ময়মনসিংহে দোয়েল পাখি অনেক ছিলো

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 2 Nov 2016, 07:24 PM
Updated : 2 Nov 2016, 07:24 PM

একদশক আগেও ময়মনসিংহ শহরে ছিলো জাতীয় পাখি দোয়েলদের ঘন উপস্থিতি । বুক ফুলিয়ে গানের শুরে ডেকে বেড়াতো এরা। ক্রমশ: এই শহরে বহুতল ভবন তথা নগরায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জঙ্গল, গাছপালা ও ঘাসজমি কেটে ফেলায় স্বাভাবিক বাসস্থান সংকটে পাল্লা দিয়ে কমে যাচ্ছে দোয়েল পাখির সংখ্যা।দোয়েলের মত অনেক পাখিই শহরের আকাশের উপর দিয়ে ডাকতে ডাকতে উড়ে যায়। কিন্তু ইট-সিমেন্টের জঙ্গলে নামে না। ভয়ার্ত দোয়েল এখন আর আগের মত বুক ফুলিয়ে ডাকেনা । আগে ময়মনসিংহ শহরের অধিকাংশ বাড়িতেই ছিলো খাম ও সিলিং। কিন্তু এখনকার বাড়িগুলিতে সেগুলি না থাকায় বাসা হারাচ্ছে অনেক প্রজাতির পাখি। পরিবেশ দূষণের ফলে আবহাওয়ার যে পরিবর্তন হচ্ছে তার ফলেও মারা যাচ্ছে অনেক পাখি। তা ছাড়া জলাশয়ের অভাবেও পাখির সংখ্যা কমছে এই শহরে।


মানুষের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায় ।সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়তনে ময়মনসিংহ শহর বেড়ে চলেছে। এখন আর এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে মানুষ পৌঁছতে পারে না। তাই বাসস্থান হারাচ্ছে দোয়েলের মত পাখি। যেহেতু ময়মনসিংহে ফল গাছের সংখ্যা কমছে তাই সমস্যায় পড়ছে পাখি। পোকামাকরের সংখ্যাও কমে গেছে। ফলে খাবারের অভাবও দেখা যাচ্ছে।


দোয়েল পাখির বাচ্চারা বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট পোকামাকড় খেত। পোকামাকড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের জীবনধারণও সঙ্কটে। অপরদিকে দোয়েলের সংখ্যা কমে গেলেও বেড়েছে কাকের সংখ্যা। দিন দিন আরও নোংরা হচ্ছে এই শহর, তাই বাড়ছে কাকের সংখ্যা। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবী, কাকের বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য শুভকর নয়।


কারণ, কাক অনেক পাখির ডিম খেয়ে নেয়। ফলে তাদের সংখ্যা আরও কমে যায়। একাধিক পরিবেশবিদ বলেন, শুধুই ময়মনসিংহ শহর নয়, সারা দেশ জুড়েই কমে যাচ্ছে পাখি। পাখি কমে যাওয়ায় শুধুই যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে তা নয়, এর ফলে সমস্যায় পড়বে মানুষও।


এখন যে সমস্যাগুলির জন্য পাখিদের অস্তিত্ব সমস্যায় পড়েছে, সেগুলি ভবিষ্যতে মানুষের অস্তিত্ব সঙ্কটেরও কারণ হবে। তারা বলেন, জীববৈচিত্র হল একটা চেন। সবুজের অভাবে যেমন বাসস্থান হারাচ্ছে মানুষ, তেমনই অক্সিজেনের উৎসও হারাচ্ছে সে। জলাশয় কমে যাওয়ায় যেমন অসুবিধায় পাচ্ছে পাখিরা, তেমনই জলেরও সঙ্কট হচ্ছে মানুষের।

তাছাড়া শহরে যে ধরনের আলো দেওয়া হচ্ছে সেগুলি মানুষ ও পাখি, উভয়ের শরীরের পক্ষেই ক্ষতিকর। অপরদিকে এই পাখিদের ওয়েটল্যান্ড ও নদী তীরবর্তী বাসস্থানের দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণেও দোয়েল পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। রাসায়ানিক পদার্থ অতিরিক্ত নির্গমন বিপজ্জনক ভাবে কমিয়ে দিচ্ছে দোয়েলের সংখ্যা। টিকে থাকা দোয়েলের বাসস্থান বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষণের দাবী সকলের।