জিয়া পরিবারের সৌদি আরব মিশন ও দারুল ঈমান হোটেল ষড়যন্ত্র

মাহবুবুল আলম
Published : 24 July 2014, 07:09 AM
Updated : 24 July 2014, 07:09 AM

জিয়া পরিবারের সৌদি আরব মিশন নিয়ে দেশের ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিকে সরব করে তুলেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে ১৯ জুলাই ২০১৪ রাতে সৌদি আরব পৌঁছান। একই বিমানে ‍দুবাই থেকে মায়ের সফরসঙ্গী হন বেগম জিয়ার জৈষ্ঠ্যপুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডণে চিকিৎসার নামে স্বেচ্ছা নির্বাসিত তারেক রহমান তাঁর স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার নামে নির্বাসিত বর্তমানে অর্থপাচার মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী কোকো ও তার পরিবারও বেগম জিয়ার সাথে মিলিত হতে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে আরও রয়েছেন বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বিএনপি নেতা ও এনটিভির চেয়ারম্যান মোছাদ্দেক আলী ফালু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারি এনামুল হক চৌধুরী, ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী নূরউদ্দীন আহমেদ, তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রকীবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ, সাংবাদিক ও গবেষক মাহাবুবুর রহমান, সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব প্রমুখ।

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ সফরের আড়ালে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্দোলন সংগ্রাম, দল পুর্নগঠন বিষয়-আসয় নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এ কয় দিনে তিনি তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করে ঈদ পরবর্তী ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচির রোড ম্যান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন। খালেদা জিয়া সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে সেখানে রাজকীয় মেহমান হিসেবে অবস্থান করলেও সব সফর সঙ্গিই কিন্তু অতিথি নন। তাই তার সফর সঙ্গীদের মধ্যে তারেক জিয়া, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের ইসলামের পক্ষে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ছোট ছেলে ও জামায়াত নেতা মাসুদ বিন সাঈদী। হারেম শরীফের পাশেই হোটেল দারুল ঈমানে অবস্থান দফায় দফায় বৈঠক করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কি ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি দিলে দ্রুত শেখ হাসিনা সরকারের পতন তরান্বিত করা যাবে।

দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে কেউ কেউ এমনও বলছেন যে জিয়া পরিবারের ওমরাহ পালনের কথা একটা অজুহাত মাত্র। আসলে সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের জন্য সৌদি আরবে বিএনপি-জামায়াত ও বিজেপির মধ্যে একটি গোপন বৈঠক আয়োজনের জন্যেই এই 'ওমরাহ মিশন'। যা হওয়ার কথা ছিল সিঙ্গাপুরে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে। কিন্তু সে যাত্রায় বেগম খালেদা জিয়া নানা বিবেচনায় সিঙ্গাপুর সফর বাতিল করেন। হঠাৎ করেই খালেদা জিয়া সেই সফর বাতিল করলে তখন বাধ্য হয়েই তারেক রহমান সিঙ্গাপুর থেকে লন্ডনে ফিরে যান। তাই এ নিয়ে সে সময় সিঙ্গাপুর ষড়যন্ত্র নামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময় সেই পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুরে কোন গোপন বৈঠক আয়োজন করা নিরাপদ মনে না করে বিএনপি-জামায়াতের তীর্থস্থান সৌদি আরবে এ গোপন বৈঠকটি আয়োজনের ব্যবস্থা করতে তৎপরতা শুরু করে। আর এরই মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে ওমরাহ পালনের ব্যবস্থাও হয়ে যায়। আর তাই হয়তো সৌদি আরব যাবার আগে এক বক্তৃতায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, "আওয়ামী লীগ সরকারকে আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না।" খালেদা জিয়ার এমন ধরনের অস্থির মন্তব্য নিয়ে কিছুদিন যাবতই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছিল।

