বুয়েটে দরকার… আশু সমাধান…

মঞ্জুর মোর্শেদ
Published : 16 July 2012, 03:28 AM
Updated : 16 July 2012, 03:28 AM

অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মত টেন্ডারবাজি বা ছাত্র রাজনীতির কলুষিত দিকগুলো থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাজনীতি একরকম মুক্তই ছিল বলা যায় । যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের পাঠদান এবং সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্রদের সম্মিলন বুয়েট কে পরিনত করেছে একটি শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে ।এখানকার অনেক ছাত্র এখন সমহিমায় দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থান করছেন । অতীতে কিছু বিক্ষিপ্ত অনিয়ম ছাড়া বুয়েটে মোটামুটি সুস্থ অবস্থাই বিরাজ করছিল । কিন্তু সম্প্রতি প্রশাসনিক অনিয়মের দরুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চরম স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে । কিছুদিন ধরে ছাত্র এবং শিক্ষক রা একত্রে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ভিসি এবং প্রো-ভিসির যুগপৎ অনিয়মের বিরুদ্ধে । পত্রিকা গুলো এ স্থবির অবস্থা নিয়ে কোন ফলো আপ রিপোর্টিং এ যায়নি।

১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর দুটো বিএনপি এবং একটি আওয়ামি সরকারের কেউই বুয়েটকে সরকার দলীয় রাজনীতির কালো ছায়ায় আনতে চান নি ।এজন্য বুয়েট নিয়ে শিক্ষিত সমাজের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন গর্বও ছিল । কিন্তু এবারের আওয়ামি সরকারটি এর ব্যতিক্রম । তিয়াত্তরের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে আছে শিক্ষক সমিতি সর্বসম্মতিক্রমে তিন জন সর্বজন গ্রাহ্য ব্যক্তিকে ভিসি পদের জন্য প্রস্তাব করবেন । তারপর রাষ্ট্রপতি ঐ তিনজন থেকে একজন কে ভিসি হিসেবে মনোনীত করবেন । কিন্তু এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই প্যানেল কে তোয়াক্কা না করেই কর্তাদের ইচ্ছে মতই ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে । জা,বি র ঐ ভিসির পরিণতি আমাদের সবার জানা । এক্ষেত্রেও হয়ত তাই হতে যাচ্ছে ।

এখন জানা দরকার ভিসি এবং গংদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ গুলো কী কী ।

বর্তমান ভিসি প্রফেঃ নজরুল ইসলাম ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্জন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভি সি থাকার সময়ে ৭০ জনকে অবৈধ নিয়োগ দিয়েছিলেন । এর মধ্যে ১২ জন ছিলেন ওনার নিকটাত্মীয় । এ সময়ে খু বি র সম্পত্তি শাখার সম্পাদক আলি আকবর ভার্সিটির কোটি কোটি টাকা দামের প্রায় তিন বিঘা জমি প্লট আকারে বিক্রির অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। ইনি ঐ সময়ে ভিসি নজরুল ইসলামের বেক্তিগত সহকারি (পিএস) ছিলেন এবং তাঁর নিকটাত্মীয় বটে। ভিসি নজরুল ইসলামকে ঐ সময়ে শিক্ষক কর্মচারিদের সম্মিলিত চাপে ২০০১ সালে মেয়াদ উত্তির্ন হবার সাত দিন আগেই পদত্যাগ করতে হয়। গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠের একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন খু,বি তে থাকা অবস্থায় তিনি কোন দুর্নিতি করেন নি। (সুত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৪ই জুলাই)লিঙ্ক
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ৩৪ ধারায় বলা আছে শিক্ষক কর্মচারীদের রাজনীতি করার বৈধতা নেই । কিন্তু ক্যাম্পাসে জোরদার কার্জক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কর্মচারিদের দারা গঠিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ।এই পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব কামাল আহম্মদ একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী । ১৬/৩/২০১০ প্রথম আলোর রিপোর্টে বলা হয়েছিল ওনাকে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেবার চক্রান্ত চলছে। ২০১০এর জুনে রেজিস্ট্রার শাহজাহানের মেয়াদ শেষ হয় । নিয়ম অনুযায়ী ৩১ আগস্ট কন্ট্রোলার জসিম উদ্দিন আকন্দ কে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয়া হয় । এই নিয়োগের এক ঘন্টার মধ্যেই ভিসি তার ক্ষমতাবলে জসিম উদ্দিন আকন্দের স্থলে উপ রেজিস্ট্রার কামাল আহম্মদ কে ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেন । সাধারনত রেজিষ্ট্রার পদে যোগ্যতা অর্জনের জন্য ঐ বেক্তিকে উপ রেজিস্ট্রার পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয় । কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কামাল আহম্মদের এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছিল একবছর নয় মাস । এরপর রেজিষ্ট্রার পদে আবেদন চেয়ে দুই দফা বিজ্ঞাপন দিলেও কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে রেজিস্ট্রার নিয়োগ স্থগিত রাখেন ।

