৃত ভালোবাসা। Natural desire -কে দমন করা, যৌনতায় অসম অধিকারের মানুষিকতা বা যৌনতাকে কুৎসিত দেখানোই আমাদের সভ্য সমাজের দর্শন!