দুর্নীতিঃ কারণ ও প্রতিকার

মো: মশিউর রহমান
Published : 11 July 2017, 08:42 PM
Updated : 11 July 2017, 08:42 PM

দুর্নীতি শব্দটি নীতির সাথে মিশে আছে। অর্থাৎ নীতি থেকে সরে যাওয়ার নাম দুর্নীতি। অন্যভাবে বলা যায় যখন কেউ নীতির বিপরীতে অবস্থান করে সে মূলত দুর্নীতি করে। যেমন ধরুন নীতিতে আছে অফিস সময় সকাল ৯ ঘটিকা থেকে বিকেল ৫ ঘটিকা, এখন কেউ যদি কোন বৈধ কারন ছাড়া বিকেল ৪ ঘটিকায় অফিস ত্যাগ করে তাহলে সে দুর্নীতি করল। আবার কেউ যদি প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার লক্ষে বিকেল ৫:৩০ ঘটিকায় অফিস ত্যাগ করে তাহলে সে কিন্তু দুর্নীতি করেনি। একইভাবে রাষ্ট্রে বসবাসকারি কেউ যখন সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় আইনের বাহিরে যায় তবে সে দুর্নীতি করে। তবে ধর্মীয় কিংবা প্রথার কারনে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় আইনের চেয়েও কঠোর জীবন – যাপন করে তাহলে সে দুর্নীতি মুক্ত থাকল। পরক্ষনে কেউ যদি ধর্মীয় নীতি বা স্থানীয় প্রথার কারনে রাষ্ট্রীয় আইনের চেয়ে শিথিল জীবন-যাপন করে তাহলে তার মানে সে দুর্নীতি করল। যেমন – রাষ্ট্রীয় আইন হল ট্যাক্স দেয়া, এখন কেউ যদি ট্যাক্স ও দেয় আবার যাকাতও দেয় তাহলে সে আরও ভাল মানুষ হল। অপরদিকে ধর্মীও বাণী হল প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিয়ে কর আর রাষ্ট্রীয় আইন হল ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স হলে বিয়ে কর। সুতারং কেউ যদি ধর্মের উছিলা দিয়ে এবং ১৮ বছরের আগে বিয়ে করে তাহলে সে দুর্নীতি করল।

এতক্ষণের আলোচনায় দুর্নীতি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া গেলো। এখন দেখা যাক দুর্নীতির বাস্তব চিত্র। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর এক জরিপে দেখা গেল যে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের দুর্নীতি হয়। দুর্নীতির হারে ১৪৬ টি দেশের মধ্যে ১০৬ টি দেশের স্কোর হল ১০ এর মধ্যে ৫ বা তার কম, এর মধ্যে আবার ৬০ টি দেশের স্কোর হল ৩ বা তার কম এবং ২ এর কম পেয়েছে বাংলাদেশ সহ বেশ কয়েকটি দেশ। এখানে যার স্কোর যত কম সে তত বেশি দুর্নীতিপরায়ণ দেশ।

এখন দেখা যাক দুর্নীতির কারন ও কোথায় তার প্রতিকার। দুর্নীতির প্রধানতম কারন হল নীতিহীন লোভ এবং ভয় থেকে মুক্ত থাকা। মানুষ জন্মগতভাবে অনেকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায় এর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল লোভ। লোভ আরও বিস্তৃতি লাভ করে নিতিহীন লোভে পরিনত হয় যখন আইনের সাথে সাথে ধর্মীও অনুশাসন ও স্থানীও প্রথার বাধ্য – বাধকতা থেকে মানুষ মুক্ত থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমাদের ছোট বেলায় দেখেছি কেউ যদি এসএসসি পরীক্ষায় নকল করে ধরা পরত তাহলে সে পরীক্ষার হল থেকে আর বাড়ি না এসে আত্মগোপনে চলে যেত। অথচ বর্তমানে দেখা যায় শিক্ষক কিংবা পিতা – মাতাই সন্তানের জন্য নকল সরবরাহ করে। এর মানে হল লোভকে ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি বরং দুর্নীতি সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থাৎ স্থানীয় প্রথা বা ধর্ম দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। একই ভাবে আমরা বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি অফিসে কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য অনিয়ম এর উদাহরণ দেকতে পাই। সুতারং একথা স্পষ্ট সে লোভ যখন ভয় (আইন, ধর্ম বা স্থানীয় প্রথার ভয়) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না তখন অনিয়ম বেড়ে যায়। অনিয়মের আরেক নাম হল দুর্নীতি।

দুর্নীতি হবার আরেকটি কারন হল আইন যখন মানুষের জীবন – যাপনের উপযোগী করে তৈরি করা হয় না। তাই জীবনের প্রয়োজনে আইনকে পরিবর্তন করতে হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় বাংলাদেশের অনেকেরই বিদেশে ব্যবসায়ের জন্য বিনিয়োগের সক্ষমতা আছে অথচ আইন সেব্যাপারে যথেষ্ট সহায়তা করছে না অথবা নীতি – নির্ধারকরা এ ব্যপারে কম ভাবছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একজন অধ্যাপককে বিদেশে কোন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করার জন্য হয়তো ফি দিতে হবে সে ব্যাপারেও আইন সহায়তা দিচ্ছে না। এজন্য দেখা যায় অধ্যাপক সাহেব হয়তো অবৈধ পন্থায় অর্থ পাঠাচ্ছে আর কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করছে। অর্থাৎ যথাযথ আইনি সংস্কারের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একজন সম্মানিত অধ্যাপক দুর্নীতি করল। তাই মানুষের জীবনকে এবং অর্থনীতিকে বুঝে আইনের সংস্কার জরুরী, অন্যথায় সাধারন ভাল কাজগুলোও দুর্নীতির কাতারে যোগ হয়ে যায়। যা একসময় সাধারন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। তাই দুর্নীতি কমানোর জন্য একদিকে যেমন অবৈধ লোভের বিরুদ্ধে কার্যকর ভয় দরকার অন্যদিকে জীবনের প্রয়োজনে আইনি সংস্কারও প্রয়োজন।

মোঃ মাশিউর রহমান, ব্যাংকার