সম্মান শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ, অতঃপর অসম্মানজনক ফলাফল

মহানীল বঙ্গোপাধ্যয়
Published : 22 June 2017, 10:24 AM
Updated : 22 June 2017, 10:24 AM

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে অনার্স সেকশন চালুর লক্ষে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ঐ বছরের ২৯ ডিসেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অত্র কলেজে যোগদানের শেষ দিন মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম নামক একজন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করানো হয়। বিধি মোতাবেক, তখন উক্ত শিক্ষক তার সকল প্রকার সনদের মূলকপি কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেন।

সরকার ঘোষিত সময় অনুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হলে যোগদানকৃত শিক্ষককে জানানো হবে বলা হয়। কিন্তু আজ আড়াই বছর অতিক্রান্ত হলেও উক্ত শিক্ষককে কাজ শুরু করার আহ্বান জানায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে, এক বছর পর ওই শিক্ষক কলেজ অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে কিছু বলার ক্ষমতা নেই বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কলেজ অধ্যক্ষের অপারগতায় ওই শিক্ষক গভর্নিং বডির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে জানতে পারেন যে, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীকে যোগদান করার জন্য নিয়োগপত্র পাঠানো হয় এবং মূল সনদপত্রও জমা নেয়া হয়।

আরও জানেন, বেতনভুক্ত শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করার আদেশ পাবার জন্য শিক্ষকদের নিকট লক্ষ টাকা করে সেলামি নেন গভর্নিং বডির সভাপতি, যিনি উক্ত আসনের জাতীয় সংসদ সদস্যও। সামান্য পরিমাণেও সেলামি দিতে অপারগ উক্ত শিক্ষক হতাশ হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন- যেকোন বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করতে প্রতি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচজন করে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করার শর্ত রয়েছে। তাই, অনার্স কোর্স চালু করার অনুমতি লাভের ক্ষেত্রে নিয়োগকৃত পাঁচজন শিক্ষকের মূলসনদপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেয়া প্রয়োজন বিধায় কলেজ কর্তৃপক্ষ কৌশলে সকল প্রার্থীর সনদপত্র জমা নেয়।

তম্মধ্যে, অপেক্ষাকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের সনদসমূহ জমা দেয়া হয়। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ওই বছর অর্থাৎ ২০১৪ সাল হতে উক্ত কলেজে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের অনার্স কোর্স চালু ও শ্রেণিকার্যক্রম শুরু হয়। পরে জানা যায়, যেসব প্রার্থী কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির সম্মতি আদায় করতে পেরেছেন তম্মধ্যে দুইজন শিক্ষক দিয়ে অনার্স ১ম বর্ষের শ্রেণিকার্যক্রম শুরু করা হয়। এবং এভাবে তিনটি শিক্ষাবর্ষ পার হতে থাকলেও ওই নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে আর কাউকে কাজে যোগদানের জন্য আহবান জানায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী সম্মান কলেজ সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্থলে মনগড়া বিধি চালু করেছে। এখানে মেধাতালিকা প্রস্তুত হয় তদবীর ও সেলামীর ভিত্তিতে। যোগদান করা মানে মূল সনদপত্রসমূহ জমা দেয়া, আর উচ্চশিক্ষা মানে উচিত শিক্ষা। কিন্তু ওই শিক্ষকের শিক্ষা এখনও শেষ হয়নি। যোগদান করানোর নামে জমা নেয়া মূল সনদপত্রসমূহ অদ্যাবধি কলেজের কোন এক বাক্সের কোন এক ফাইলে ফিতাবন্দী হয়ে আছে।