লাখ টাকা কেজি মসলার পরীক্ষামূলক ১৫ বছর চাষ

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 7 Oct 2014, 05:51 AM
Updated : 7 Oct 2014, 05:51 AM

বিশ্বের সবচাইতে দামী মসলা বাংলাদেশে ১৫ বছর ধরে চাষ হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে । সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতার কারনে ময়মনসিংহসহ দেশের ৯টি বিএডিসি উদ্যানে পরীক্ষামূলক চাষ হলেও আজো সম্প্রসারিত হয়নি বলে দাবী করেছেন অনেকেই। বিশ্বের সবচাইতে দামী লাখ টাকা কেজি এই মসলা ফসলটির নাম জাফরান। জানা যায়, প্রাচীন যুগে পারস্য উপকূলীয় অঞ্চলে জাফরানের স্নিগ্ধ উজ্জল রঙের গুরুত্ব অনুধাবন করে আধ্যাতিক পরিবেশনায় এর ব্যাপক প্রচলন হয়। জাফরান উদ্ভিদতত্বের দিক থেকে ইরিডাসিয়া ফ্যামিলির অন্তর্গত। আরবী ভাষায় ফারান এবং ইংরেজীতে সাফরন । জাফরান কালক্রমে গৃহস্থালীর ব্যবহারে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ধীরে ধীরে কান্দাহার, খোরাসান, কাশ্মীরের বনেদী মহল ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে এর আগমন ঘটে।

২০০০ সালে বাংলাদেশের ৯ টি বিএডিসি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে জাফরানের চাষ শুরু হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা , গাজীপুরের কাশিমপুর ,পাবনা, রংপুর, বান্দরবন, জামালপুর , লামা এবং খুলনার দৌলনপুর বিএডিসি সার্ভিস সেন্টার। প্রতিটি বাগানে ১৫/২০ টি করে গাছ লাগানো হয় । তৎপরবর্তীতে প্রতিটি গাছের পুষ্পমন্জুরীতে প্রায় ২৫/৩০ টি করে ফুল ফোটে । বীজ তৈরী হতে সময় নেয় ৭০/৮০ দিন। মটরশুটির ন্যায় ছোট গোলাকার লাল রংঙের গাছ প্রতি ২০/৩০ টি করে বীজ হয় । প্রতিটি ফুটন্ত ফুলের পুংকেশর এবং স্ত্রী কেশর কাচাঁ অবস্থায় কেটে আলাদা করে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করা হয় । ৬/৭ ঘন্টা ভিজিয়ে রং সংগ্রহ করা হয় ।

আশানুরুপ ফলন পাওয়ার পরও যথাযথ পদক্ষেপ আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐ চাষ হ্রাস পেতে থাকে। অভিজ্ঞমহল জানিয়েছেন, জাফরান চাষের ধারাবাহিকতা থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। জাফরানের উপকারভোগীরা জানান, জাফরানী রঙ অনুষ্ঠানাদিতে বনেদী পোলাও , বিরিয়ানি ,জর্দা, কালিয়াতে ব্যবহার করা হয়। আনেক পান বিলাসী এর পাপড়ি পানের সাথে চর্বণ করেন। জাফরানী রঙ বিভিন্ন হারবাল ওষুধ প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় ব্যবহার হয় । এর রঙ নান্দনিক সাজসজ্জায় তথা বনেদী পার্লারগুলোতে মেহেদিও সাথে সংমিশ্রণে মোহনীয় উজ্জ্বল রং এর উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হচ্ছে । প্রকৃত জাফরানী রং দ্বারা আধ্যাতিক ইমামগণ চীনা প্লেটের মধ্যে পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখা পানি দ্বারা ধৌত করে রোগীকে খাইয়ে থাকেন। জাফরানী সরবত যে কোন অনুষ্ঠানে পরিবেশন যোগ্য । বাংলাদেশের মাটি জাফরান চাষের বিশেষ উপযোগী। তাই নতুন করে হলেও এর দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।