সিআইবি-এআইবি পাশাপাশি কেন নয়?

মেঘ
Published : 10 Feb 2017, 07:56 PM
Updated : 10 Feb 2017, 07:56 PM

ব্যাংকিং নামক ইন্ডাস্ট্রি যখন বড় পরিসরে পা ফেলা শুরু করলো তখন ঋণ দেয়ার সময় একই ব্যক্তির নামে অন্যত্র অথবা একই প্রতিষ্ঠানের নামে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে ঋণ আছে কি না জানার সুবিধার্থে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতার নামে 'গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ' এ মর্মে চিঠি পাঠাতো। সেই চিঠির উত্তর সাতদিনের ভেতর না এলে ধরে নেয়া হতো ঐ ব্যক্তির নামে আশেপাশের ব্যাংকে কোন ঋণ নেই।

এ পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সিআইবি (CIB) অর্থাৎ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (Credit Information Bereau) চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহণকারী গ্রাহকদের নিয়ে। প্রথমে এ রিপোর্টিং হতো ডস (DOS) ভিত্তিক ফক্সপ্রো (FoxPro) প্রোগ্রামে। গ্রাহক থেকে প্রাপ্ত পূরণ করা ইনকোয়ারি ফরম হেড অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর শাখা এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতো। বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে সে রিপোর্ট আবার আসতো-এভাবে সপ্তাহ লাগতো একটি রিপোর্ট পেতে।

জাভা, ওরাকল এসব প্রোগ্রামের ব্যবহারের সাথে সাথে সিআইবি রিপোর্টিং যেমন সহজ হয়েছে তেমনি দ্রুত হয়েছে রিপোর্ট পাবার গতিও। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিঃসন্দেহে বাহবা পাবার যোগ্য। ন্যাশনাল আইডি কার্ড, ইটিআইএন এর কারণে বর্তমানে নাম দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ঋণ প্রাপ্তির সম্ভাব্যতাও অনেকাংশে হ্রাস করা গেছে। যেসব সমস্যা এখনো রয়ে গেছে তার ভেতর অন্যতম হলো বাংলায় লেখা নাম, অন্যদিকে ইংলিশে তথ্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা।

প্রতি কর্মদিবসে ব্যাংকগুলোতে এনবিআর, দুদক,এন্টি মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল টাস্কফোর্স ইত্যাকার সংস্থা কোন না কোন গ্রাহকের তথ্য চেয়ে পত্র দিচ্ছে। পত্রগুলোতে অধিকাংশ সময় বাংলায় একজনের নাম, বড়জোর ঠিকানা লেখা থাকে। উদাহরণস্বরূপ জাহাঙ্গীর হোসেন নামটি লিখা- এ নামটি ইংলিশে কয়েকভাবে লিখা যায় –
Jahangir
Zahangir
Gahangir
Jahangiir
Jahangeer
Hosen
Hossen
Husen
Hussen
Hussain
Hossain

এভাবে সারাদিনে যদি এমন চিঠি আপনি গড়ে ৩০টি পান (৫০টিও আসে কোন কোন দিন) তাহলে বিন্যাস সমাবেশ করে আসলে আপনি কতবার একজনকে খুঁজতে হয় তা কি গুণে দেখেছেন?

চলমান বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি তাদের ঋণগ্রাহকদের ডাটাবেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিমাসে হালনাগাদ করে তুলে দিতে পারে, তাহলে হিসাবধারীদের তথ্য তুলে দেয়া কি খুব কঠিন কিছু?

সিআইবি এর সাথে তাই এআইবি (AIB) বা  একাউন্ট ইনফরমেশন ব্যুরো (ACCOUNT INFORMATION BEREAU) এমন একটি ডিপার্টমেন্ট চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকারদের মূল্যবান কর্ম ঘণ্টা সাশ্রয় করতে পারে অনায়াসেই। কোন ব্যক্তি হিসাব খুলতে এলে এআইবি থেকে সন্তোষজনক রিপোর্ট প্রাপ্তির পরই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক একাউন্টটি খুলতে পারবে।

সন্তোষজনক রিপোর্টের  মাপকাঠি বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিতে পারে- যেমন এনআইডি সঠিক কি না, জঙ্গী অর্থায়নের সাথে জড়িত কি না, দেশের বাইরে থাকে কি না, সব ব্যাংক মিলিয়ে পাঁচটির বেশী হিসাব থাকতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। ফিন্যান্সিয়াল পুলিশিং এর দায়িত্ব যখন ব্যাংকারের কাঁধে দেয়া হয় তখন সে কাজ চালানোর জন্য সহযোগী উপাদান ও শক্ত কার্যকর হওয়া জরুরি। ন্যূনতম কোনো অস্ত্র ছাড়া পুলিশিং দিন দিন কঠিনতর হচ্ছে।

সিআইবি ও এআইবি এর সমন্বিত প্রয়োগ ক্ষুদ্র হলেও সে অস্ত্র হতে পারে, প্রয়োজন শুধু ভেবে উপায় উদ্ভাবনের।