এবার আসি দু জন ছাত্রলিগ পরিচয় ছাত্রের রেজাল্ট পরিবর্তন প্রসংগে । বুয়েটের কোন আইনেই এরকম ভাবে রেজাল্ট পরিবর্তন সম্ভব নয়।এ দুজন ছাত্র হলেন মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন(পানি সম্পদ কৌশল) এবং সৌমিত্র সরকার (কেমি কৌশল ) । এরা দু জনই একটি নির্দিস্ট সাবজেক্ট বা কোর্সের পরীক্ষা না দিয়েই সেমিস্টার শেষ করে ছিলেন । এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে যদি সেমিস্টার ফাইনালের জন্য আপনি রেজিস্ট্রেশন করেন তাহলে যত গুলো কোর্স বা বিষয় আপনি নিয়েছেন সবগুলতেই আপনাকে পরীক্ষা দিতে হবে । আর যদি অসুস্থতা জনিত কারনে কেউ যদি অপারগ হয় তাহলে তাকে পুরো সেমিস্টার টিই ড্রপ করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন ছাত্রকে প্রথমে এডভাইজার টিচার পরে ডিপার্টমেন্ট হেড হয়ে ডিন , রেজিস্ট্রার হয়ে ভিসি বরাবর আপিল করতে হয়। যদি একান্ত জরুরি ক্ষেত্রে তাকে একটি সাবজেক্ট ড্রপ করতে হয় তাহলে তাকে ঐ বিষয়ে অকৃতকার্জ দেখান হবে।একবার অকৃতকার্জ হলে সে কখনই পরে ঐ বিষয়ে B এর উপরে পাবে না । লিঙ্কটি দেখুন

উক্ত দু জন ছাত্র কোন রকম নিয়ম না মেনে সরাসরি ভিসি কে দিয়ে পরীক্ষা পেছান । ভিসি নিজেই ফোন করে বুয়েট চিকিৎসককে মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে বলেন ।লিংক ওই দু জনের ঘটনাটির সময়েই একজন ছাত্রী তার সত্যিকারের অসুস্থতা কারনে একটি কোর্স বা সাবজেক্ট এর পরীক্ষা না দিতে পেরে ভিসি বরাবর আপিল করেও কোন কাজ হয় নি ।বলাই বাহুল্য অন্য সব বিষয়ে তার সর্বোচ্চ মার্ক থাকার পরেও। মেয়েটিকে জানান হয় বিধি মোতাবেক চলতে এবং তাকে অকৃতকার্জ দেখান হয়। । বহু দিন যাবত এ সংক্রান্ত আদেশের কপি গুলো গোপন ভাবে রক্ষা করা হয়েছিল। এখানে তার লিকড হয়ে যাওয়া অফিসিয়াল কপির অংশ টি দেয়া হল । ছাত্রীটির এবং ঐ দুজন ছাত্রের আপিলের কাগজ পত্র এবং সেই সাথে ভিসি মহোদয়ের দ্বৈত নীতির প্রমান , কপি গুলো দেখলেই আরও স্পষ্ট হবে আমাদের কাছে ।
এছাড়া শিক্ষকদের আরও একটি দাবি ছিল অবসরের সময় সীমা ৬০ থেকে ৬৫ তে বাড়ান । এটা অবশ্য ভিসি র সাথে আলচনা সাপেক্ষে করা যেতে পারে। ভিসি এবং তার সমর্থক রা এখন বলে বেড়াচ্ছে শিক্ষক রা জেনেই গেছে তাদের এ দাবি মানা হবে না , তাই শিক্ষক রা নিতান্তই স্বার্থের কারনে ভিসির অপসারন চাইছেন।বলাই বাহুল্য শিক্ষকরাই তাদের বিরুদ্ধে এই প্রচারকে অমুলকই বলছেন।

এমনকি কট্টর সরকার সমর্থক ব্যক্তিত্ব, স্থপতি মোবাসসের হোসেন (যিনি তার স্পষ্টবাদিতার জন্য আলোচিত)চ্যানেল ৭১ কে গতকাল বলছিলেন একজন শিক্ষক কখনই ক্লাস না নেয়া কে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন না । দেয়ালে পিঠ ঠেকার পর তাঁরা এটাকে শেষ চেষ্টা হিসেবেই নিয়েছেন ।

গত বছর ডিসেম্বরে ভিসি এবং প্রো ভিসি বিরোধী শান্তিপূর্ন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার প্রেক্ষিতে দোষীদের বহিস্কারের পরিবর্তে বরঞ্চ প্রো ভিসি হাবিবুর রহমান তার প্রকাশ্য ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন শান্তিপূর্ন কর্মসুচিতে যোগ দেয়া ছাত্রদের বিরুদ্ধে । কর্মসূচিতে যোগদানকারী সাধারন ছাত্রদের পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ থেকে বিরত ছিলেন মাসের পর মাস ।

এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে এড হক ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি । পাবলিকের টাকায় পোষা এই কলমধারীরা অপ প্রচার করছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ।সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং মুক্তিযোদ্ধা হিলালি স্যারকে এই সাংবাদিক রা হিজবুত তাহরিরের সমর্থক বলে প্রচার করছে এবং ডঃ মাহবুবুর রাজ্জাক কে বলছে রাজাকার , যার জন্মই হয়েছে ১৯৬৫ বা ৬৬ তে ।

যাই হউক গতকাল ছাত্র শিক্ষক এবং কর্মচারীরা মিলে আচার্জের কাছে স্মারক লিপি দিয়েছেন এবং আজ শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে এদের সবারই দেখা করার কথা । আশা করছি মাননীয় মন্ত্রী তার স্বভাব সুলভ প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটির আশু সমাধান করবেন।