ভারতীয় নবী

মেসবাহ
Published : 15 Sept 2017, 04:59 PM
Updated : 15 Sept 2017, 04:59 PM

পৃথিবীতে প্রায় সোয়া লক্ষ নবী প্রেরিত হয়েছেন। পবিত্র কোরানে মাত্র ২৫ জন নবীর কথা উল্লেখ রয়েছে যারা সবাই মধ্যপ্রাচ্য অর্থ্যাৎ পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা কেন্দ্রিক। আবার আল্লাহ তায়ালা এও বলেছেন যে এমন কোন জাতি নেই বা এমন কোন দেশ নেই যাদের নিকট নবী প্রেরণ করা হয়নি। ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে এখানে কি কোন নবী প্রেরিত হয়েছেন? আমি আজকে এদিকটার প্রতি আলোকপাত করছি।

১. পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও প্রথম নবি আদম (আ:) অবতরণ করেন শ্রীলংকায়। সেখানে পর্বতচূড়ায় এখানো তাঁর পায়ের ছাপ রয়েছে। ইংরেজিতে একে বলে Adam's peak। শ্রীলংকা ও ভারতের মূল ভূ-খন্ডের (Mainland India) মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু সরু দ্বীপ। আদম (আ:) এই দ্বীপগুলো ধরে সাঁতরে ভারতে আসেন বলে মানচিত্রে এদের চিহ্নিত করা হয়েছে Adam's Bridge নামে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী ভারতে প্রেরিত হয়েছেন। তাই, ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

২. পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপটেমিয়াকে ঘিরে বিকশিত হয় মানবজাতি। ছড়িয়ে পড়ে আশে পাশের ভূ-খন্ডে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ককেশাস অঞ্চল থেকে ইরান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে (Iran>Aryan) বা আর্যরা। আর্যরা সাথে করে নিয়ে আসে বৈদিক আর্য ভাষা। পরবর্তীতে ব্যাকরণবিদ পাণিনি ও টীকাকার পতঞ্জলি এর সংস্কার করেন। ফলে এর নাম হয় সংস্কৃত।

আর্যদের ভারত জয়ের কাহিনীই রামায়ন। প্রকৃতপক্ষে রাম ছিলেন একজন নবী যিনি বৈদিক আর্য ধর্মের প্রবর্তক। রাবণের নেতৃত্বাধীন অনার্যরা রাম (আ:) এর নিকট পরাভূত হয়। রাম (আ:) অনেক বড় নবী ছিলেন।

দুটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে। সিন্ধু>হিন্দু>ইন্দু এর সঙ্গে এশিয়া যোগ করে ইন্দোনেশিয়া শব্দের উৎপত্তি। অর্থ্যাৎ ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত রাম (আ:) এর নব্যুয়ত বিস্তৃত ছিল। ইন্দোনেশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতির নাম 'মেঘবতী সুকুর্ণপুত্রী' মালশিয়ার রাজধানী 'পুত্রজায়া বা থাইল্যান্ডের রাজা 'ভূমিবল' শব্দগুলো সংস্কৃত। অর্থ্যাৎ বৈদিক আর্য ধর্ম অনেক বড় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।

রাম (আ:) এর মৃত্যুর পর বৈদিক আর্য ধর্ম স্থানীয় অনার্য ধর্মগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। এভাবে আর্য অনার্য মিলে মিশে জন্ম হয় হিন্দু ধর্মের । জন্ম হয় ৩৩ কোটি দেবতার। বৈদিক আর্য ধর্মের হারায় তার জৌলুস। ব্রাহ্মণরা হয়ে ওঠেন সর্বেসেবা। নানা অনাচার ও পাপাচারে ভরে যায় ভারত। যুদ্ধের তান্ডবে মারা যায় বহু মানুষ। এই অন্ধকার সময়ে আরেকজন নবীর আবির্ভাবের প্রয়োজন হয়।

৩. তিনি হচ্ছেন গৌতম বুদ্ধ (আ:)। গৌতম বুদ্ধ ছিলেন একজন ক্ষত্রিয় রাজপুত্র্র। তিনি ভারতের যুদ্ধকালীন সময়ে শান্তির দূত হিসেবে আর্বিভূত হন। গৌতম বুদ্ধের অন্যতম সুন্নত ছিল মেডিটেশন যা এখনো নানা প্রকরণে টিকে আছে। গৌতম বুদ্ধের নব্যুয়ত লাভের সাথে সাথে রাম (আ:) এর নব্যুয়ত রহিত হয়ে যায়। প্রাচীন ভারতের মহান সম্রাট অশোক সারা জীবন যুদ্ধ করে শেষ জীবনে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। তক্ষশীলা, নালন্দা, সোমপুর ইত্যাদি বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষালয়। চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়েন, মা হুয়ান, হিউয়েন সাং, বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে দীক্ষা লাভের জন্য ভারতে আসেন। ভারত তো বটেই ভারতের বাইরে আফগানিস্তান, তিব্বত ইত্যাদি দেশে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে।

গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পরে বৌদ্ধরা হীনযান ও মহাযান এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল স্বয়ং গৌতম বুদ্ধকে ভগবান সাব্যস্ত করে। রচিত হয় জাতকের গল্প। গৌতম বুদ্ধের মূর্তিতে ছেয়ে যায় গোটা ভারতবর্ষ। আফগানিস্থানের বামিয়ান প্রদেশে পাহাড় খোদাই করে গড়া হয় বিশালাকায় বুদ্ধ মূর্তি। এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ প্রাসঙ্গিক হবে। মুসা (আ:) মাত্র চল্লিশ দিন বনি ইসরাইল থেকে দূরে ছিলেন। তাতেই বনি ইসরাইল একটি বাছুরের স্বর্ণমূর্তি গড়ে পূজা আরম্ভ করে।

আসলে পৃথিবীর সব সত্য ধর্মই একই উৎস থেকে উৎসারিত হয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার প্রত্যাশায় রইলাম।