যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশে ব্লক করা হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ম্যাসেজিং সেবা

এম এস বাশার
Published : 20 Jan 2015, 08:51 AM
Updated : 20 Jan 2015, 08:51 AM

নির্বাচিত হলে এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং অ্যাপ সেবা নিষিদ্ধ করবেন, একথা বলছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গত ১৪-০১-২০১৫ ইং এক সাক্ষ্যাৎকারে পুনরায় নির্বাচিত হলে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, এরূপ মন্তব্য করেছেন খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন।

নির্দিষ্ট কোনো এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সেবার নাম উল্লেখ না করলেও ধরে নেওয়া যায় এক্ষেত্রে তিনি প্রতিষ্ঠিত ভাইবার, স্ন্যাপচ্যাটের মতো অ্যাপগুলোকেই ইঙ্গিত করেছেন। বর্তমানে পুনরায় নির্বাচিত হবার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন ডেভিড ক্যামেরন। ক্যামেরন আরও জানান, পুনরায় নির্বাচিত হলে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ডেটা শেয়ার করতে রাজি নয় এমন সব এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সেবা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তিনি বিবেচনা করবেন। এই অ্যাপগুলো সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের জন্য নিরাপদ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ক্যামেরন। এ ধরনের অ্যাপের ডেটা সংগ্রহ করা উচিত বলেই মনে করেন তিনি এবং সেক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মের মাধ্যমেই সব ব্যাবহারকারির ডেটা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানিয়েছেন ক্যামেরন।

এই উক্তি উনার ভোটের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে তা জানতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে এ উক্তির প্রভাব ইতিমধ্যে আমাদের দেশের গোয়েন্দাদের উপর পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারন আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীর অনুরোধে মন্ত্রনালয় ও বিটিআরসি'র যৌথ নির্দেশে ইন্টারনেট প্রভাইডারগন গত ১৮-০১-১৫ ইং থেকে কিছু অ্যাপসের আইপি ইতিমধ্যে বন্ধ বা ব্লক করেছে এবং আমরা সেই সকল সেবা যা আমাদের দেশের কোন কোম্পানি আজ অব্দি দিতে পারেনি ও পারবে না এরূপ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

এখানেও একই নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। একজন সাধারন নাগরিক হয়ে সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই, সাথে ছোট মুখে বড় একটি প্রশ্ন আমি সেই গোয়েন্দাদের করতে চাই তা হলো, এইগুলি যদি এতই ভয়ানক ও শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব কেন এখনও এরকম পদক্ষেপ নেয়নি? যেখানে আলকায়দা, আই এস এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তারা যুদ্ধরত অবস্থায় আছেন।

যে নিরাপত্তা জনিত কারনে ব্লক বা বন্ধ করা হয়েছে এই ধরনের কিছু এপ্লিকেশন সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির আইপি এড্রেস, সেই নিরাপত্তা কি আমরা এখন অনুভব করছি কিনা বা এতে আমরা কী কী সমস্যার মধ্যে পড়েছি তা নিয়ে অনুরোধকারিগণের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ডিজিটাল সরকারের থাকবে প্রশ্নই আসেনা। যদি থাকতই তাহলে বন্ধ করার আগে ইউজারদের নোটিশ বা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে সরকারের এই পদক্ষেপের সাথে সরকারের গ্রহনযোগ্যতা আরও বেড়ে যেত।

যদিও দেশের চেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র সৌদিআরবে বসবাসকারী প্রবাসীদের পরিমান ১২ লক্ষেরও বেশি। এর মধ্যে সক্রিয় ১ লক্ষ আছেন যারা এ সেবা ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত পরিবার ও আত্নীয়স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তাহলে সমগ্র বিশ্বে প্রবাসির পরিমান কয়জন এবং কয়জন প্রবাসি এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন?

এই বিতর্ক না করে আন্দাজ করাই ভালো। আশার কথা হচ্ছে, এই ব্লক বা বন্ধের খেলায় দেশের প্রতিদিনের আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ অন্যদিনের চেয়ে বর্তমানে বেড়েছে বহুগুণ। আর এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলে এই কলের পরিমান আরও বাড়বে বলে আশা করছেন স্থানীয় কল প্রভাইডারগন। এতে সরকারের আর্থিক ও সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। মুদ্রার যেমন এপিঠ-ওপিঠ আছে তেমনি সব ভালোর খারাপ দিকও আছে। কেউ কেউ মনে করেন যোগাযোগ ব্যবস্থা সাশ্রয়ি না হলে দেশের ভিতরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা থাকে ও থাকবেই। যেমন, উৎপাদন, বিতরণ ও ভোক্তা থেকে শুরু করে চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী সবার খরচ বেড়ে যাবে। খরচের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে অন্যান্য সব কিছু। এতে দেশ ও জনগনের কতটুকু লাভ হবে আর সন্ত্রাসীদের কতটুকু ক্ষতি হবে এই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।

তাই বিজ্ঞ ডিজিটাল সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব কথিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে সেবাগুলি উন্মুক্ত করে দিন। আর এইসব সেবা মনিটরিং করার প্রযুক্তি ও সঠিক জনবল এদেশেই আছে। শুধু উপযুক্ত পরিবেশ রেডি করে তাদের ডাকুন। তাহলেই আশা করি এরকম পরিস্থিতি আমাদের আর আসবে না যা সরকারের জন্যও সমান বিব্রতকর।