রাবি অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ড, ফেসবুকে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার

মাহবুবুল আলম
Published : 18 Nov 2014, 09:13 AM
Updated : 18 Nov 2014, 09:13 AM

১৫ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ৩টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর বিহাস এলাকায় রাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে 'আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২' নামের একটি সংগঠন। এর আগে এধরণের কোনো সংগঠনের নাম বাংলাদেশে শোনা যায়নি। সংগঠনটির ফেসবুক পেইজও খোলা হয়েছে ১৫ নভেম্বর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করার কাছাকাছি সময়ে। হত্যাকাণ্ডের ঘণ্টা খানেকের মাঝেই সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পেইজ খুলে সেই পেইজে স্ট্যাটাস দেয়। আমরা এতদিন দেখেছি, মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, এ রকম মানুষ হত্যাকান্ড চলিয়ে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী তার দায় স্বীকার করে থাকে, কখনও কখনও সেসব হত্যাকান্ডে ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে প্রচার করে। কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তার দায় স্বীকার করার ঘটনা এই প্রথম।

সে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয় আমাদের মুজাহিদীনরা আজকে রাজশাহীতে এক মুরতাদকে কতল করেছেন যে তার ডিপার্টমেন্টে ও ক্লাসে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছিল। আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর শক্তিতে ও আল্লাহর অনুমতিতে মুজাহিদীনরা আজকে এই মুরতাদকে কতল করেছেন। ইসলাম বিরোধী সকল নাস্তিক-মুরতাদ সাবধান !!! পরের স্ট্যাটাসটি দেয়া হয় দৈনিক সংগ্রামের ০৩ এপ্রিল ২০১০-এর একটি সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়- 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে দাড়ি কাঁটা ও পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তের শিক্ষক নিয়োগের পর ছাত্রীদের বোরকা পরে ক্লাস না করার নির্দেশ দিয়েছে বিভাগীয় সভাপতি ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম।… এই মুরতাদ তার যথাযথ প্রতিদান পেয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।'

১৬ নভেম্বর ৫টা ৪৭ মিনিটেও এ প্রসঙ্গে স্ট্যাটাস দেয় সংগঠনটি। এতে ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম নিলনের ছবি আপলোড করে তাতে লাল কালিতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে তারা লেখে- এ কে এম শফিউল ইসলাম, অপরাধঃ এপ্রিল ২০১০, শাস্তি প্রদানঃ নভেম্বর ২০১৪ We Don't Forget. Insha'Allah we will NOT Forget Others '. ফেসবুক পেইজটির কাভার ফটোতে পাঁচজনের ছবি দেওয়া আছে। এর মাঝে ব্লগার রাজিব, আশরাফুল আলম এবং এ কে এম শফিউল ইসলামের ছবিতে লাল ক্রস এঁকে লেখা হয়েছে- 'খতম'। এবার তাদের হিটলিস্টে আছেন- আসিফ মহিউদ্দিন এবং রাকিব মামুন। ছবিতে তারা লিখে রেখেছে- 'প্রথম প্রচেষ্টা সমাপ্ত, দ্বিতীয় প্রচেষ্টা আসছে'।

রাবি'র সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেটের নির্বাচিত সদস্য, প্রগতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, লালনভক্ত ড. একেএম শফিউল ইসলামকে কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে এ সম্পর্কে এখনও স্পষ্টভাবে কিছুই জানা যায়নি। হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল রাবি ক্যাম্পাস। ক্ষুনীদের গ্রেফাতার ও বিচারের বিচার দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চললেও ২০১৪-১৫ সেশনে প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। গতকাল ১৭ আগস্ট সোমবার রাবি শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্রলীগ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষে মানববন্ধন, র‌্যালী, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হয়। এ আন্দোলন ক্রমেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গত দু'দিনের অভিযানে ৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এতেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রসমিত হচ্ছে না।

শেষ করবো এই বলেই যে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মতে 'এ নামের কোনো সংগঠন বাস্তবে আছে কি না, আমার জানা নেই। হয়তবা প্রকৃত রহস্য আড়াল করতে বা ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে হত্যাকারীরা নতুন এ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এটা জঙ্গীদের একটা কৌশলও হতে পারে। তবে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মিডিয়াতে একে জঙ্গী তৎপরতা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। কাজেই অনতি বিলম্বে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের মাস্টারমাইন্ড জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশের প্রগতির চাকা সচল রাখতে হবে। না হলে আইএসআইয়ের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ একটি জঙ্গবাদী রাষ্ট্রে পরিনত হতে সময় লাগবে না।