শিক্ষা অতি সাধারন এবং প্রচলিত একটি শব্দ হলেও এর মাহাত্ম অনেক ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সাধারন ভাবে শিক্ষা বলতে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস কিংবা অভ্যাস সম্পর্কে জানাকে বুঝায়। শিক্ষা দেয়া সম্পর্কে এই ধারনা পোষণ করা হয় যে শিক্ষার্থীরা খালি বাক্স এবং শিক্ষকগন তাদেরকে শিক্ষা দিয়া ভরে দিবেন। বাস্তবতা হল শিক্ষার্থী খালি বাক্স নয় বরং একটি শস্যের দানা। কৃষক যেমন শস্যের দানা রোপণ করে প্রয়োজনীয় যত্ন নেন অর্থাৎ মাটি, পানি, সার এবং প্রয়োজনীয় আলো দিয়ে দানা থেকে গাছ এবং গাছ থেকে আবার দানা উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যান এবং একসময় সফলও হন শিক্ষককেও তেমনি শিক্ষার্থীদের যত্ন নিয়ে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থীদের যত্ন নেয়ার প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিতে আছে ব্যাপক ভুল ধারনা এবং কার্যক্রম। আমাদের মত অনেক দেশেই বই, খাতা এবং কলমকে শিক্ষার একমাত্র উপকরন মনে করা হয়। কোথাও যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার এবং মোবাইল এর মত উপকরণ। অপরদিকে শিক্ষার উপায় সম্পর্কে বলা হয় পড়, লিখ এবং কর (অঙ্ক)। এ তিনটিই অবস্থান করে মানুষের মাথায় অর্থাৎ মাথার ব্যবহার সম্পর্কে জানাই হল শিক্ষা। বাস্তবতা হল মাথার ব্যবহার শুধু শিক্ষা নয়। শিক্ষার জন্য মানুষ কে তার অন্তর, মাথা, হাত এবং মুখের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। অন্তর বা হৃদয় মানুষকে শুদ্ধতা দেয়, তাই অন্তর দিয়ে ভালোবাসা যায় আর ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায় অন্য আরেকজনের হৃদয়। হৃদয়ের মাধ্যমে সম্পর্কের বাপ্তি ঘটানো যায়। আমরা তো বেঁছে থাকি সম্পর্কের জন্যই। তাই সম্পর্ক ধরে রাখা কিংবা বাড়ানোর জন্য সবার প্রথমে প্রয়োজন অন্তরের শিক্ষা এবং এর পরেই আসবে মস্তিস্কের উন্নয়ন। মস্তিস্কের উন্নয়ন হৃদয়কে প্রশারিত করে।
হাতের ব্যবহার সে তো আমরা অনেকেই জানি না। আমরা অনেকেই হাত দিয়ে শুধু কম্পিউটার কিংবা মোবাইল এর ব্যবহার জানি। অনেকে তাও জানি না। হাতের অনেক কম ব্যবহার জানি বলেই আজ বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুধু বাংলাদেশেই নয় এমনটা পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখা যায়। অথচ হাত সৃষ্টিকর্তার এক অপার মহিমা, এক অনন্য সৃষ্টি। হাত দিয়েই তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সব নকশা, চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি এবং আরও অসংখ্য শিল্প। অথচ আজকের শিক্ষা আমাদের ভাল করে একটি ডিম ভাজতেও শিখাতে পারছে না। আমরা হাতের ব্যবহার শিখছি না।
মুখ কিংবা জিব্বা দিয়েও যেমন মানুষের হৃদয় জয় করা যায় আবার হৃদয় ভাঙ্গাও যায়। জিব্বার ব্যবহার যেমন ভয়ংকর শত্রুর জন্ম দেয় একই ভাবে হৃদয়ে জায়গা দেয়ার মত মিত্রের সৃষ্টি করে। তাই জিব্বার নিয়ন্ত্রণ অবশ্য কর্তব্য। জিব্বা দিয়েই মিথ্যার জন্ম হয় আর মিথ্যা দিয়ে ধ্বংসের সৃষ্টি হয়। তাই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ মুখ ও জিব্বার ব্যবহার।
এতখনে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কোথা থেকে শিখবো এবং কিভাবে শিখবো? স্বাভাবিকভাবে বই, খাতা এবং কলমকে শিক্ষার একমাত্র উপকরন মনে করা হলেও বাস্তবে শিক্ষার রয়েছে ব্যপক ও বিস্তৃত উপকরণ। শিক্ষার সবচেয়ে বিস্তৃত ও বিশ্বস্ত উপকরণ হল সৃষ্টি ও স্রষ্টা থেকে শেখা। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হল মানুষ এর পরেই আছে মহাবিশ্ব ও অন্যান্য জীব- জন্তু। রয়েছে মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার অমিও বাণী ধর্মগ্রন্থ এবং সর্বশেষ আল-কুরআন। তাই মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য সবার আগে জানতে হবে মানুষ ও মানুষের চিন্তা- চেতনার রহস্য। জানতে হবে মহাবিশ্ব ও অন্যান্য জীব- জন্তু সম্পর্কেও, কারন এরা সবাই মানুষের সেবা দেয়ার জন্য, মানুষের মঙ্গলের জন্য। আজ যখন আমাদের শিক্ষা মহাবিশ্ব ও অন্যান্য জীব- জন্তুকে ধংশ করতে শিখায় তখন আমরা মূলত আমরা আমাদেরই ধ্বংস করি। অর্থনীতি যখন কেবলি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্ন্যনের কথা বলে তখনই আমরা জাতীয় সুখ কিংবা সমৃদ্ধিকে ধংশ করে ফেলি। ধর্মগ্রন্থ যখন ময়লা আর ধুলায় ভরে যায় ধর্ম ব্যবসায়িরা তখন আনন্দিত হয় কারন মিথ্যা তো তখনই মানুষের অন্তরে প্রবেশ করানো যায় যখন মানুষ অজ্ঞ থাকে।
তাইতো যখন শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে আচরণিক পরিবর্তন। শিক্ষা হবে হৃদয়, মাথা, হাত ও মুখের । শিক্ষা চলবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। শিক্ষার মাধ্যম হবে সৃষ্টিজগত এবং আলা-কুরআন। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের যত্ন নিবেন সুপ্ত মেধার বিকাশের জন্য। সে শিক্ষা মানবতার মুক্তি বয়ে আনবে।
মোঃ মশিউর রহমান, ব্যাংকার