ময়মনসিংহে বিএনপির দুর্দিনেও টানাপোড়েন

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 2 Sept 2016, 05:08 PM
Updated : 2 Sept 2016, 05:08 PM


ময়মনসিংহে বিএনপির রাজনীতিতে দু:সময় দুর্দিন চলছে । এতকিছুর পরও দলটির ময়মনসিংহের শীর্ষ নেতাদের মাঝে চলছে গ্রপিং । এতদিন গ্রুপিং এর বিষয়টি চাপা থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির ৩৮মত প্রতিষ্ঠা বার্ষির্কী পালন নিয়ে তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে ।


মামলায় জর্জরিত মূল ও অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতা-কর্মী অনেক আগেই রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাঠ ছেড়েছেন। আরেকপক্ষ গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, রয়েছেন আত্মগোপনে। আরেকটি পক্ষ সরকার দলের সাথে মিশে ফাঁয়দা লুটছেন। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ শাখার সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা একেএম মোশাররফ হোসেন নিজ বাসভবনে র‌্যালি শেষে আলোচনা সভা করেন । আর সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল , কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন । এই পৃথক কর্মসূচীকে ঘিরে আলোচনা চলছে ময়মনসিংহের রাজনৈতিক অঙ্গণের মাঠে।

এছাড়াও ময়মনসিংহ উত্তর, দক্ষিন জেলা ও মহানগর বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ থাকার কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ হওয়ায় এবং নেতা-কর্মীদের কাছে ভালো ইমেজ থাকায় তিনি বিগত সময়ে ময়মনসিংহে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন উপরোক্ত দুজনই। এই দুই নেতা নিজেদের কাঁধে মামলার বোঁঝা নিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকলেও সহকর্মীরা আত্নগোপনে থাকায় বিএনপির সাংগঠনিক ভিত এখন মৃতপ্রায়।

একইভাবে জেলার প্রতিটি উপজেলা ও শহর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও বিভিন্ন মামলার আসামি। অঙ্গসংগঠনের নেতাদের একই অবস্থা । মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই শিল্পপতি জাকির হোসেন (ক্লাসিক বাবু)বিদেশ থেকে ফেরার পর ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন ।

দীর্ঘ ২ বছর থেকে তিনি নিষ্কিয় । তিনি মুক্তাগাছা সংসদীয় আসনে এমপি হিসাবে নির্বাচন করে পরাজিত হন । এই আসনে একেএম মোশাররফ হোসেন বিএনপির টিকিটে ২ বার এমপি নির্বাচিত হন । গত ২ নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ সদর আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন । সম্প্রতি মুক্তাগাছায় নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল পরিদর্শনে এসে মুক্তাগাছা থেকে এমপি পদে নিজেকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দেন ।

এদিকে সদর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ সরকার দলের সাথে মিশে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন । যদিও তাদের এহেন কর্মকান্ডে কর্মী ও সমর্থনহীন হয়ে পড়ছেন তারা । বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে যারা ন্যূনতম সুবিধা পাননি সেই নেতা- কর্মীরাই এখন মাঠে আছেন । আর যারা সুবিধা নিয়েছেন তারা এখনও আওয়ামীলীগের সাথে মিলেমিশে সুবিধা নিচ্ছেন । এদাবী বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর ।

জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে যারা দায়িত্ব পালন করছেন ইতিপূর্বে তারা রাজনীতিতে কোনো সময়েই সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না । আর বর্তমানে মামলা ও পুলিশি ঝামেলা এড়াতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আরো ব্যবধান বাড়িয়েছেন। ফলে জেলার অন্য নেতাদের অনুপস্থিতিতে তাদের যেভাবে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল তা তারা করেননি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ বিএনপি নেতাদের যে ধরনের পূর্বপরিকল্পনার বা প্রস্তুতির প্রয়োজন- তা তাদের ছিল না। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বা সাংগঠনিক বিচক্ষণতার অভাবেই এমনটি হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে ময়মনসিংহে বিএনপির রাজনীতিতে ভাটা পড়েছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা একেএম মোশাররফ হোসেনের কাছে বিএনপির ৩৮ মত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পৃথকভাবে পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল , ময়মনসিংহে বিভিন্নস্থানে মূল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন করেছেন । আমাকে যেখানে ডাকা হয়েছে আমি সেখানে গিয়েই প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকেছি ।