শহীদ মিনারের সম্মান কি শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই!

আসাদ জামান
Published : 17 August 2016, 03:41 PM
Updated : 17 August 2016, 03:41 PM

মায়ের ভাষা রক্ষার নিমিত্তে নিজের জীবন দেয়া বোধহয় বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর সব দেশ বা জাতির ভাগ্যে এমন আত্মদানের কাহিনী নেই। আর তাইতো সেই ভাষা অর্জনরে মাস ফেব্রুয়ারি (বাংলায় ৮ ফাল্গুন) আসলেই আমাদের 'ভাষার মাস, বায়ান্নর মাস বা একুশের মাস বলে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়।

এই উচ্ছ্বাস, বেদনা অথবা ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া শহীদদের স্মরণ করা যা জাতির জন্য দরকারও বটে।  আর সেই বিরল আত্মদানের স্বীকৃতিও মিলেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতে আজ একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই অমর শহীদদের, যারা ভাষার জন্য তাদের জীবন দিয়ে গেছেন। আর এর সাথে সাথে আমরা পেয়েছি একটি শহীদ মিনার। যে মিনার ১৯৭১ সালে গুড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার প্রমাণ করেছিল যে, এই শহীদ মিনার'ই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছে বাঙালিদের।

কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় আমরা শুধু শহীদ মিনারকে উৎসব পালনের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছি। প্রেরণার উৎস হিসেবে নিতে পারিনি সব সময়ের জন্য। অন্য সব ক্যাম্পাসের মত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে একটি সুউচ্চ শহীদ মিনার। উচ্চতা আর অপরুপ লাল ইটের সৌন্দর্যর জন্য রয়েছে বেশ সুনাম। ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারটির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের উপর পা তুলে বসে আছে। কেউ আবার জুতো খোলার তোয়াক্কা করছেন না। গোল হলে বসে চলছে সেলফি তোলার হিড়িক, পাশাপাশি বাদাম খাওয়া, তামাশা, ঠাট্টাতো চলছেই।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি সাইনবোর্ড টানিয়েই দায় সেরেছে। যেখানে লেখা রয়েছে 'শহীদ মিনারের মূল বেদীদে ওঠা নিষেধ'। নিয়মের তোয়াক্কা তো আর করা যায় না। নিয়ম মানবে তো সমাজের ভ্যান-রিক্সা চালকেরা! একটু এদিক সেদিক হলেই বৃদ্ধ বাবার বয়সী লোকের গালে চড় মারতেও দ্বিধাবোধ করেন না তথাকথিত 'ভদ্রলোকেরা'। পা তুলে, বাদামের খোসা ফেলে কিংবা সেলফি তুলে যারা শহীদ মিনারকে অপবিত্র করছেন, তাদেরই আবার দেখা যায় ভাষার মাসে বর্ণাঅক্ষর যুক্ত পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে 'এই শহীদ মিনারের বেদীতে'ই এসেছেন ফুল দিতে। আহা কি ভালবাসা! কি শ্রদ্ধা!!

তাই শহীদ মিনারের প্রতি ভালবাসা একদিন কিংবা একটি মাসের জন্য নয়। টিকে থাকুক সবসময়। সকল ষড়যন্ত্রের মুখে আঙুল তুলে কথা বলার প্রেরণা দিয়ে যাক বারে বার।