গোলাম আযম ও আজাজিলের স্বভাবগত নাম!

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 24 Oct 2014, 07:26 AM
Updated : 24 Oct 2014, 07:26 AM

গোলাম আযমের মৃত্যু মনে করিয়ে দিল আজাজিলের স্বভাবগত নাম! জ্বীন জাতির আদি পিতা আবুল জ্বীন তরানুছের জন্মের একলাখ চুয়াল্লিশ হাজার বছর পরে আল্লাহর আদেশে ফেরাস্তাগণ পঞ্চমবারে জ্বীনদেরকে ধবংস করেন। এ সময় আজাজিল নামক একটি সুন্দর জ্বীন বালককে তাঁরা দয়া পরবশ হয়ে হত্যা না করে আল্লাহর অনুমতি অনুসারে প্রথম আসমানে নিয়ে লালন পালন করতে শিক্ষা-দীক্ষা দিতে থাকেন।

আজাজিলের পিতার নাম ছিল খবিছ । খবিছ জ্বীনদের পঞ্চম নেতা হামুছের পুত্র । তার আকৃতি ছিল সিংহের মত এবং স্বভাবও ছিল ঠিক সিংহের মতই । তার শরীরে ছিল অসুরের শক্তি এবং চোখে মুখে ছিল ধূর্ততার ছাপ। জ্বীন জাতির সবাই তাকে ভয় করতো । কারও সাধ্য ছিলনা যে খবিছের অবাধ্য হয় বা তার কোন আদেশ অমান্য করে । খবিছ যার প্রতি অসন্তুষ্ট হতো তার আর কিছুতেই নিস্তার ছিলনা। আবার যে খবিছের বন্ধুত্ব লাভ করতে সমর্থ হতো তার ভয় করবার মত কিছুই থাকত না এ দুনিয়ায় । মোট কথা, খবিছ ছিল পাপিষ্ঠ জ্বীনদের একেবারে শিরোমনি ।

আজাজিলের মাতার নাম ছিল নীলবিহু । নীলবিহুও জ্বীন জাতির পঞ্চম নেতা হামুছের কন্যা । নীলবিহুর আকৃতি ছিল নেকড়ে বাঘের মত এবং স্বভাবও ছিল নেকড়ে বাঘের ন্যায় । ঐ সময় জ্বীন জাতির মধ্যে নীলবিহুর মত সুন্দরী নারী আর কেউ ছিলো না । সে যুদ্ধ বিদ্যাতেও যে কোন বীর পুরুষ জ্বীনের সমকক্ষ ছিল । ফেরেস্তাদের সাথে যখন জ্বীনগণের যুদ্ধ হয় তখন খবিছ ও নীলবিহু উভয়েই বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে নিহত হয় ।

এই উভয় হিংস্র প্রাণী সদৃশ দুটি জ্বীন দম্পতির সঙ্গমে আজাজিলের জন্ম । আজাজিল তার পিতামাতা উভয়ের স্বভাবই পূর্নমাত্রায় লাভ করে ছিল । সিংহ ও বাঘ যেমন আড়াল থেকে গোপনে শিকারের সন্ধান করে থাকে আজাজিলও ঠিক সেইরূপ মানবরূপ শিকারকে আক্রমন করে তাকে ঘায়েল করতে সক্ষম হয়। আজাজিলের আক্রমন থেকে আত্মরক্ষা করা মানবের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ।

আজাজিলের পিতার সারবুক নামে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী একজন বন্ধু ছিল । খবিছ তার বন্ধু সারবুকের হাতেই পুত্র আজাজিলের শিক্ষা-দিক্ষার ভার অর্পণ করে । আজাজিলের স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর । তাই কোন পাঠই তাকে একবারের অধিক বলে দেয়ার প্রয়োজন হতো না । সারবুক তার বন্ধু খবিছকে প্রায়ই বলতো- বন্ধু ! তোমার পুত্র আজাজিল ভবিষ্যতে একজন বিশেষ প্রসিদ্ধ ব্যক্তিতে পরিণত হবে । আমার শিক্ষকতা জীবনের ছাব্বিশ হাজার বৎসরের মধ্যে তোমার পুত্র আজাজিলের মত বুদ্ধিমান ও স্মরণ শক্তি সম্পন্ন ছাত্র আমি একজনও পাইনি । তবে তোমার পুত্রটি বড়ই বেয়াদব , অহঙ্কারি ও একগুঁয়ে । বন্ধুর মুখে পুত্রের প্রশংসা শুনে খবিছ আহলাদে আটখানা হয়ে বলত- বন্ধু ! আজাজিলের স্মরণ শক্তি প্রখর হবে না তো কার হবে? আজাজিল কার পুত্র এবং কার নাতি তাতো দেখতে হবে । আর বেয়াদব ও অহঙ্কারি বলে তুমি তার প্রতি যে দোষারোপ করলে সেটা তোমার ভুল । কেননা সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হয়ে সকলের সেরা ছাত্র হয়ে আর জ্বীনদের প্রবল পরাক্রান্ত বাদশা হামুছের নাতি হয়ে যদি সে গর্বিতই না হবে তবে তার এত বিদ্যা শিক্ষা করে লাভ কি? আর আমার বাপ দাদা পূর্ব পুরুষগণ সকলের নিকট চিরভক্তি শ্রদ্ধাই পেয়ে এসেছে। কিন্তু তারা কোনদিন কাউকেও সন্মান প্রদর্শন করেনি। কাজেই আমার ছেলে যে বেযাদব হবে তাতে আর আশ্চর্য কি? আমি কিন্তু এটাকেও তার মস্ত বড় একটা গুণ বলেই মনে করি ।

