স্মরণাতীতকালের জাঁকজমকপূর্ণ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল

মাহবুবুল আলম
Published : 21 Oct 2016, 12:43 PM
Updated : 21 Oct 2016, 12:43 PM

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীণ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সাতষট্টি বছরে পদার্পন করেছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৬-র বাঙালির মুক্তসনদ ৬-দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান, বিভিন্ন স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্বদানসহ বাংলাদেশের যত বড় বড় অর্জন তা আওয়ামী লীগের হাত ধরে ও এর নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটির বয়স সাতষট্টি বছর হলেও, এই সাতষট্টি বছরে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সরকার মিলিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে মাত্র সতের বছর, আর বাকি পঞ্চাশ বছরই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথেই থাকতে হয়েছে। বর্তমানে দেশের শাসনভার এই দল বা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতেই। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

রাত পোহালেই স্মরণাতীত কালের আওয়ামী লীগের জাঁকজমকপূর্ণ বিংশতম কাউন্সিল নিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয় সারা দেশের মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম উদ্দীপনা ও কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলা বলি করছে শুধু এই উপমহাদেশেই কেন পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল এমন বর্ণাঢ্য ও ঝাকজমতপূর্ণ হয়েছে কি-না তা কেউই জানেনা।  অন্যরকম বর্ণিল আলোকচ্ছটায় এখন উদ্ভাসিত পুরো রাজধানী। দুএকদিনের মধ্যে সারা দেশেই এই বর্ণিল আলোকছটা সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে মিটিং মিছিল করছে। আর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে ঐতিহাসিক সোহওয়ার্দী উদ্যান তাতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন মানুষজনকে এ সম্মেলনের ব্যপারে মানুষের কৌতুহলকে আরও উসকে দিচ্ছে। 'শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার' এই মূল স্লোগানে দলটির ২০তম ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সম্মেলন ঘিরে দলটিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সেই সঙ্গে গোটা দেশের মানুষেরও দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কী নতুন ঘোষণা আসছে, কেমনই বা নতুন নেতৃত্ব আসছে- এ নিয়ে সর্বত্রই এখন জম্পেশ আলোচনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নেতৃত্বে ও ডাকে এই দলটি  ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে চিরবঞ্চিত বাঙালী জাতিকে উপহার দিয়েছে, একটি স্বাধীন দেশ, একটি পতাকা ও একটি মানচিত্র। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের গণমানুষের কল্যাণে উপনিবেশিক সকল অন্যায় অত্যাচার ও শোষনের বিরুদ্ধে বার বার লড়াই সংগ্রাম ও আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে নিয়ে গেছে স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামে। শত ঘাত-প্রতিঘাত-সংঘাত পেরিয়ে, কত চড়াই-উতরাই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে একে পথ চলতে হয়েছে যা আজও অব্যাহত আছে। কিন্তু এ দলটি পদে পদে সকল বাধাবিপত্তি; দলিত মথিত করে যেতে হচ্ছে সামনের দিকে, প্রগতি ও অগ্রগতির পথে। বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূলধারা হিসেবে পরিগণিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সবসময়ই সংগ্রামী মানুষের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে দেশে বিরাজনীতিকরণ এবং পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কর্তৃক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বগ্রহণ, বিভিন্ন সামরিক স্বৈারচার বিরোধী আন্দোলন, এবং নব্বই পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্রের আড়ালে স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার অসীম সাহসী আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একটি পরীক্ষিত গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয়দলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে এ দলটি ও দলের নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলিয়ান হয়ে পরাজিত হয়নি কখনও। দলটির নেতাকর্মীদের ত্যাগ তিতিক্ষা সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে পিতার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন তাঁরই তনয়া শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ধ্বংস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে। শেখ হাসিনাই তার অবিচল সাহসী নেতৃত্বে তিন দফায় ক্ষমতাসীন হয়ে আবার দেশকে বাঙালীর চিরায়ত ধারায় পরিচালিত করে বিশ্বসভায় গৌরবের অংশীদার হয়ে ওঠেছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয়ে পঁচাত্তর পরবর্তী হতশ্রী, বিভ্রান্ত জাতিকে সুসংগঠিত করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গীনির্মূল, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মানবসম্পদের উন্নয়ন, অনাহার-অর্ধাহারী মানুষের সংখ্যা হ্রাস করে এক নবযুগের দিকে দেশ ও জাতিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন বাঙালী গণমানুষের কণ্ঠসর থেকে বিশ্ব মানবের ও আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আজকের যে বাঙালী জাতি বিশ্বসভায় নিজের আসনটুকু অর্জন করতে পেরেছে, তা আওয়ামী লীগ নামক দলটির কল্যাণেই। বাঙালী জাতির প্রতিটি অর্জনের নেতৃত্বদানকারী হচ্ছে প্রাচীন ও সুবিশাল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। একুশ শতকে এসে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে গৌরব তার সবখানেই আওয়ামী লীগ নামক দলটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি দল তথা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। দলের কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। সংগত কারণেই আওয়ামী লীগের এবারের আসন্ন কাউন্সিলটির প্রতি তৃণমূল কর্মী ও জনমানুষের প্রত্যাশাও একটু আলাদা।

বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক বৃহত্তম অর্থনীতির ধারক হতে চলেছে। মানব উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ সমমানের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার প্রত্যয় রয়েছে। আওয়ামী লীগের 'রূপকল্প-২০২১' এখন হাতছানি দিচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো স্বপ্ন এখন বাস্তব। আন্তর্জাতিক জরিপে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার পরিমাপ অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের বড় বড় যা অর্জন এসব অর্জনের বেশির ভাগই এসেছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিংশতম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশকে উন্নতির শিখড়ে নিয়ে যেতে সুনির্দিষ্ট 'রোডম্যাপ' ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। । এ লক্ষ্যে প্রণীত গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে একদিকে দলের নেতাকর্মীদের জন্য যেমন থাকছে সাংগঠনিক পরিকল্পনা ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। তেমনি দেশবাসীর জন্য থাকবে 'ভিশন-২০২১ ও ২০৪১' বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ কী কী করতে চায় তার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দর্শনে এবার নতুন যুক্ত হয়েছে ব্লু-ইকোনমি। এতে বলা হয়েছে 'শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সমুদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনী এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সব ধরনের সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমুদ্র খাত, যা ব্লু-ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সুবিস্তৃত ও সুসংহত করার উদ্যোগকে দর্শন হিসেবে গ্রহণ করেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, দলীয় রাজনীতির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকৌশল নির্ধারণে উন্নয়নমুখী রাজনীতিতে এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ৪৬ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ভূমিকা, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ঘোষণা ও কর্মসূচীতে নির্বাচনী ইশতেহারের আদলে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দর্শন, তৃতীয় অধ্যায়ে উন্নয়ন ও সুশাসনের সাতটি অগ্রাধিকারের কথা থাকছে। যেখানে রয়েছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও আইসিটি, বেসরকারী খাত এবং বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলো। চতুর্থ অধ্যায়ে থাকছে খাতওয়ারি চলমান অগ্রযাত্রা শিরোনামে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি।

এছাড়াও দলটির ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উল্লেখ থাকছে। এতে বলা হয়েছে- দেশের উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন হয়। অর্থনীতির ভাষায় যাকে 'সজোরে ধাক্কা' (বিগপুশ) বলা হয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দশটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও থাকছে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে। এতে বলা হয়েছে- ইতোমধ্যে ৫৬টি (সরকারী খাতে ৪২টি এবং বেসরকারী খাতে ১৪টি) অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সাতটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ (৮.০ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বেসরকারী ও সরকারী খাতে শিল্পায়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী দিনের জন্য আওয়ামী লীগে শক্তিশালী ও দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। অতীতের মতো এবারও একটি উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ যখন যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাস্তবায়ন করে। দেশ পরিচালনায় আমাদের যে অঙ্গীকার তা এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন হবে।

আওয়ামী লীগের বিংশতম কাউন্সিল নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশীদের মধ্যে যে আগ্রহ ও কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে তা স্মরণাতীতকালে কোন রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল বা জাতীয় সম্মেলন নিয়ে হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। শুধু জানা নেই বলছি কেন আমার এই আটান্ন বছর বয়সের জীবনে তা কখনো দেখিনি। এ আগ্রহ ও কৌতুহলকে উসকে দিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উদ্যাম গতিতে বাংলাদেশের মধ্যআয়ের দেশের দেশে উন্নীত হওয়ার উন্নয়নের কর্মযজ্ঞও।  দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল কেমন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। এ কাউন্সিলে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ে ব্যতিক্রম কি কি হচ্ছে এবং বিদেশ থেকে কোন অতিথি আসছেন কি না সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করলেও আওয়ামী লীগ কিভাবে প্রতিটি ইউনিট থেকে সরাসরি কাউন্সিলর নির্ধারণ করল সেটিও বিএনপি হাইকমান্ডের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। উল্লেখ্য, বিএনপির কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কোটায় সরাসরি কাউন্সিলর হিসেবে জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবার জাতীয় কাউন্সিলের আগেই প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে রংপুর থেকে এবং তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ফরিদপুর থেকে কাউন্সিলর করে জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাকে ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে কাউন্সিলর করা হয়েছে। জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে এভাবে কাউন্সিলর নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রশংসিত হয়েছে। তাই বিএনপি হাইকমান্ড এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।

