ময়মনসিংহে পাট

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 31 August 2016, 12:39 PM
Updated : 31 August 2016, 12:39 PM

ময়মনসিংহ জেলার সর্বত্র হাটে– মাঠে এখন পাট বিক্রি, কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। জেলার উপজেলারগুলির প্রতিটি বাজারে পাট ক্রয় বিক্রয় চলছে। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকারভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয় দেড় হাজার টাকা থেকে ১৬/১৭ হাজার টাকায়। এখন সেই পাটের দাম কমে যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ শ টাকায় ।কৃষি বিভাগ বলছে, সরকারিভাবে পাট ক্রয় শুরু হলে দাম বাড়বে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলায় ৯ হাজার ২৩ হেক্টর জমি পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল । এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে দেশি ৪ হাজার ৬৪৪, তোষা ১ হাজার ৯৯৩, কেনাফ ১ হাজার ২২১ ও মেস্তা জাতের পাট ৩১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যদিও বিগত বছরগুলির তুলনায় পাটের আবাদ কমেছে।

চলতি সপ্তাহে মুক্তাগাছা নতুন বাজার হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছিলেন কুমারগাতা গ্রামের রতন মিয়া । তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙ্গল, বীজ, সেচ, কাটা, পরিচর্যা, সারসহ যাবতীয় খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। পাটের উৎপাদন হচ্ছে ১০ থেকে ১২ মণ।

বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকায়। মুক্তাগাছার পাট চাষী প্রতাপ কর বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাটগাছ কাটা শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। তবে গতবার পাট চাষ করে লোকসান হলেও এবার তা হবে না।

পাটের ফড়িয়া ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, এই এলাকার চাষিরা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ায় অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রং ভালো হয় । পাট ব্যবসায়ী নাছির ফকির বলেন, ময়মনসিংহ জেলার সর্বত্র প্রতিমণ পাটের দাম ১২ শ টাকা থেকে ১৫শ' টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এ এলাকার পাটের মান ভালোহওয়ায় দাম তুলনামূলক বেশি পাচ্ছেন চাষিরা।

ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আলতাবুর রহমান জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ফুলপুরে ১ হাজার ২৬০ হেক্টর, নান্দাইলে ১ হাজার ১৫৩ হেক্টর, গফরগাঁওয়ে ১ হাজার ১০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসানুল বাশার জানান, এবার ফুলবাড়ীয়ায় গত বছরের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি পাট আবাদ হয়েছে। বাজারমূল্য বেশ ভালো। ফলে আগামীতে পাট আবাদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে । কয়েকজন পাট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশি পাট প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ ও তোষা পাট ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ক্রয় চলছে। তবে সরকারিভাবে কোনো বাজারদর তারা পাননি।

ময়মনসিংহের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে দেশি ১৩০ হেক্টর, তুষা জাতের ৭০, কেনা জাতের ২০ ও মেসতা জাতের ১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।

মইলাকান্দা ইউনিয়নের মইলাকান্দা গ্রামের আউয়াল হোসেনের ছেলে কৃষক মোঃ আলাল উদ্দিন জানান, ৫০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। প্রায় ১৩ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের দাম বাড়ায় উপজেলার মইলাকান্দা, সহনাটী, রামগোপালপুর, সিধলা ইউনিয়নেও পাট চাষ বেড়েছে বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল মুনসুর আহমেদ। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, কৃষক লাভবান হলে এর উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে।

গৌরীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাদিকুর রহমান জানান, গৌরীপুরের মাটি পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় আড়াইশ হেক্টর জমিতে দেশী, তোষা, মেছতা, টেনআপ সহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেশী। স্থানীয় পাট চাষীরা জানায়, চলতি মৌসুমে তাদের পাটের ফলন ভাল হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক জনাব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জানান, ময়মনসিংহে পাট চাষাবাদে কৃষকের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে । এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে জেলার চাষি পর্যায়ে ভিত্তি পাটবীজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে । ত্রিশালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চরাঞ্চলে পাট চাষীদের পাটের জাক দেওয়ার জন্য পানির সুবিধা প্রদানে একটি মটর পাম্প বিতরণ করেছেন। মুক্তাগাছায় পাটচাষীদের মাঝে বিনামূল্যে উচ্চ ফলনশীল তোষা পাটবীজ বিতরণ করা হয়েছে ।

ময়মনসিংহ শম্ভুগঞ্জ জুট মিল-এ মঙ্গলবার মৌসুমী পাট ক্রয় এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন-শামীম এন্টারপ্রাইজ লিঃ ও জুটমিল'এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফ.বি.সি.সি.আই-এর পরিচালক আলহাজ্ব আমিনুল হক শামীম। এসময় জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান,জুটমিল শ্রমিক কল্যান সমিতির সভাপতি মোঃ ওসমান গনি,সাঃ সম্পাদক বাবুল আক্তার,সাবেক ইউ:পি: চেয়ারম্যান এমদাদুল হক মন্ডলসহ পাট ব্যবসায়ী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পাট ক্রয় উপলক্ষে বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, এবার পাট মৌসমে ২লক্ষ মন পাট ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নিয়ে জুটমিলের পাট ক্রয় শুরু ।