এ প্রসংগে দেশের এক শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় শংকর কুমার দে তার সৌদিতে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তারেকের একান্ত বৈঠক "ঈদের পরে সরকার পতনের আন্দোলনের পরিকল্পন, শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছেন,'সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির ঘোষণায় যুক্ত হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবির। এ জন্য গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিদেশের মাটিতে। গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতা করছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সৌদি আরবে এক সঙ্গে ইফতারের নামে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধীর সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বড় ছেলে মাসুদ সাঈদী। বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও ওমরাহ পালন উপলক্ষে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এই ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলনকে বেগবান করতে নেতাকর্মীদের কোমড় বেধে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সরকার পতনের আন্দোলনের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ছক তৈরি করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারের বিরোধিতা করে আসার প্রেক্ষাপটের সুযোগটি লুফে নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তুলতে বিদেশীদের সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা অবস্থান করছেন। বর্তমানে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন উপলক্ষে সেখানে অবস্থান করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একসঙ্গে ইফতারের নামে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বড় ছেলে মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার বিষয়টিকে সরকার পতনের আন্দোলনের গোপন বৈঠকের প্রকাশ্যে মহড়া বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা।"

প্রখ্যাত সাংবাদিক-কলামিস্ট ও মহান অমর একুশে ফেব্রুয়ারির' আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি গানের রচয়িতা আবদুল গফ্ফার চৌধুরীর ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দৈনিক জনকন্ঠে 'পবিত্র ভূমিতে অপবিত্র চক্রান্তের বৈঠক' শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে বলেছেন,"সৌদি আরবের বৈঠকে বসে মাতা-পুত্র দেশে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য আবার কী নতুন পন্থা উদ্ভাবন করবেন তা আমি জানি না; তবে যা আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হয় গোটা বিএনপি সংগঠনটি এখন মাতা খালেদা পুত্র তারেকের হাতেই ষোলো আনা ছেড়ে দেবেন। পুত্র বিদেশে বসে লাঠি ঘোরাবেন। তার অনুগত দল সেই মোতাবেক দেশে নতুন নতুন তা-ব সৃষ্টির চেষ্টা করবে। সম্ভবত এই লক্ষ্যেই দল পুনর্গঠনের নামে বিএনপিতে তারেকের অপছন্দের লোকদের ছাঁটাই করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর বিএনপি নতুনভাবে গঠন করা হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা বর্জিত হয়েছেন। মির্জা আব্বাস উঠে এসেছেন মহানগরের নেতৃত্বে। শোনা যাচ্ছে, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শিরশ্ছেদ হবে। মহাসচিব পদে আসবেন তারেক রহমানের পছন্দের লোক। এইভাবে শুধু বিএনপিতে নয়, যুবদল, ছাত্রদলেও চলবে পার্জিং। তারপর খালেদা জিয়া থাকবেন নেপথ্যে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে বিএনপি পুনর্গঠিত হবে, জামায়াতের সঙ্গে তাদের আরও আত্তীকরণ ঘটবে। তারপর সরকার উচ্ছেদের নামে দেশে নব নব সংহার পরিকল্পনা শুরু করার ষড়যন্ত্র দেখা দিলে বুঝতে হবে এসবই হচ্ছে পবিত্র ভূমিতে বসে অপবিত্র সিদ্ধান্তের ফসল।"

এই বলেই শেষ করবো যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগস্ট মাস একটি ষড়যন্ত্রের মাস হিসেবে চিহ্নিত। এই মাসের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিশ্চিন্ন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ইতিহাসের নৃশংসতমতম গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছিল। ভাগ্যজোরে সে দিনের সে ভয়াভহ গ্রেনেড হামলা থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পেয়েছিলেন। আবার ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীবাদের দোসররা সারা দেশে ৫শ' স্থানে একযোগে বোমাহামলা করে তাদের জঙ্গিবাদী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিল। আবার আগস্ট মাসকে সামনে রেখেই সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের নামে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তাকে যেন আওয়ামী লীগ সরকার গুরুত্বহীন না ভাবেন। ভাবলে তাদেরকেই এর খেসারত দিতে হবে। ####