এ কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে নেতৃত্ব পরিবর্তন বা নয়া নেতৃত্বের সমাহার ঘটবে বলে বলাবলি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু হবে তা দেখার জন্য সবাইকে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগই বা কতটুকু জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে আওয়ামী লগের তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলেরও কৌতুহল কিন্তু কম নয়। কেননা, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যেহেতু আওয়ামী লীগের আর কোন সম্মেলনের সম্ভবনা নেই; তাই এ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি  দেশের আপামর মানুষের কতটুকু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে তা নিয়ে অধীর অপেক্ষায় আছে অনেকেই।

কিন্তু আওয়ামী লীগের এ জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিল নিয়ে বিএনপি যে অস্থিরতায় ভোগছে তা কাউন্সিল নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ও অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বিএনপির মহাসচিবতো অভিযোগ করে বসেই আছেন যে, 'দুনীর্তি ও লুটপাটের টাকায় আওয়ামী লীগ এত জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিল করে দেশের মানুষের সাথে তামাশা করছে।' বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'আওয়ামী লীগ লুটের টাকায় সম্মেলনের আয়োজন করছে।' প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ'র স্মরণসভায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত চেয়ে নোমান বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগ সম্মেলনের নামে প্রদর্শনী করছে। তারা এই টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে? কারা এ অর্থের যোগান দিচ্ছে বা কোথা থেকে টাকা আসছে তা খতিয়ে দেখার বিষয়? একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমিও কোটি টাকা খরচ করার এ সম্মেলনের সফলতা চাই। কিন্তু সেই সম্মেলন যদি প্রতিহিংসার সম্মেলন হয় তাহলে জনগণের কাছে এ সম্মেলনের কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।

তাদের হয়তো জানা নেই, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যে দলে এমন নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী ধণাঢ্য ব্যক্তিরা আছে, যাদের এক বা দুজনই এমন কয়েকটি কাউন্সিলের টাকা শেখ হাসিনার হাতে দিতে পারে। এটা হতে পারে বিএনপি নেতাদের পরশ্রীকাতরতা। কারণ তারা যা জীবনে করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ তা কীভাবে করছে সে হিংসায় এখন হয়তো তার রাতের ঘুম হারাম হয়েছে গেছে বিএনপির। এর বাইরেও আওয়ামী লীগের এ জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিল আলোচনা সমালোচনার কমতি নেই। আমার সাথে সুসম্পর্ক আছে ঢাকার এমন কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু বলেছেন, আওয়ামী লীগের জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে এটা যেমন সত্য, তেমনি এ সম্মেলন নিয়ে অনেক কথাও বলাবলি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অপোনেন্টরা এমন আড়ম্বরপূর্ণ জাঁকজমক কাউন্সিল নিয়ে সমালোচনা করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বল এমন অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, সাফল্য ও অর্জন তা যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়নি বলে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করে মনে হয়েছে। এ বিষয়ে আয়োজকদের আরো দৃষ্টি দেয়া উচিত ছিল বলে তারা মনে করেন।

যাক, শেষ করতে চাই এই বলেই যে, শাসক দল হিসেবে সরকারি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডেও গতিশীলতা আনতে আওয়ামী লীগের বিংশতম কাউন্সিলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা দল ও দেশের জনমানুষ। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই মন্ত্রিসভায় জায়গা হওয়ায় দলের সাংগঠনিক দিকটিতে কিছুটা স্থবিরতা আসে। তবে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা ও দলীয় কার্যক্রম কিছুটা আলাদা রেখে আওয়ামী লীগ সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এতে সাংগঠনিক দিক খেয়াল রাখার জন্য আলাদা টিম কাজ করছে। ফলে সাংগঠনিক দিকটাও যথেষ্ট মজবুত রয়েছে। নেতৃত্ব নির্বাচনে এবারের কাউন্সিলে নতুন কোনো চমক থাকবে কি না সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল হিসেবে নেতৃত্ব নির্বাচনে আরও বেশি স্বচ্ছ হওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংগঠনকে সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। এতে দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী ও দুর্নীতিমুক্ত এমন নেতাদের নতুন কমিটিতে স্থান দিলে দল অধিক শক্তিশালী হবে। আমরাও চাই শাসক দল হিসেবে এ কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করুক একই সাথে সম্মেলন সফল হোক সে প্রত্যাশাও করছি।