ময়মনসিংহে ডোল পিঁপড়া ডিম

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 11 April 2015, 08:06 PM
Updated : 11 April 2015, 08:06 PM


ময়মনসিংহে ডোল পিঁপড়া ডিম। পিঁপড়া গোষ্ঠির ডোল পিঁপড়া দেশিয় প্রজাতির গাছে বাসা বাঁধে । অনেকে স্থানে পিঁপড়া মানজাইল নামেও পরিচিত । আবহমান বাংলায় বরশি দিয়ে মাছ ধরার টোপ হিসাবে এই পিঁপড়ার ডিম উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।

কোন ধরনের চাষাবাদ বা পরিচর্যা ছাড়াই ডোল পিঁপড়া বেড়ে উঠে । লালার সাহায্যে একপ্রকার আঠা তৈরীর মাধ্যমে এরা গাছে বাসা বাঁধে ।এরা দেশীয় প্রজাতির গাছ ছাড়া বাসা বোনায় না । আম, জাম, কাঁঠাল, মেহগনি , বান্দর লড়ি প্রভৃতি দেশীয় প্রজাতির গাছে এরা ৪/৫ টি করে বাসা বাঁধে ।

প্রতিটি বাসায় ১শ গ্রাম থেকে ৫শ' গ্রাম পর্যন্ত ডিম পাড়ে । বছর জুড়ে এরা গাছে বাসা বানিয়ে বসবাস করে । চৈত্র , বৈশাখ , আষাঢ় , জৈষ্ঠ মাসে এরা ডিম পাড়ে ।


ময়মনসিংহের নবগঠিত তারাকান্দা উপজেলার রামপুর , দোহার , সাগুল্লাপুর, মাধবপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ডোল পিঁপড়ার হাজার হাজার বাসা । তবে এই গ্রামের কেউ ডোল পিঁপড়রা ডিম বিক্রি করেন না । স্থানীয় ও বহিরাগতরা টোপ হিসাবে মাছ শিকারের জন্য বিনা পয়সায় এখান থেকে ডোল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে থাকেন । এই এলাকার আব্দুল মান্নান, জলিল মেম্বার জানান , তাদের বাড়িতে শতাধিক গাছে রয়েছে ডোল পিঁপড়ার বাসা । আশে পাশের প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে তাদের মত ডোল পিঁপড়ার বাসা । কিভাবে কবে এই পিঁপড়া তাদের গ্রামে এলো জানতে চাইলে মান্নান জানান, তার ছোট ভাই হযরত আলীর ছিল মাছ শিকারের নেশা । ২০ বছর আগে সে একটি গাছের ডালে ডোল পিঁপড়া এনে তাদের বাড়ির একটি গাছে ছেড়ে দেয় । এরপর থেকেই এই পিঁপড়া ছড়িয়ে পড়ে এবং বাসা বাঁধে । এই পিঁপড়ার বাসায় কেউ ঢিল না ছুঁড়লে কিংবা ক্ষতি না করলে কাউকে তারা কামড়ায় না ।

ঐ গ্রামের হাফেজ আবু তাহের জানান, একদিন আম পাঁড়তে গিয়ে এদের বাসায় আঘাত করি । সাথে সাথে এরা উত্তেজিত হয়ে আমাকে কয়েকশ' কামড় দেয় । তবে এই কামড়ের যন্ত্রনা তীব্র নয় সহনশীল ।

এদিকে ময়মনসিংহ শহরের আদালত প্রাঙ্গন ও মুক্তাগাছা শহরের কলেজ রোডে এই পিঁপড়ার ডিমের ব্যবসা জমজমাট । এই দুই স্থানে প্রতিদিন প্রায় ২০/৩০ কেজি ডিম বিক্রি হয় । মুক্তাগাছার কলেজ রোডের ডিম বিক্রেতা জিন্নত আলী জানান, প্রকার ভেদে এবং ক্রেতার চাহিদা বুঝে ডোল পিঁপড়ার ডিম কেজি প্রতি ডিম ৩শ টাকা থেকে ৫/৬শ' টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করা হয় । ডিমের চাহিদা প্রচুর । অভিজ্ঞ মহলের মতে বণিজ্যিক ভিত্তিতে ডোল পিঁপড়ার চাষ এবং বাজারজাত করণের ব্যবস্থা করা হলে ডোল পিঁপাড়া চাষে অনেকেই এগিয়ে আসবেন ।


ছবি : বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে ওঠা ডোল পিঁপড়া (১) ডোল পিঁপড়ার বাসা (২) ডোল পিঁপড়ার ডিম দেয়ে টোপ হিসাবে মাছ শিকার (৩)