সাগর-রুনি হত্যা: ভিসেরা এবং কিছু প্রশ্ন

মঞ্জুর মোর্শেদ
Published : 18 May 2012, 00:31 AM
Updated : 18 May 2012, 00:31 AM

চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়ার সুবাধে যতটুকু জানি যে একটা হত্যাকাণ্ড সেটা যতই সাধারন বা লো প্রোফাইল হক না কেন ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে ভিসেরা ( লিভার , কিডনি , অগ্নাশয় সহ যাবতীয় ভেতরের প্রত্যঙ্গ সমুহের) রিপোর্ট করা অনেকটা বাধ্যতামূলকই বলা যায়। । ব্যতিক্রম হতে পারে যখন মৃত্যুর কারণটা অনেকটাই স্পষ্ট থাকে, যেমন সুস্পষ্ট আত্মহত্যা (যেখানে সুইসাইড নোট পাওয়া যায়) বা দিনে দুপুরে সবার সামনে খুন হওয়া । সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে এর কোনটিই ছিল না । তাহলে এর তাৎক্ষনিক ভিসেরার নমুনা তখনই কেন পাঠানো হয়নি? বিশেষ করে এ রকম চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে এটা তো অনেকটা জরুরীই ছিল বলা যায়। কর্তব্যরত ফরেনসিক ডাক্তার বলেছিলেন, আঘাতগুলো এতোটাই গভীর এবং ব্যাপক ছিল যে মৃত্যুর কারন খুব সহজেই অনুমেয় । এ কথা বলে যে দায়িত্ব উনি পালন করলেন না , সেটা কি এড়াতে পারবেন? ওনাকে তো এর জন্য জিজ্ঞাসাবাদ বা কোন ক্রস এক্সামিনেশনেরও মুখোমুখি হতে হয়নি। এখানে দায়সারা গোছের কিছু একটা করে একটা ধামাচাপার মতো ব্যাপার আছে বলে যদি মনে করি তাহলে কি সেটা অমুলক হবে?

এ রকম একটা হাই প্রোফাইল কেইসে ডাক্তার এখানে ভিসেরার নমুনা নিতেই পারতেন । মেডিক্যালে দেখেছি ফরেনসিক এক্সপার্ট রা প্রায় সব মৃত্যুতেই ভিসেরার নমুনা পাঠিয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখতো কারন তার অটোপসির রিপোর্ট যদি সঠিক না হয় সেখানে ভিসেরার রিপোর্টই হচ্ছে ভরসা।এখানে হয়ত ডাক্তার তার রিপোর্ট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী(!!!) ছিলেন তাই ভিসেরা বা অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গের নমুনা আর পাঠাননি। হয়তো বা চাপও থাকতে পারে তাড়াতাড়ি কাজ সারার।

ফরেন্সিক ল্যাবে ভিসেরার নমুনা মাসের পর মাস রেখে দেয়া যায়। যদি এটা তখন করা হত তাহলে মৃত্যুর প্রায় সত্তুর দিন পর লাশ তোলার (এক্সুমেশন) নাটক করতে হতো না। এত দিন পরে বিশেষ করে উষ্ণ মণ্ডলীয় (ট্রপিক্যাল ) জলবায়ুতে ডিকমপোজড বা পচন হয়ে ভিসেরা বলে কিছু থাকার কথা না ।এখানেও এর ব্যতিক্রম হবার কথা নয় ।

আরও দেখলাম এরকম একটা চাঞ্চল্যকর খুনের ক্ষেত্রে ক্রাইম সিনে ছিল না কোন ইয়োলো টেপিং। আজকাল কৈশোরে পদার্পণ করা যে কেউই টিভিতে ডিটেকটিভ ধরনের সিরিয়ালগুলো দেখে বলতে পারে ইয়েলো টেপিং কি এবং কেন দেয়া থাকে। তাই আলামত নষ্ট করার যথেষ্ট সুযোগ এখানে সব সময়ে ছিল।

পুলিশের বর্তমান আই জি হাসান মাহমুদ একজন সেন্সিবল মানুষ হিসেবেই আমাদের কাছে পরিচিত । উনি যখন বলেছিলেন তদন্তে প্রনিধান যোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমরা তখন তাই আপ্ত বাক্য বলে জেনেছিলাম।কারন উনার ব্যক্তিগত ইমেজ আমাদের পজিটিভ ভাবতে বলেছিল। কিন্তু উনিই বা চেপে গেলেন কোন নির্দেশে?

যে পরিমান মিডিয়া কভারেজ এবং চাপ এ হত্যাকাণ্ডে ছিল , হত্যাকারী বা তার চক্রটি যদি সাধারন কেউ হতো তাহলে সহজেই ধরা পড়ত। তাই এটা কি ধরে নেয়া যায় না এখানে প্রতিপক্ষ (অপরাধীপক্ষ) খুবই শক্তিশালী?