শিক্ষক সারবুক ও পিতা খবিছের মুখে প্রশংসা শুনে আজাজিলের বুক আনন্দে ফুলে উঠতো এবং তার অহঙ্কার ও বেয়াদবি আরও বেড়ে যেত। শৈশবকাল থেকেই আজাজিল ছিল অত্যন্ত রাগি, একরোখো , মিথ্যাবাদী ও ঝগরাটে স্বভাবের ।। পাড়ার অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারি করাকেই সর্বপেক্ষা আমোদজনক খেলা মনে করত । তার অত্যাচারে ছোট ছেলে-মেয়েরা তো অতিষ্ঠ হয়ে উঠতোই বয়ো:জেষ্ঠগণও সর্বদা আতঙ্কিত থাকতো, অথচ খবিছ ও হামুছের ভয়ে কেউ আজাজিলকে কিছু বলতে সাহস পেত না । যদি কখনও কেউ আজাজিলের বিরুদ্ধে তার পিতা- মাতার নিকট বা বাদশাহ হামুছের নিকট কোন অভিযোগ করত, তবে সে তাদের নিকট সুবিচার তো পেতোই না বরং উল্টো শান্তি ভোগ করত । কারণ, অভিযোগকারীগণ কখনই তাদের অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণ করতে পারত না । আজাজিল তাদের সাথে তর্কবিতর্ক করে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে তাদেরকেই অপরাধি সাব্যস্ত করে ছাড়ত ।

আজাজিলের শ'শ' দোষকে তার পিতামাতা গুণ বলেই গ্রহণ করত। যেহেতু আজাজিল ছিল পিতামাতার একমাত্র স্নেহের পুত্।র শেষ পর্যন্ত আজাজিল বাল্যকালেই পিতামাতারও নিতান্ত অবাধ্য হয়ে উঠেছিল ।তথাপিও খবিছ বা নীলবিহু তাদের পুত্রকে কখনও শাসন করতো না। বরং তার এই সমস্ত উৎপাত, অত্যাচার, অহঙ্কার, বেয়াদবি প্রভৃতিকে তারা সর্বদা ক্ষমার চোখেই দেখত । তাদের মনের ধারণা ছিল যে, বয়স হলে এসব দোষ আপনা আপনি দূর হয়ে যাবে। আজাজিলের পিতামাতা প্রদত্ত নাম আজাজিল হলেও পরবর্তীকালে সে আরও নামে অভিহিত হয় । সেগুলি তার প্রকৃত নাম না হলেও স্বভাবগত নাম ! সে এক এক সময়ে এক এক কাজের জন্য এক একটি নাম প্রাপ্ত হয় ।

ইবলিছ : আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়ে সে এই নাম প্রাপ্ত হয়

খবিছ : অপবিত্র বা দুষ্ট । আল্লাহর নাফরমানি করে সে অপবিত্র হয়ে যায় এবং চির জীবন দুষ্টামি করে অতিবাহিত করে । দুষ্টামির দ্বারাই সে মানবের দ্বারা চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষন, মামলা- মোকদ্দমা প্রভৃতি যাবতীয় পাপকার্যে লিপ্ত থাকে, এজন্যই এই নামকরণ করা হয় ।

বুমরবা : আল্লাহতায়ালার দয়া হতে বঞ্চিত ।

শয়তান : কুমন্ত্রণা , ধুর্ততার সাথে কুমন্ত্রণা প্রদান করেই সে মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করে ।

গবী: প্রথভ্রষ্ট । সে একজন উচ্চশিক্ষিত গভীর জ্ঞানী ও শ্রেষ্ঠ এবাদতকারী হওয়া সত্বেও পথভ্রষ্ট হয়ে এই নাম লাভ করে ।

আহরামান : দুষ্টের শিরোমণি । কিয়ামত পর্যন্ত সে চিরজীবন দুষ্টামী করেই অতিবাহিত করবে, দুষ্টামিতে তার সমকক্ষ আর কেউ নেই, সেজন্য তার এই নাম হয়েছে ।

মুয়াল্লিমূল মালাকুত : ফেরেস্তাদের শিক্ষক । এক সময় সে যাবতীয় ফেরেস্তার শিক্ষক নিযুক্ত হয়ে এই নাম প্রাপ্ত হয়েছিলো ।

মুস্তাজীবুদ্দাওযাত : আল্লাহতায়ালা তার যে কোন দোয়া কবুল করতেন বলে সে এই নাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন ।

খতীব আহলেন্নার : যাবতীয় দোজকের নেতা ।

গওল বিয়াবান : হিন্দুদের ভয় প্রদর্শন করে ও কষ্ট দেয় বলে তার এই নাম হয়েছে ।

আহরাম :রাজীম : কুকার্যে প্রবৃত্তকারী । মানবকে যাবতীয় কুকার্যে নিয়োজিত বলে সে এই নাম প্রাপ্ত হয় ।

মারীদ : আল্লাহ আদেশ অমান্যকারী

হামজাদ : মানব শরীরের প্রতি রক্ত বিন্দুর সাথে মিলিত হয়ে মানুষকে কু প্ররোচনা প্রদানকারী ।

নাফসে আখারা : কুপ্রবৃত্তি সমুহের পরিচালকসহ অসংখ্য নামে পরিগণিত আজাজীল ।

আমরা আজাজীলের উপরোল্লিখিত কোন নাম ও চরিত্রের সাথে গোলাম আযমের মিল খুঁজে পাই?